বর্তমান কঠিন সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আন্দোলনের সূচনা হতে হবে বলেছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটে ২৫ জন জাতীয়তাবাদী রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটস’ প্রতিনিধি নির্বাচন-২০১৭ এর প্যানেল পরিচিতি উপলক্ষে সংবাদ সম্মেলনে প্রার্থীদের উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, ‘অত্যন্ত কঠিন সময়ে আপনারা এ নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন। এটি দেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে কলঙ্কজনক অধ্যায়। দেশে গণতন্ত্র নেই, মানুষের অধিকার নেই, স্বাধীনতা নেই, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা নেই। সবচেয়ে বড় সমস্যা বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষার পরিবেশ, সকলের সহাবস্থান নেই।’
তিনি বলেন, ১৯৭১ সালে আমরা যে চেতনার জন্য মুক্তিযুদ্ধ করেছিলাম সে চেতনা আজ ধ্বংস হয়ে গেছে। যে বিশ্ববিদ্যালয়কে মুক্তচিন্তার কেন্দ্র মনে করি, যে বিশ্ববিদ্যালয়কে সকল গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সূতিকাগার হিসেবে আমরা গর্ববোধ করি। সে বিশ্ববিদ্যালয় এখন একদলীয় চিন্তা ভাবনার জায়গা হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমাদের স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এসেও এরকম পরিস্থিতির সম্মুখিন হতে হচ্ছে। কলুষিত একটি অবস্থায় আপনারা নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন।
ফখরুল বলেন, সেজন্য আমি বলছি সবচেয়ে কলঙ্কময় সময়ে বাস করছি। আমরা জানি না এ নির্বাচনের ফলাফল কি হবে। এরপরও আপনারা যে নির্বাচনে অংশ নিবেন। ফলাফল যাইহোক, আপনারা গণতন্ত্রকামি মানুষকে, মুক্তচিন্তার মানুষকে অনুপ্রাণিত করে যাবেন। আমাদের এ অধিকার আদায়ের সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাবেন।’
বিএনপি মহাসচিব বলেন, যখন আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বর্তমান চেহারা দেখি খুব দুঃখ হয়, যখন আমাদের স্বাধীনতা বিপন্ন হয় তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোন প্রতিবাদ হয় না। যখন দেখি আমাদের ছাত্রছাত্রীরা নিহত হয়, অন্যায়ের কাছে পরাজিত হয় তখন তাদের পক্ষে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোন প্রতিবাদ হয় না।’
‘ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আবারও আন্দোলনের সূচনা হতে হবে বলে জোর দিয়ে ফখরুল বলেন, ‘আমরা আশা করি ভাষা আন্দোলন, ৬৯’র গণ আন্দোলন, ৭১ এর মুক্তিযুদ্ধের মতো আবার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় নেতৃত্ব দিবে। আমরা চাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয় আবারও অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াবে, আবার আন্দোলনের সূতিকাগার হবে।’
এসময় তিনি নিম্ন আদালতে সরকারি হস্তক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেন। আর উচ্চ আদালতকে এই পরিস্থিতি থেকে আর কোনভাবে মুক্ত করা গেলো না বলে আক্ষেপ করে বলেন, ‘এই চেষ্টা করতে গিয়ে প্রধান বিচারপতিকেও পদত্যাগ করতে হয়েছে।’
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েট’স প্রতিনিধি নির্বাচন (২০১৭) কে কেন্দ্র করে জাতীয়তাবাদী পরিষদ-এর প্যানেল পরিচিতি অনুষ্ঠান উপলক্ষে এ সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন, নির্বাচন পরিচালনা কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাদা দলের আহ্বায়ক প্রফেসর আক্তার আহমেদ খানের পরিচালনায় এবং বিএনপি’র সহ সাংগঠনিক সম্পাদক শহীদুল ইসলাম বাবুলের সঞ্চালনায় উপস্থিত ছিলেন নির্বাচন পরিচালনা কমিটির আহ্বায়ক ও বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আব্দুল্লাহ আল নোমান, ডক্টরস এসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ড্যাব) সভাপতি প্রফেসর এ কে এম আজিজুল হক, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর মামুন আহমেদ, প্রফেসর ওবায়দুল ইসলাম, সাংবাদিক মাহফুজ উল্লাহ প্রমুখ।
প্রফেসর আক্তার আহমেদ খান লিখিত বক্তব্যে বলেন, আগামী ৬ ও ১৩ জানুয়ারি ২০১৮ ঢাকার বাইরের কেন্দ্রসমূহে এবং ২০ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রসমূহে দেশের দ্বিতীয় পার্লামেন্ট হিসেবে পরিচিত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সিনেটের ২৫ জন রেজিস্টার্ড গ্র্যাজুয়েটস প্রতিনিধি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব, ধর্মীয় মূল্যেবোধ ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি এবং উদারনৈতিক গণতান্ত্রিক চেতনার প্রতীক জাতীয়তাবাদী পরিষদ মনোনীত প্রার্থীগণ অংশগ্রহণ করছে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গ্র্যাজুয়েট প্রতিনিধি নির্বাচনে সাদা দলের ২৫ জন প্রতিনিধির মধ্যে ৭ জন জামায়াত সমর্থিত প্রার্থীও রয়েছে।