চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

তারিক সালমনের পর মাহবুব তারেক

শিশুর আঁকা বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে কার্ড করে কিছুদিন আগে বিপদে পড়েছিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা তারিক সালমন। মামলায় হাজতবাস পর্যন্ত করতে হয়েছে ওই সরকারী কর্মকর্তাকে। সেই ঘটনা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় পর্যন্ত গড়িয়েছিল। গণমাধ্যমসহ সামাজিক মাধ্যমগুলোতে চলেছিল আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। একজন দলীয় নেতার অতি উৎসাহী কর্মকাণ্ডের কারণে সরকারের জন্য ওই বিব্রতকর ঘটনা ঘটেছিল। এবার ৫৭ ধারা বা মামলার ঘটনা না হলেও আরেক ধরণের আচরণ লক্ষ করা গেছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে। জাতীয় শোক দিবসে ‘ক্লাস নেওয়ার অপরাধে’ কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের প্রভাষক এবং ভারপ্রাপ্ত সভাপতি মাহবুবুল হক ভূঁইয়া তারেককে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে উদ্দেশ্যমূলকভাবে অভিযোগ এনে হেনস্থা করার অভিযোগ উঠেছে সামাজিক মাধ্যমে। ঘটনার প্রতিবাদে মানববন্ধন হয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। শোক দিবসে শিক্ষক তারেক ক্লাস নিয়েছেন বলে শোক দিবসের অবমাননা হয়েছে দাবি করে তার পদত্যাগ চেয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেছিল কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগ। তার বহিষ্কার দাবি করে উপাচার্যকে স্মারকলিপিও দিয়েছিল তারা। ঘটনার প্রেক্ষাপট জানতে অভিযুক্ত ওই শিক্ষকের ব্যাখ্যা ও গণমাধ্যমের প্রতিবেদন দেখে মনে হয়েছে একটি নির্দোষ কর্মকে অতিরঞ্জিত করে উপস্থাপন করা হয়েছে। বিষয়টিকে আমাদের কাছে অতি উৎসাহী ও উদ্দেশ্যমূলক মনে হয়েছে। ওই শিক্ষক ১৫ আগস্ট সকালে জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যে ফুল প্রদান শেষে যখন ক্যাম্পাসে অবস্থান করছিলেন, তখন কিছু শিক্ষার্থীর অনুরোধে একটি ক্লাসে বসে কিছু বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন বলে জানিয়েছেন। যা সেই অভিযোগের পুরোপুরি বিপরীত। তর্কের খাতিরে যদি ধরে নেওয়া হয়, শিক্ষার্থীরা কিছু বিষয় বুঝতে পারছিল না তাই তিনি তাৎক্ষণিক ক্লাস নিয়েছেন, তাতে শোক দিবসের অবমাননা কেন হবে যার কারণে শাস্তি হিসেবে তাকে এক মাসের বাধ্যতামূলক ছুটি দিতে হবে! বঙ্গবন্ধু সবসময় শিক্ষার্থীদের অন্যরকম করে ভাবতে আহ্বান করে গেছেন। ১৯ অগাস্ট, ১৯৭৩, সোহরাওয়ার্দি উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে প্রদত্ত ভাষণে বঙ্গবন্ধুর বলেছিলেন, ‘বাবারা, একটু লেখাপড়া শিখ। যতই জিন্দাবাদ আর মুর্দাবাদ কর, ঠিকমত লেখাপড়া না শিখলে কোন লাভ নেই। আর লেখাপড়া শিখে যে সময়টুকু থাকে বাপ-মাকে সাহায্য কর। প্যান্ট পরা শিখেছো বলে বাবার সাথে হাল ধরতে লজ্জা করো না। দুনিয়ার দিকে চেয়ে দেখ। কানাডায় দেখলাম ছাত্ররা ছুটির সময় লিফট চালায়। ছুটির সময় দু’ পয়সা উপার্জন করতে চায়। আর আমাদের ছেলেরা বড় আরামে খান, আর তাস নিয়ে ফটাফট খেলতে বসে পড়েন।’ বঙ্গবন্ধু তার ওই ভাষণে পড়ালেখার তাগিদ দিয়ে শিক্ষার্থীদের যে আদর্শ ও জীবন দর্শন দেখিয়ে গেছেন, তা কি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের দাবি ও আচরণের সঙ্গে সাংঘর্ষিক নয়? তাছাড়া, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ছাত্রলীগের চাপের কারণে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাও যথার্থ হয়নি বলে আমাদের মনে হয়েছে। আমাদের আশাবাদ, উচ্চ শিক্ষা অর্জনস্থলে সাধারণ শিক্ষার্থীসহ দলীয় নেতা-কর্মী এবং বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন পরিণত আচরণ করবে।