চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

২২ ডিসেম্বর প্রেক্ষাগৃহে আসছে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’

বৈজ্ঞানিক কল্পকাহিনীর অন্যতম জনপ্রিয় লেখক ও শিক্ষাবিদ মুহম্মদ জাফর ইকবালের লেখা দীপু নাম্বার টু এবং আমার বন্ধু রাশেদ-এর পর এবার জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার বিজয়ী নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম নিয়ে আসছেন ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ নামের আরো একটি চলচ্চিত্র। ইমপ্রেস টেলিফিল্মের প্রযোজনায় ও লাভেলো আইসক্রিমের নিবেদনে এই চলচ্চিত্রটি আসছে ডিসেম্বরের ২২ তারিখে দেশের প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেতে চলেছে বলে জানালেন নির্মাতা নিজেই।

শনিবার দুপুর সাড়ে বারোটায় চ্যানেল আই ভবনে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্র নিয়ে চ্যানেল আইয়ের ‘বিশেষ তারকা কথন’-এ আসেন নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। সেখানেই ছবিটি নিয়ে সমস্ত পরিকল্পনা এবং মুক্তির বিষয়টি নিশ্চিত করেন নির্মাতা মোরশেদুল ইসলাম। এসময় চলচ্চিত্রটির নির্বাহী প্রযোজক মুনিরা মোরশেদ মুন্নীর উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের বিশেষ তারকা কথন অনুষ্ঠানে কথা বলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র লেখক মুহম্মদ জাফর ইকবাল, কথা সাহিত্যিক ও কিশোর আলো’র সম্পাদক আনিসুল হক, অভিনেত্রী সুবর্ণা মুস্তাফা, আল মনসুর, লাভেলো কোম্পানির ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হক এবং চলচ্চিত্রটিতে নাম ভূমিকায় অভিনয় করা জাহিন নাওয়ার হক। এছাড়া উপস্থিত ছিলেন ছবিতে আঁখির বন্ধুর চরিত্রে অভিনয় করা সকলেই।

‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্রটির শুটিং আগেই সম্পন্ন হয়েছে। এবার ছবিটি নিয়ে প্রচারণায় নামার পালা। আর সে কারণেই পুরো টিম নিয়ে প্রথমেই মোরশেদুল ইসলাম এলেন চ্যানেল আই ভবনে। তারকা কথন অনুষ্ঠানে অংশ নেয়ার পাশাপাশি তিনি কথা বললেন উপস্থিত বিভিন্ন গণমাধ্যম কর্মীদের সঙ্গেও।

ইতিমধ্যে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্রটি সেন্সর বোর্ডে জমা পড়েছে জানিয়ে মোরশেদুল ইসলাম বলেন, ছবিটি সেন্সর বোর্ডে জমা দিয়েছি। আশা করছি সপ্তাহ খানেকের মধ্যে আমরা ছবিটি হাতে পেয়ে যাব। ছবিটি আগামি ২২ ডিসেম্বর সারা দেশের প্রেক্ষাগৃহগুলোতে মুক্তি দিতে যাচ্ছি।

ছবিটি নিয়ে এবার বেশী প্রচারণা করতেই একটু আগে থেকেই এমন আয়োজন করলেন জানিয়ে নির্মাতা আরো বলেন, আঁখি ও তার বন্ধুরা নিয়ে এবার আমরা বেশী প্রচারণা করতে চাই। আর এ কারণেই একটু আগেভাগেই এমন আয়োজন। তাছাড়া আরেকটি কারণ হল, নভেম্বর থেকে বাচ্চাদের পরীক্ষা শুরু হয়ে যাবে স্কুলগুলোতে। নভেম্বরের প্রথম দিন থেকেই ঢাকা শহরের বেশকিছু প্রেক্ষাগৃহে আমরা ছবিটির প্রচারণা করবো। ইতিমধ্যে সারা দেশের এক হাজার স্কুলে কিন্তু আমরা ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র সাত মিনিটের একটি প্রমো পাঠিয়ে দিয়েছি। যেগুলো স্কুলে দেখানো হচ্ছে। আর ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ থেকে টানা জোরেসরে আমরা প্রচারণা শুরু করবো।

এরপর ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ ছবিটি প্রযোজনা করার জন্য ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে ধন্যবাদ জানিয়ে মোরশেদুল ইসলাম আরো বলেন, এই ছবিটি প্রযোজনা করার জন্য আমি কৃতজ্ঞতা জানাতে চাই ইমপ্রেস টেলিফিল্মকে। বিশেষ করে সাগর ভাইকে। যিনি সব সময় ভালো কাজে এগিয়ে আসেন। শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে সাগর ভাই অগ্রদূতের ভূমিকা পালন করছেন। উনার এবং ইমপ্রেস টেলিফিল্মের কারণেই এমন ভালো কাজের ধারা আরো বেগবান হচ্ছে। তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস অবলম্বনে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ নির্মাণ করেছেন মোরশেদুল ইসলাম। তাকেও বিশেষ ধন্যবাদ জানান নির্মাতা। শিশুতোষ চলচ্চিত্র নির্মাণে এগিয়ে আসতে চলচ্চিত্রটির টাইটেল স্পন্সর লাভেলো আইসক্রিমের ব্যবস্থাপনা পরিচালক একরামুল হককেও ধন্যবাদ জানান তিনি।

এরপর ছবিটি নিয়ে কথা বলেন ইমপ্রেস টেলিফিল্ম ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। ছবিটি নিয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করে তিনি বলেন, ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র সঙ্গে যুক্ত হতে প্রথমে আমি রাজি হয়নি। কিন্তু পরে যখন মোরশেদ বললো এটা ছোটদের ছবি, জাফর ইকবাল স্যারের লেখা। পরে সবকিছু মিলিয়ে রাজি হই। এই ছবি নিয়ে আমরা সবাই আশাবাদী। ছোটরা বড়রা সবাই মিলে ছবিটি দেখবেন বলেই আমাদের বিশ্বাস।

মুহম্মদ জাফর ইকবালের উপন্যাস থেকে এর আগেও মোরশেদুল ইসলাম দীপু নাম্বার-টু এবং আমার বন্ধু রাশেদ ছবি দুটি করেছিলেন। দুটি ছবিই দর্শকের প্রশংসা কুড়িয়ে নেয়। তাই ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র প্রমোশনাল অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন স্বয়ং জাফর ইকবাল। তিনি মোরশেদুল ইসলামকে ধন্যবাদ জানিয়ে বলেন, আমি মাস্টার মানুষ। প্রথমেই যখন আঁখি ও তার বন্ধুদের সঙ্গে আমার সাক্ষাৎ হয় তখন আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম, তোমাদের পড়ালেখার ক্ষতি হয়নিতো? তারা বললো, না। শুটিং চলাকালেও পড়ালেখার কোনো ক্ষতি হয়নি। আর এরজন্য আমি নির্মাতা মোরশেদুল ইসলামের কাছে কৃতজ্ঞ যে কারো পড়ালেখার ক্ষতি না করে একটি ছবি তৈরি করতে পেরেছে।

ছবিতে গুরুত্বপূর্ণ চরিত্রে অভিনয় করেছেন সুবর্ণা মুস্তাফা। ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ চলচ্চিত্রটি নিয়ে সবার মতো তিনিও বেশ আশাবাদী। তবে একইসঙ্গে শিশুদের নিয়ে নিয়মিত কাজ হওয়ায় কিছুটা হতাশা ছিল তার কণ্ঠে। ছবিটি নিয়ে তিনি বলেন, সাহিত্য, সিনেমায়, গানে সব জায়গায় আমাদের বাচ্চাকাচ্চারা নেগলেক্টেড, তাদের জন্য কিছু হয় না। এখানে তিনজন লোক বসে আছেন। ড.জাফর ইকবাল, ফরিদুর রেজা সাগর এবং মোরশেদুল ইসলাম। এই তিনজনের দুইজন তাদের লেখনীতে এবং একজন চলচ্চিত্রে নিয়মিত বাচ্চাদের কাছে টেনেছেন। এইজন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা।

‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’ ছবিতে কেন্দ্রীয় চরিত্রে অভিনয় করেন জাহিন নাওয়ার হক। ছবিটি নিয়ে তিনি বলেন, আমি ছবিতে অন্ধ মেয়ের চরিত্রে অভিনয় করেছি। আসলে চরিত্রটি এতো সহজ নয়। অনেক ওয়ার্কশপ করে, ছয়মাস রিহার্সেল করে মোরশেদ স্যার আমাদের তৈরি করেছেন। এতো কষ্ট করার পর চরিত্রটি করতে পেরেছি। কেমন হয়েছে সেটা হলে গিয়ে দর্শক বিচার করবে।

বাংলাদেশে শিশুতোষ চলচ্চিত্র বলতে গেলে হয়ই না। সেই আক্ষেপও ওঠে এলো ছোট্ট মেয়েটির কণ্ঠে। সবার উদ্দেশ্যে তিনি বলেন, আমার একটা রিকুয়েস্ট আছে। আমাদের নিয়ে বেশী একটা কাজ করা হয় না। আমি চাই, সবাই মিলে আমাদের ছবিটা দেখতে হলে আসবেন। আমাদেরকে আরো ইনস্পায়ার্ড করবেন যেনো আমরা সুন্দর সুন্দর কাজ করতে পারি।

অনুষ্ঠানে সবার বক্তব্যের মাঝখানে ‘আঁখি ও তার বন্ধুরা’র কয়েকটি ডিজিটাল পোস্টারও উম্মোচন করা হয়। সবশেষে ছবিটির প্রমোশনাল টিজার দেখানোর মধ্য দিয়ে শেষ হয় অনুষ্ঠান।

ছবি: তানভীর আশিক