রাজধানীতে মশাবাহিত চিকুনগুনিয়া ভাইরাসের ব্যাপক সংক্রমণে মশার বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করা ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক এখন লন্ডনে চিকিৎসাধীন। কর্মরত অবস্থায় তিনি উত্তর সিটি কর্পোরেশনের সবাইকে কর্মব্যস্ত রাখলেও এখন তার অনুপস্থিতিতে অন্যান্য নিয়মিত কাজগুলোর মতো মশক নিধনেও স্থবিরতা দেখা যাচ্ছে। মিরপুরবাসীদের অভিযোগ, মাঝে মাঝে মশা মারার ওষুধ দেয়া হলেও তা প্রয়োজনের তুলনায় যথেষ্ট নয়। বিশেষ করে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক অসুস্থ হয়ে বিদেশে থাকায় মশক নিধনের কর্মসূচিতেও দেখা যাচ্ছে ঢিলেঢালা ভাব।
শ্যাওড়াপাড়ার বাসিন্দা মো. রইস বলেন,‘ প্রায় এক মাস হলো মশা নিধনের জন্য সিটি কর্পোরেশনের কর্মীদের দেখিনি। কোরবানির ঈদের আগে এলাকায় মশার ওষুধ স্প্রে করতে এসেছিলো সিটি কর্পোরেশনের লোকেরা।’
নগরীর শেওড়া পাড়ায় ক্রমশ সরু হয়ে আসা খালটি এখন বড়সড় ড্রেন। এই ড্রেনও আবর্জনা অপসারণের অভাবে বৃষ্টি হলেই উপচে পড়ে ভাসিয়ে দিচ্ছে সমগ্র এলাকা। আর গরম বাড়লেই গুমোট দুর্গন্ধে ছড়াচ্ছে। এরকম পরিস্থিতিতে মশা তো থাকবেই বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন এই এলাকার বাসিন্দা সালেহা খাতুন।
তিনি বলেন,‘এরকম ময়লাভরা ড্রেনের আশেপাশে সন্ধ্যা হলেও মশার ঝাঁক বাড়ি-ঘরে ঢুকে পড়ছে। সিটি কর্পোরেশনের লোকজনকে দেখেছি ঈদের ৩-৪ দিন আগে ওষুধ ছিটাতে এসেছিলো। মাঝে মাঝে তারা আসলেও সব জায়গায় ঠিকমতো মশার ওষুধ দেয় না।’
অথচ মশা নিধনের জন্য দু সপ্তাহ পরপর সকালে ও বিকেলে সিটি কর্পোরেশনের মশার ওষুধ ছিটানোর নিয়ম। এ বছর এ খাতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে বাজেট ধরা হয়েছে ২৬ কোটি টাকা। যা গেলো বছরের চেয়ে প্রায় দ্বিগুণ। কাজের গতি বাড়াতে সিটি কর্পোরেশন থেকে মশা নিধনের জন্য সম্প্রতি ওই কাজের দায়িত্ব দেয়া হয় ওয়ার্ড কাউন্সিলরদের। তাদের তত্ত্বাবধানে দেয়া হয়েছে মশা নিধনের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম।
তবে অভিযোগ অস্বীকার করে ওয়ার্ড কাউন্সিলররা বলছেন, মেয়রের দেখানো পথেই কাজ করছেন তারা।
ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মোঃ হুমায়ুন রশীদ বলেন,‘ যখন দেখলাম অনিয়ম হচ্ছে তখন মেয়র থাকা অবস্থায়ই আমরা নিজেরাই একটি পদক্ষেপ নিলাম যাতে কাউন্সিলের কাছে মশক নিধনের ওষুধ চলে আসে। আমাদের কাছে মজুদ ওষুধ আমরা নিজেদের এলাকাকে ছোট ছোট এলাকায় ভাগ করে নিয়মিত স্প্রে করছি।’
এলাকাবাসীর অভিযোগ অস্বীকার করে তিনি বলেন,‘ হয়তো মশার ওষুধ দিতে যখন আমাদের কর্মীরা গিয়েছিলো তখন তারা ছিলো না। কোথায় ওষুধ স্প্রে করা হয় তার তালিকা রেজিস্ট্রি খাতায় আছে। এরপরও যদি কেউ নিজের এলাকায় ওষুধ স্প্রে করাতে চায় তাহলে আমাদের জানালেই আমাদের কর্মীরা পৌঁছে যাবে।’
গত ২৯ জুলাই ব্যক্তিগত সফরে সপরিবার লন্ডন যান আনিসুল হক। সেখানে চিকিৎসা চলার মধ্যেই ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত হলে তাকে লন্ডনের একটি হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি করা হয়।
মেয়রের ব্যক্তিগত সচিব মিজানুর রহমান জানান, মেয়রের এই অসুস্থতার বিষয়টি বাংলাদেশে ধরা না পড়লেও তিনি প্রায় দুই মাস যাবত একাধিক শারীরিক সমস্যায় ভুগছিলেন।