ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়া সাতটি সরকারি কলেজের রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ১,২০০ জনকে আসামি করে হত্যাচেষ্টা এবং পুলিশের কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করেছে পুলিশ! সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বৃহস্পতিবার শিক্ষার্থীদের ওই আন্দোলন কর্মসূচি পালন করার সময় তাদের উপর টিয়ারগ্যাস নিক্ষেপ ও লাঠিপেটাসহ বিভিন্নভাবে পুলিশ আক্রমণ করেছিল। এতে বেশ কয়েকজন শিক্ষার্থী গুরুতর আহত হয়েছে। এর মধ্যে পুলিশের হামলায় সরকারি তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ৩য় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুর রহমানের দু’চোখ মারাত্মকভাবে জখম হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। এতেই ঘটনা শেষ হয়ে যায়নি। বরং পুলিশি নির্যাতনের শিকার শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে আবার মামলাও করেছে! শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে হামলা চালিয়ে আবার তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়েরের এমন ঘটনা কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য নয়। আমরা মনে করি, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো কোনভাবেই অযৌক্তিক নয়। কেননা অধিভুক্ত হওয়া কলেজসমূহের ব্যাপারে নীতিমালা প্রণয়ন এবং প্রকাশ (একাডেমিক সিলেবাস, পরীক্ষা পদ্ধতি, প্রশ্নের ধরণ, প্রশ্নের মানবন্টন), শিক্ষার্থীদের ভাইভা/ব্যবহারিক পরীক্ষা অল্প সময়ের মধ্যে সম্পন্ন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে ফলাফল প্রকাশ করাসহ শিক্ষার মান উন্নয়ন এবং সেশনজট নিরসনে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানানোর অধিকার তাদের রয়েছে। তাই আমরা এসব শিক্ষার্থীর ন্যায্য দাবির সঙ্গে একমত পোষণ করছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলন থেকে হামলা করা কিংবা তারা আক্রান্ত হওয়ার পরও পুলিশের সঙ্গে মারমুখী আচরণ করার কোন খবর পাওয়া যায়নি। তাহলে তাদের নামে কেন মামলা হবে? নিজের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করার দাবি জানাতে এসে কেন একজন শিক্ষার্থীকে তার চোখ হারাতে হবে? কেন মামলার দায় মাথায় নিয়ে পড়ার টেবিলের বদলে শিক্ষার্থীদের ফেরারি হয়ে ঘুরতে হবে? পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের এসব প্রশ্নের জবাব দেয়া জরুরি। এছাড়া এসব কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত করার এত মাস পরেও কেন তাদের স্বাভাবিক শিক্ষাজীবন ব্যাহত করা হলো তার জবাবও পাওয়া দরকার। আশ্চর্যের বিষয় হলো- শিক্ষার্থীরা এই ন্যায্য আন্দোলনে এসে আক্রমণের শিকার হলেও এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কলেজগুলোর শিক্ষকরা কোন বিবৃতি দেননি। এমনকি এখনও শিক্ষার্থীরা তাদের শিক্ষকদেরকে পাশে পাননি বলেও অভিযোগ রয়েছে। শিক্ষার্থীদের শিক্ষাজীবন নির্বিঘ্ন করতে তাহলে কি শিক্ষকদের কোন দায় নেই? ঢাবি অধিভুক্ত কলেজ সমূহের শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক দাবি মেনে নিয়ে তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলা প্রত্যাহার করার জন্য আমরা পুলিশ প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্ট সকলের কাছে আহ্বান জানাচ্ছি।