চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

তদন্ত করতে গিয়ে আইএস জঙ্গির সঙ্গে এফবিআই সদস্যের প্রেম ও বিয়ে

একেবারে যেন সিনেমার কাহিনী- গোয়েন্দা বাহিনী সদস্য এমন এক অপরাধীর প্রেমে পড়লেন, যার বিরুদ্ধে তিনি তদন্ত করছিলেন! সিনেমার কাহিনী মনে হলেও বাস্তবে এমনই একটি ঘটনা ঘটেছে বলে দাবি করছে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক গণমাধ্যম সিএনএন।

সিএনএন জানিয়েছে, মার্কিন রাষ্ট্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের টপ সিক্রেট ক্লিয়ারেন্স থাকা এক অনুবাদক প্রথমে প্রেম ও পরে ২০১৪ সালে সিরিয়া গিয়ে বিয়ে করেন জঙ্গি সংস্থা আইএসের অন্যতম প্রধান এক সক্রিয় সদস্যকে। অথচ ওই আইএস সদস্যের ব্যাপারে তদন্তের দায়িত্ব ছিল ওই নারী এফবিআই সদস্যের কাঁধে!

ড্যানিয়েলা গ্রিন নামের বিপথগামী এই কর্মী তার গন্তব্য সম্পর্কে এফবিআইকে মিথ্যা কথা বলেছিলেন। একই সঙ্গে নতুন স্বামীকেও সতর্ক করে দিয়েছিলেন তার বিরুদ্ধে চলা তদন্তের ব্যাপারে। যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল আদালতের নথিপত্রের ভিত্তিতে এ তথ্য জানায় সিএনএন।

ড্যানিয়েলা গ্রিনের এ ঘটনা কখনোই জনসমক্ষে আনা হয়নি। কেননা এফবিআইয়ের ভেতরেই এত বড় অনুপ্রবেশ জাতীয় নিরাপত্তার জন্য ব্যাপকভাবে বিপজ্জনক। একই সঙ্গে খোদ এফবিআইয়ের জন্য এটি লজ্জাকর। কেননা এই প্রতিষ্ঠান যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে আইএসের প্রতি সহানুভূতিশীল ব্যক্তিদের খুঁজে বের করাকে এর মিশনে পরিণত করেছে।

আদালতের নথিপত্রে আরও দেখা গেছে, ড্যানিয়েলার সঙ্গে বিচার চলাকালীন বিচার বিভাগীয় আইনজীবীরা পক্ষপাতমূলক আচরণ করেছেন এবং আসল অপরাধের বদলে তুলনামূলক কম গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত করেছেন। এরপর তারা বিচারকের কাছে আবেদন করেছেন যেন সহায়তার বিনিময়ে ড্যানিয়েলার সাজা কমিয়ে দেয়া হয়।

ড্যানিয়েলা গ্রিন

আর এ ব্যাপারে কোনো তথ্য যেন বাইরে প্রকাশ না পায়, সেজন্য আদালতের নির্দেশেই সবকিছু গোপন রাখা হয়।

ড্যানিয়েলা গ্রিনের স্বামী কোনো সাধারণ সন্ত্রাসী নয়। ডেনিস কাসপার্ট ছিল একজন জার্মান র‌্যাপ সঙ্গীতশিল্পী। সঙ্গীত থেকে সে আইএসে যোগ দেয় এবং তারপর থেকেই সে আগ্রাসী জঙ্গিদের অনলাইন নিয়োগকারী হিসেবে কাজ করে আসছে। এ কারণে ডেনিস সংশ্লিষ্ট দুই মহাদেশেই কাউন্টার টেরোরিজম কর্তৃপক্ষের নজরে রয়েছে।

ডেনিস জার্মানিতে ‘ডেসো ডগ’ র‌্যাপনেমে পরিচিত ছিল। আর সিরিয়ায় তার নাম আবু তালহা আল-আলমানি। সে একটি গানে ওসামা বিন লাদেরে প্রশংসা করেছে সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামাকে ইশারায় গলা কাটার হুমকি দিয়েছে। এছাড়াও আইএসের বেশ কিছু প্রোপাগান্ডা ভিডিওতেও অংশ নিয়েছে ডেনিস।

বিয়ের কয়েক সপ্তাহ পরেই ড্যানিয়েলা টের পান, ডেনিসকে বিয়ে করে তিনি কি মারাত্মক ভুল করেছেন। তখন তিনি সিরিয়া থেকে পালিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ফিরে যান। সাথে সাথে তাকে গ্রেফতার করা হয় এবং পুলিশের সঙ্গে সহযোগিতা করতেও রাজি হন তিনি।

ডেনিস কাসপার্ট

আদালতে ড্যানিয়লার বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসের সঙ্গে সম্পৃক্ত বিষয়ে মিথ্যা তথ্য দেয়ার অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পর তাকে দু’বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়। সম্প্রতি ছাড়া পেয়েছেন তিনি।

সিএনএনের প্রতিবেদনের প্রেক্ষিতে এক বিবৃতিতে এফবিআই বলেছে, ড্যানিয়েলার ঘটনার ফলাফল হিসেবে প্রতিষ্ঠানটি নিরাপত্তাজনিত দুর্বলতা চিহ্নিত ও দূর করতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে। তবে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে সে সম্পর্কে কিছু বলেনি এফবিআই। এমনকি গোয়েন্দা কর্তৃপক্ষ আর কিছু বলতেও রাজি হয়নি।