২-০ তে পিছিয়ে থেকে এক ম্যাচ বাকি থাকতেই সাউথ আফ্রিকার মাটিতে টেস্ট সিরিজ হেরেছে ভারত। কিছুদিন আগেই ভারত সফরে এই কোহলিদের কাছে আবার টেস্ট সিরিজ হারে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকা ও ইংল্যান্ড। দেড় দশক হয় ইংল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজ জিততে পারেনি অস্ট্রেলিয়া। আবার অজিদের মাটিতে সেই ইংল্যান্ড নাকাল। সদ্য সমাপ্ত অ্যাশেজে ৪-০তে হেরেছে দলটি। এ যেন আগে থেকে লেখা বিরক্তিকর চিত্রনাট্য। যেখানে সমশক্তির লড়াইয়ে স্বাগতিক দলের জয় হবেই!
এটা ঠিক যে, ভারতে সিরিজ হারলেও প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেট খেলেছে অস্ট্রেলিয়া। ভারতও একইভাবে প্রোটিয়াদের বিরুদ্ধে হারা সিরিজে প্রতিদ্বন্দ্বীতা করেছে। সাউথ আফ্রিকাকে ১৩০ রানে অলআউট করেছে। কিন্তু ২০৮ রানের টার্গেট তাড়া করতেও ব্যর্থ হয়েছেন কোহলিারা। তবে প্রতিদ্বন্দ্বীতা হওয়াটাই খেলার জন্য যথেষ্ট নয়, যেখানে ‘গতানুগতিকভাবে বিজয়ী দল’ সব কিছু নিয়ে যায়।
তাহলে টেস্ট ক্রিকেট কি প্রত্যাশিত এবং বিরক্তিকর হয়ে উঠছে ? এখন এটা এমন সত্য হয়ে উঠছে যে, আপনি যখন ঘরের মাঠে খেলবেন, তখন জিতবেন। আবার যখন অ্যাওয়ে ম্যাচে খেলবেন, তখন প্রতিদ্বন্দ্বীতা করবেন কিন্তু হারবেন! এই ধরনের ‘টেস্ট’ কি টেস্ট ক্রিকেট থেকে টেস্টকে বিপদের দিকে নিয়ে যাচ্ছে ? টেস্ট ক্রিকেটটা কি ১৯৭০-৮০’র ওয়েস্ট ইন্ডিজ এবং অস্ট্রেলিয়ার ১৯৯০ থেকে ২০০০ পর্যন্ত খেলা টেস্টের মত একপেশে হয়ে উঠছে ?
মজার ব্যাপার হল, একই টিম কিন্তু বিদেশি কন্ডিশনে ৫০ বা ২০ ওভারের ফরমেটে প্রায় উল্টো ফল করছে। যেমন ভারত ২০১৩ সালে ইংল্যান্ডে অনুষ্ঠিত চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফিতে শিরোপা জেতে। সবশেষ ২০১৭ সালের আসরেও ফাইনালে ওঠে (ফাইনালে চ্যাম্পিয়ন হয় আবার এশিয়ারই দেশ পাকিস্তান) । ২০১৬ সালে ভারতের মাটিতে টি-টুয়েন্টি বিশ্বকাপ জেতে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। যেখানে ক্যারিবীয়দের প্রতিপক্ষ ছিল ইংল্যান্ড। আবার দেখেন, টেস্ট সিরিজে যে ইংল্যান্ডের ভরাডুবি হয়েছে, তারাই আবার প্রথম দুই ওয়ানডেতে অস্ট্রেলিয়াকে তাদেরই মাটিতে হারিয়েছে অনায়াসে।
এটাকে কীভাবে ব্যাখ্যা করবেন? একই দল টেস্ট ক্রিকেটে কোনও সুযোগই পায় না; কিন্তু বিদেশি কন্ডিশনে ওয়ানডে ও টি -টুয়েন্টি ক্রিকেটে ভাল করছে। এটা কি সুনির্দিষ্টভাবে বলা ঠিক হবে যে, ছোট ফরমেটের অভিন্নতা ‘হোম সুবিধা’ ফ্যাক্টরকে নিঃশেষ করে দিয়েছে ? এই ধরনের দ্বিমুখী সংযোজনের অনুমতি দিয়ে আইসিসি কি পাঁচদিনের ফরমেটকে বিপন্ন করছে ?
আরো গুরুত্বপূর্ণ, হল, এর কোনও সমাধান আছে? ৫০ ওভার বা ২০ ওভারের ম্যাচ অনেক বেশি ব্যাটসম্যানবান্ধব। এসব ফরমেটে ব্যাটসম্যানরা খুব কম সমস্যার সম্মুখীন হন। এর বড় উদাহরণ হতে পারেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনার ডেভিড ওয়ার্নার। আইপিএলে কী দুর্দান্তই না খেলেন তিনি। অথচ ভারতের মাটিতেই আবার টেস্ট সিরিজে ধুঁকতে হয় তাকে!
এই সমস্যা সমাধানের একটা রাস্তা আছে। সেটা একটু ঘুরিয়ে। এতে সফরকারী দলগুলোকে আগে ছোট ফরমেটের সিরিজ খেলতে হবে। এটা দুই ধরনের উপকারে দেবে: এতে কন্ডিশনের সঙ্গে সমন্বয় হবে এবং নতুন পরিস্থিতির সঙ্গে সহজে মানিয়ে নেয়া যাবে। যখন খেলোয়াড়রা একটা দেশকে এক মাস ধরে দেখবে, তখন তারা সহজেই নিজেকে কন্ডিশনের সঙ্গে খাপ খাওয়াতে পারবে, যা তাদের বিদেশ ভীতি দূর করতে সহায়তা করবে।
এই যেমন সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে ভারত যদি প্রথমে তাদের ওয়ানডে ও টি-টুয়েন্টি খেলতো তাহলে টেস্টে প্রোটিয়া পেসারদের অনেকটা সহজে মোকাবেলা করতে পারতো ব্যাটসম্যানরা। একইভাবে ভারত সফরে এটা অস্ট্রেলিয়া বা ইংল্যান্ডের ক্ষেত্রেও ঘটত। সেই সঙ্গে বিশ্বের অন্য সিরিজগুলোতেও একই ফল আসত। এরপর যদি স্বাগতিক দলের জন্য টেস্ট সিরিজে হোম সুবিধার অনুমতি থাকে, তবু তা আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক এবং আনপ্রেডিক্টটেবল হবে।
জনপ্রিয় একটা কথা আছে। ক্রিকেট গৌরবময় অনিশ্চয়তার খেলা। কিন্তু টেস্ট ক্রিকেট এখন যেভাবে খেলা হচ্ছে, তা এখনই যদি না সংশোধন করা হয় তাহলে এই বাক্যটি আর বেশিদিন টিকবে না।
ক্রিকেট বিশ্লেষক বড়িয়া মজুমদারের ব্লগ অবলম্বনে লিখেছেন রেজাউল করিম।