চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

মেয়র আনিসুল হকের মৃত্যুর পরে যে ভয় পেয়েছিলাম

‘বাড়ি ভেঙে রাস্তার জায়গা উদ্ধার।’, পত্রিকায় প্রকাশিত শিরোনামটি দেখে আশান্বিত হলাম। যাক রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের কাজটি ঠিকই করে যাচ্ছেন। মিরপুরের কাজীপাড়ায় একটি নির্মাণাধীন সাততলা ভবনের দখলে থাকা সাত ফুট জায়গা উদ্ধার করা হয়েছে।

গত দুই বছর আগে থেকে শুরু হওয়া এই কাজটি মাঝখানে থেমে গিয়েছিল। রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় বসতবাড়ির নির্দিষ্ট জায়গা ছেড়ে সরকারি জায়গায় ভবন করা হয়েছে, বহু বাড়ির সীমানা প্রাচীর রাস্তায় চলে এসেছে। তারপরও ভাঙার কোনো নজির দেখা যায়নি। রাজউকের চিঠিকে তোয়াক্কা না করে দোকানপাট তুলে ভাড়া খেয়ে চলেছে অনেক প্রভাবশালীসহ বাড়ির মালিকেরা।

অনেক বাড়ির দখলে রাখা জায়গায় কালি দিয়ে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছিল, যাতে বাড়ির মালিকেরা নিজেরাই ভেঙে ফেলেন। কিন্তু সেই নির্দেশ তো মানেইনি, উপরন্তু অনেকে সেই কালি মুছে ফেলে আরও দৃঢ়ভাবে থাকার পরিকল্পনা করেছে।

ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সদ্য প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক নিজে দাঁড়িয়ে থেকে অনেক বাড়ির মালিককে বলেছেন ভেঙে ফেলার জন্য। একটা সুন্দর নগর গড়ে তোলার স্বপ্ন থেকে তিনি অনেককে বিশেষভাবে অনুরোধও করেছিলেন। তার সেই অনুরোধ রাখেননি অনেকেই। বরং তার মৃত্যুর পর অনেককেই বলতে শোনা গেছে, এবার কে ভাঙতে আসে দেখব। আমাদের ভোট লাগবে নির্বাচন করতে হলে। ক্ষমতায় যেতে হলে।

তার মানে কি দাঁড়ায়? একটি সুন্দর নগরীর স্বপ্ন ভেঙে চুরমার হতে পারে শুধু ভোটের কাছে। জনগণের একটি ভোটের জন্য সরকারসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ কি তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব না পালন করে নিরব থাকবে?

যদি তাই না হয়, তা হলে গত এক বছরে কেন দখলে থাকা জায়গা উদ্ধার হয়নি? জনপ্রতিনিধিরাও, বিশেষ করে ঢাকা সিটির ওয়ার্ড কাউন্সিলররাও চুপ ছিলেন। অথচ তাদের সাথে নিয়েই প্রয়াত মেয়র আনিসুল হক অনেক জায়গা উদ্ধারের জন্য চেষ্টা করেছেন। অনেক কাউন্সিলরকে বলেছিলেন যার যার ওয়ার্ডের অবৈধ জায়গা দখলমুক্ত করার জন্য। কেউ করেননি।

স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের পরোক্ষ মদদে দখল কাজ ঠিকই চলেছে। এবং কাউন্সিলররা নীরব থেকেছেন। অনেকটা ‘ধরি মাছ না ছুঁই পানি’- পক্ষ অবলম্বন করে। রাজধানীর অনেক ওয়ার্ডের শিশুপার্ক দখল হয়ে আছে যুগের পর যুগ ধরে। দেখার কেউ নেই। অনেক খেলার মাঠ দখল করে স্থানীয় রাজনীতিবিদরা নিজেদের দলীয় কার্যালয় গড়ে তুলেছে রেখেছে বছরের পর বছর ধরে। কেউ কিছু বলছে না ভয়ে। পাছে মামলা-হামলার শিকার হতে হয়।

বহু ফুটপাত দখল হয়ে গেছে আবার। সরকার দলীয় অঙ্গসংগঠনের ছত্রছায়ায় এসব ফুটপাতের অস্থায়ী দোকান থেকে মাসে লাখ লাখ টাকা চাঁদা ওঠানো হচ্ছে। সেই চাঁদার ভাগ যাচ্ছে সংশ্লিষ্ট থানায়। যাচ্ছে স্থানীয় প্রভাবশালী নেতার কাছে। সুতরাং কে আর দোকান ভাঙতে আসে! জনগণের চলাচলে অসুবিধা হচ্ছে সেটা দেখার দায়িত্ব যাদের, তারাও চুপ হয়ে আছে। টাকার কাছে সবই যেন মাথানত করে ফেলে।

রাজউকের ভ্রাম্যমাণ আদালত তাদের কাজ অব্যাহত রাখবে, এমন আশা করাটাও বোধহয় বোকামি। কারণ রাজনৈতিকভাবে যখন আজকাল সবকিছু মোকাবিলা করার সংস্কৃতি শুরু হয়ে গেছে তখন এইসব ভ্রাম্যমাণ আদালতকে ঠেকানো কোনো ব্যাপারই না।

তারপরও আমরা আশায় বুক বেঁধে রাখি। আমাদের মতো আমজনতার ওই একটাই করার স্বাধীনতা আছে। কেউ কর বসাতে পারবে না। কেউ জোর করে আশাকে আটকে রাখতে পারবে না। আশা পূরণ হোক বা না হোক সেটা পরের কথা।
রাজউক তাদের কাজটি ঠিকমত যেন করতে পারে, সরকারিভাবে তাদের সমর্থনটা যেন দেওয়া হয়- এ আশাটাই থাকল।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)