চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘ঢাকা অ্যাটাকের জিসানের উপর মানুষ যেনো প্রেমে না পড়ে’

বাচ্চাদের স্কুলের গাড়িতে মারাত্মক বোমা হামলা দিয়ে শুরু, এরপর দোয়েল চত্বর উড়িয়ে দেয়া, হাসপাতালে বোমা হামলার ব্যবস্থা আর পতাকা দিবসে হাজারো শিশুর প্রাণনাশের পরিকল্পনার একজনই মাস্টারমাইন্ড- হাসনাত করিম জিসান। ‘ঢাকা অ্যাটাক’ যারা এর মধ্যেই দেখে ফেলেছেন তাঁরা জানেন এই চরিত্রের নিষ্ঠুরতার পরিমাণ কত। প্রেক্ষাগৃহে বসে শিউরে উঠেছেন দর্শক জিসানের নৃশংস আচরণে। আর এই জিসান চরিত্রের রূপদানকারী তাসকিন রহমানের প্রশংসা চলছে সবার মুখে মুখে।

সাধারণত একটি চলচ্চিত্রের মূল ফোকাস পড়ে ইতিবাচক চরিত্রগুলোর উপর। কিন্তু তাসকিন সেই ধারা ভেঙে দিয়ে সবার নজর কেড়েছেন খলনায়ক হয়ে। ইতিমধ্যে দর্শক যাকে হুমায়ুন ফরিদীর সঙ্গে তুলনা করতে শুরু করেছেন।

ঢাকা অ্যাটাক চলচ্চিত্রে তাসকিন রহমান
‘ঢাকা অ্যাটাক’ চলচ্চিত্রে তাসকিন রহমান

কে এই তাসকিন? নীলচে সাদা চোখের এই খলনায়ককে দেখে অনেকেই প্রথমে ভেবেছিলেন তিনি বিদেশী কোন অভিনেতা। স্পষ্ট বাংলা উচ্চারণে তাই অনেকেই বিস্মিত হয়েছেন। বিস্ময়ের আরও কারণ পরিচালকের পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী ছবির প্রচারণা বা ট্রেলার কোন কিছুতেই ছিল না তাসকিনের উপস্থিতি। হঠাৎ করেই পর্দায় এমন দারুণভাবে খলনায়কের চরিত্র ফুটিয়ে তোলা নতুন অভিনেতাকে দেখে তাই সবার মনে একই প্রশ্ন ছিল- ছেলেটি কে?

২০০২ সাল থেকে অস্ট্রেলিয়া প্রবাসী তাসকিন রহমান পারিবারিকভাবে শৈশব থেকেই সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের সঙ্গে যুক্ত। বাবা সুরকার ও সংগীতপরিচালক আনিসুর রহমান তনু আর বড় ভাই নির্মাতা তানিম রহমান অংশু। অভিনয়ের পাশাপাশি গান এবং চিত্রশিল্পেও আছে তাসকিনের দক্ষতা। ১৯৯০ সালে বিটিভির ‘শীতের পাখি’ নামে একটি নাটকে শিশুশিল্পী হিসেবে অভিনয় করেন, যেখানে ছিলেন দেশের প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদীও। অস্ট্রেলিয়াতে পড়াশোনা শেষ করে এই মুহূর্তে তাসকিন কর্মরত আছেন অস্ট্রেলিয়ার সরকারী একটি প্রতিষ্ঠানে।

২০০৭ সালে আরেফিন শুভ’র সাথে চক্র নামে একটি নাটকে কাজ করেন তাসকিন। অংশ নিয়েছেন বেশ কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রেও। দেশের বাইরে থাকায় অভিনয়ে বেশ বড় বিরতি পড়লেও আবারও ফিরেছেন পছন্দের কাজে। ২০১৫ সালে বড় ভাই তানিম রহমান অংশুর পরিচালিত ‘আদি’ চলচ্চিত্রে অভিনয়ের সময় ‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর প্রস্তাব পান।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ এ তাসকিনের সাবলীল অভিনয়ের প্রশংসা করছেন সব দর্শক। জিসান চরিত্রের ভয়াবহতা ফুটিয়ে তোলার কঠিন কাজটি তাসকিন উতরে গেছেন অনায়াসেই । জিসানের মনের হিংস্রতা, মানসিকভাবে বিপর্যস্ততা এবং নির্মমতার চরম প্রতিমূর্তি যেন ফুটে উঠেছে জিসানরূপী তাসকিনের চোখে। চরিত্রের গভীরে প্রবেশ করে দর্শকের মনে ভয় ধরিয়ে দেয়ার মত ক্ষমতা একজন শক্তিমান অভিনেতা ছাড়া সম্ভব নয়। চলচ্চিত্রের শেষাংশে তাসকিনের মৃত্যুতে দর্শকের কষ্ট পাওয়াটাও তাঁর অভিনয় নৈপুণ্যেরই সাফল্য বলা যায়।

‘ঢাকা অ্যাটাক’ এর আলোচনায় ঢালিউডের জনপ্রিয় নায়ক আরিফিন শুভ, কিংবা চলচ্চিত্রের হ্যান্ডসাম সোয়াত কর্মী এবিএম সুমনের সাথে সাথে বারবার চলে আসছে খলনায়কের নামও। তাসকিনের সাফল্যে খুশি তাঁর সহকর্মীরাও। আরিফিন শুভ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জানিয়েছেন তিনি নিজেই তাসকিনের বড় ভক্ত। তাঁর কাজে দারুণ উচ্ছসিত সহশিল্পী এবিএম সুমন আর শতাব্দী ওয়াদুদও।

তাসকিন রহমান
তাসকিন রহমান

তবে, চ্যানেল আই অনলাইনের ফেসবুক লাইভে এসে পরিচালক দীপঙ্কর দীপন কিন্তু দর্শককে তাসকিনের প্রেমে পড়তে একদম মানা করে দিয়েছেন! ঘাবড়াবেন না, তাসকিনে উপর পরিচালকের কোন ক্ষোভ নেই। তিনি আসলে তাসকিনের করা চরিত্র ‘জিসান’ এর প্রেমে পড়তে মানা করছেন। কারণ জিসান কোন সুস্থ স্বাভাবিক মানসিকতার মানুষ নন। তাঁর মনে নিষ্ঠুরতা ছাড়া আর কিছু নেই। কিন্তু তাসকিন ‘জিসান’র চরিত্রে এতটাই ডুবে গেছেন আর এমনভাবেই জিসানকে পর্দায় এনেছে যে দর্শক খলনায়কেরও প্রেমে পড়ে যাচ্ছেন। পরিচালকের ভয়টাও তাই এখানেই।

অনেকেই জিসানের অভিনয়, অ্যাকশনকে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের বলে মন্তব্য করেছেন। মুক্তির অপেক্ষায় থাকা মৃত্যুপুরী, আদি কিংবা অপারেশন অগ্নিপথ- এগুলোর কোনটিতেই অবশ্য খলনায়ক নন তিনি। যে কোন চরিত্রে কাজ করতে আগ্রহী তাসকিন। ভালো কোন কাজ পেলে অনেক বেশি সময় নিয়ে দেশে আসার পরিকল্পনাও আছে তাঁর।

তাসকিন রহমান

‘ঢাকা অ্যাটাক’ মুক্তির সময় দেশে থাকতে পারেননি তাসকিন। তা নিয়ে মন খারাপ থাকলেও দর্শকদের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখার চেষ্টা করেছেন সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে। দেশের প্রেক্ষাগৃহে থাকতে না পারলেও অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডে মুক্তির পর প্রেক্ষাগৃহে গিয়ে নিজের কাজ দেখেছেন তাসকিন। উপভোগ করছেন ‘ঢাকা অ্যাটাক’ নিয়ে অস্ট্রেলিয়ায় প্রবাসী দর্শকদের উন্মাদনা।

বাংলা চলচ্চিত্রের অভিনেতা সংকটের দিনে তাসকিনের মতো অভিনয়শিল্পীর উপস্থিতি দর্শকের মনে আশার আলো জাগায়। তাসকিনকে নিয়ে দর্শকদের প্রত্যাশার পারদ অনেক উপরে উঠে গেছে মুক্তি পাওয়া প্রথম চলচ্চিত্র দিয়েই। দেখার বিষয় সামনে মুক্তির অপেক্ষায় থাকা তিন চলচ্চিত্র দর্শক ও সমালোচকদের কাছে কতটা সফল করে তোলে নীল চোখের সম্ভাবনাময়ী এই তরুণ অভিনেতাকে।

ছবি- ইন্টারনেট থেকে সংগৃহিত