সিরিয়ান কবি আলী আহমেদ সাইদ এসবের, যিনি আদোনিস নামে বিখ্যাত তার হাত ধরেই উদ্বোধন হচ্ছে ৭ম ঢাকা লিট ফেস্ট ২০১৭। আগামী ১৬ নভেম্বর সকাল ১০টায় বাংলা একাডেমীতে ‘দ্য সংস অব মিহায়ার অব দামাস্কাস’খ্যাত কবি এই আন্তর্জাতিক সাহিত্য আসরের উদ্বোধন করবেন। চলবে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত। সর্বশেষ ২০১৬ সালে ষষ্ঠ আসর উদ্বোধন করেছিলেন ‘দ্য এনিগমা অব এরাইভাল’ খ্যাত সাহিত্যিক ভিএস নাইপল। উৎসবে ২৪ দেশের দুই শতাধিক সাহিত্যিক অংশ নেবেন। প্রথমবারের মতো ব্রিটিশ সাহিত্য জার্নাল ‘গ্রান্টা’র মোড়ক উন্মোচন হবে লিট ফেস্ট প্রাঙ্গণে। ‘ঢাকা লিট ফেস্ট’-এর সব প্রস্তুতি সম্পন্ন হয়েছে। বাংলা একাডেমির শহীদ মুনীর চৌধুরী সভাকক্ষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান উৎসব পরিচালেকরা।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান, ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সায্, আহসান আকবর। আরও উপস্থিত ছিলেন, সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মসিউর রহমান, টাইটেল স্পন্সর বাংলা ট্রিবিউনের সম্পাদক জুলফিকার রাসেল, ঢাকা ট্রিবিউনের সাহিত্য সম্পাদক রিফাত মুনেম, কী স্পন্সর ব্র্যাংক ব্যাংকের হেড অব কমিউনিকেশন জারা মাহবুব প্রমুখ।
বাংলা একাডেমির মহা পরিচালক শামসুজ্জামান খান ঢাকা লিট ফেস্টের আয়োজকদের ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, ‘এ ধরনের বিশাল আয়োজন বাংলাদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বিশ্বের লেখক, অভিনেতা, গবেষকদের পরিচয় করিয়ে দেয়।’ তিনি বলেন, ‘ঢাকা ধীরে ধীরে এই উৎসবের কারণে ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার অব লিটারেচার এক্সপেরিয়েন্স হয়ে উঠছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের গবেষণা, সাহিত্যকর্মের প্রচার প্রসারের ঘাটতি রয়েছে, এ ধরনের আয়োজন সেই ঘাটতি পূরণ হতে পারে।’
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মসিউর রহমান বলেন, ‘ঢাকা লিট ফেস্ট বাংলদেশের সংস্কৃতির সঙ্গে বৈশ্বিক সংস্কৃতির সঙ্গে একটি যোগসূত্র তৈরি করেছে। তিনি বলেন, অপরাধমুক্ত দেশ গড়তে সংস্কৃতির প্রসারের কোনও বিকল্প নেই। তিনি এই আয়োজনের জন্য বাংলা একাডেমি এবং আয়োজকদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।’
ঢাকা লিট ফেস্টের পরিচালক সাদাফ সাজ বলেন, এবার দেশের বাইরে থেকে ৭৫ জন লেখক, গবেষক এবং চিন্তাবিদ অংশ নিচ্ছেন। এবং বাংলাদেশ থেকে অংশ নিচ্ছেন দেড় শতাধিক লেখক, গবেষক, শিক্ষক, পারফর্মার। সবার জন্য উন্মুক্ত এই আয়োজনে তিনি সবাইকে আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, আমাদের বরাবরের প্রচেষ্টা ছিল দেশীয় ঐতিহ্যকে তুলে ধরা। তারই অংশ হিসেবে এবার থাকছে মেয়েদের লাঠি খেলা, কবি গান, মনিপুরী ঢোলসহ নানা আয়োজন। তিনি আরও বলেন, লিট ফেস্ট যেমন একদিকে বিশ্ব সাহিত্যের সঙ্গে বাংলাদেশকে পরিচয় করে দেওয়া তেমনি নিজেদের ঐতিহ্যকে বিশ্বের সামনে তুলে ধরা।’ তিনি আরও বলেন, ‘এবারের লিট ফেস্টে আলোচনা,পারফরম্যান্সসহ নানা আয়োজনে সেশন থাকছে ৯০টির বেশি সেশন।’ এছাড়া উৎসবে শিশুদের জন্য নানা সেশন রয়েছে বলে তিনি জানান।
ঢাকা লিট ফেস্টের আরেক পরিচালক আহসান আকবর বলেন, ‘ বিদেশি অতিথিদের প্রায় সবারই বাংলাদেশে আসার আগ্রহ রয়েছে। কিন্তু উপলক্ষ ছিল না। ঢাকা লিট ফেস্টকে তারা একটি সুযোগ হিসেবে গ্রহণ করেছেন। তারা এখানে বাংলাদেশের সাহিত্যিক ও লেখকদের সঙ্গে নিজেদের মনের কথা বলবেন। সে সময় তিনি উল্লেখ করেন, উইলিয়াম ডালরিম্পল আসছেন কোহিনূর নিয়ে একটি সেশন করতে। অস্কার বিজয়ী অভিনেত্রী টিলডা সুইন্টোন আসছেন লেখক বন্ধু জন বার্জারকে স্মরণ করতে। তিনি আরও জানান, বিশ্বখ্যাত সাহিত্য ম্যাগাজিন গ্রান্টার সম্পাদক আসছেন তাদের পত্রিকার একটি মোড়ক উন্মোচন করতে। তিনি আরও বলেন, পদ্মশ্রী পুরস্কার প্রাপ্ত নবনীতা দেবসেন আসছেন তার সাহিত্য জীবন নিয়ে আলোচনা করতে। উপন্যাসিক ডেভিড হেয়ার, বুকার জয়ী বেন ওক্রিসহ অসংখ্য ব্যক্তি আসছেন বাংলাদেশের সঙ্গে নিজেদের সাহিত্যকর্ম তুলে ধরতে।
চ্যানেল আই অনলাইন এর এক প্রশ্নের জবাবে লিট ফেস্ট পরিচালকরা জানান, কথাসাহিত্যক ইমদাদুল হক মিলনের দুটি উপন্যাসের ইংরেজী অনুবাদ প্রকাশ করবেন তারা।
বিদেশি অতিথিদের মধ্যে এবার অংশ নেবেন সিরিয়ার কবি আদোনিস, নাইজেরিয়ার সাহিত্যিক বেন ওক্রি, অভিনেত্রী টিল্ডা সুইন্টন, মার্কিন সাহিত্যিক লিওনেল শ্রিভার, পদ্মশ্রী পুরস্কারপ্রাপ্ত ভারতীয় কথাসাহিত্যিক নবনীতা দেব সেন, কথাসাহিত্যিক উইলিয়াম ড্যালরিম্পেল, লেখক এসথার ফ্রয়েড প্রমুখ। বাংলাদেশ থেকে সৈয়দ মনজুরুল ইসলাম, মঈনুল আহসান সাবের, আলী যাকের, সেলিনা হোসেন, শামসুজ্জামান খান, আনোয়ারা সৈয়দ হক, আসাদ চৌধুরী, আনিসুল হক, সলিমুল্লাহ খান, কায়সার হক, খাদেমুল ইসলামসহ দেড় শতাধিক সাহিত্য ব্যক্তিত্ব থাকবেন।
সম্ভাব্য সেশনের আনুষ্ঠানিক তালিকা ইতিমধ্যেই লিট ফেস্টের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়েছে। দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশ ও এসব দেশের বংশোদ্ভূত লেখকদের ইংরেজি ভাষায় লেখা বা অনুবাদ করা সাহিত্যের সম্মানজনক ডিএসসি পুরস্কার ঘোষণা দেওয়া হবে লিট ফেস্ট প্রাঙ্গণে। বাংলাদেশে সাহিত্য জগতে স্বনামধন্য ‘জেমকন সাহিত্য পুরস্কার’ লিট ফেস্টের প্রথম দিনে ঘোষণা করা হবে।
সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের পৃষ্ঠপোষকতায় এই আয়োজন পরিচালনা করছেন কথাসাহিত্যিক এবং বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউনের প্রকাশক কাজী আনিস আহমেদ, কবি সাদাফ সায্ সিদ্দিকী ও কবি আহসান আকবর। ঢাকা লিট ফেস্টের টাইটেল স্পন্সর হিসেবে থাকছে বাংলা ট্রিবিউন ও ঢাকা ট্রিবিউন, কি স্পন্সর হিসেবে থাকছে ব্র্যাক। প্লাটিনাম স্পন্সর হিসেবে থাকছে এনার্জিস, গোল্ড স্পন্সর মীনা বাজার, প্রিমিয়ার পার্টনার ইন্ডিয়ান হাই কমিশন, স্ট্রাটেজিক পার্টনার ব্রিটিশ কাউন্সিল এবং পুরো আয়োজনের দায়িত্বে রয়েছে যাত্রিক।