রাজধানীর তেজগাঁওয়ের আরজতপাড়া এলাকার একটি বাসা থেকে মিলু মিলগেড গোমেজ (৬৫) নামে এক খ্রিস্টান বৃদ্ধার গলাকাটা মরদেহ উদ্ধার করেছে পুলিশ।
শুক্রবার সকালে হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয় দাবি করে পুলিশ বলছে, ডাকাতি করতে এসে দুর্বৃত্তরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে বৃদ্ধাকে খুন করেছে।
সন্ধ্যায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পুলিশ মিলুর স্বামী হিউবাট অনিল গোমেজ (৮০) ও বাড়ির বুয়া মোছা. খুশিকে থানায় নিয়ে গেছে।
হিউবাট অনিল গোমেজ (৮০) ও মিলু মিলগেড গোমেজ (৬৫) আরজত পাড়ার নিজেদের তিনতলা বাড়ির তৃতীয় তলাতে থাকতেন। হিউবাট দীর্ঘদিন আমেরিকান দূতাবাসের স্টোর কিপারের দায়িত্বে ছিলেন। তারা দেশ-বিদেশ ঘুরতে পছন্দ করতেন। মাস চারেক আগেও কানাডা থেকে ঘুরে এসেছেন তারা।
এই দম্পত্তির চার ছেলেই দেশের বাইরে থাকে। বড় ছেলে স্ট্যানলি গোমেজ কানাডায় একটি বেসরকারী প্রতিষ্ঠানে প্রকৌশলী হিসেবে কর্মরত। মেঝ ও সেঝ ছেলে রর্বাট ক্লাইভ গোমেজ ও লিংকন গোমেজও কানাডায় পরিবারসহ বসবাস করেন। ছোট ছেলে মগেজ গোমেজ আমেরিকায় বসবাস করেন।
শুক্রবার বিকেলে সরেজমিনে আজরত পাড়ার বাসায় গিয়ে দেখা যায় আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিহতের আত্মীয়দের সঙ্গে কথা বলছেন। পুলিশ বলছে সকাল সাড়ে ছয়টা থেকে সাড়ে সাত ভেতর হত্যাকাণ্ডটি সংগঠিত হয়েছে।
হিউবাট অনিল গোমেজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, তিন থেকে চারজন দুর্বৃত্তরা তাকে বেঁধে রেখে তার সামনেেই মিলুকে হত্যা করে। ওই সময় দুর্বৃত্তদের মুখ ঢাকা ছিল বলেও জানান তিনি।
এসময় বয়সের ভারে নুয়ে পড়া অনিল গোমেজকে ভীত ও আতঙ্কিতও দেখা যায়, ঠিকমতো কথাও বলতে পারছিলেন না তিনি।
শুক্রবার সকালে মিলু ও অনিলের পূর্বাইলের উলুখুলায় আমার বাসায় যাওয়ার কথা ছিল জানিয়ে নিহতের বোন শেলী পেরেরা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সকাল ৬টা ১৫ মিনিটে আমাকে ফোন দিয়েছিল, আমি গীর্জায় থাকায় ফোন ধরতে পারিনি, ফোনে আমার মেয়েকে জানায় তারা বাসায় আসছে, দুপুরে খাবার একসঙ্গে খাবে। পরে বাসায় এসে আমি ফোন দিলে কেউ ফোন ধরেনি, সকাল আটটার দিকে জানতে পারি খুনের ঘটনার কথা। শুরুতে ভেবেছিলাম সড়ক দুর্ঘটনার কবলে পড়েছে। পরে জানতে পারি বাসায় নির্মমভাবে খুন হয়েছে।
পারিবারিক কোনো কলহ বা কারো সঙ্গে শত্রুতা রয়েছে কিনা জানতে চাইলে নিকট আত্মীয় দুলাল স্টেফেন গোমেজ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সকালে আমরা এখানে আসার পর পুলিশের অনুমতিতে বাসা তল্লাশি করলে নিহত এবং তার স্বামীর কারো পাসপোর্ট আমরা পাইনি, বাড়ির দলিলসহ বেশকিছু কাগজপত্র খুঁজে পাচ্ছি না। বাসার আলমারিও ভাঙ্গা ছিল।
তবে খুনের কারণ হিসেবে ডাকাতির সন্দেহ উড়িয়ে দেন নি নিহত মিলু মিলগেডের ভাগ্নি শিল্পী সিলভিয়া পেরেরা। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এর আগেও একবার বাসার কাজের বুয়া পানির সঙ্গে ঘুমের ওষুধ মিশিয়ে তাদের অজ্ঞান করতে চেয়েছিল।
নিহতের ঘনিষ্ঠ আত্মীয়রা জানায়, আরজত পাড়ার বাড়িটি প্রায় আট কাঠার মধ্যে নির্মাণ করা হয়, বাড়ির সামনে ফাঁকা প্রায় ছয় কাঠা জায়গা রয়েছে। এছাড়াও ফার্মগেটে দুটি ফ্ল্যাটসহ গ্রামের বাড়িতেও বেশ সম্পত্তি রয়েছে দুজনের।
এলাকাবাসীরা জানায়, দীর্ঘদিন ধরেই এই বাড়িটিতে তারা বসবাস করছিল।
ঘটনাস্থলে বিকেল থেকে তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত সহকারী পুলিশ কমিশনার ও সহকারী পুলিশ কমিশনার উপস্থিত থাকলেও গণমাধ্যমের সঙ্গে তারা এ বিষয়ে কথা বলতে চান নি।
খুনের কারণ অজ্ঞাত জানালেও ডাকতি হতে পারে বলেও সন্দেহ পুলিশের। ঘটনাস্থলে তদন্তের দায়িত্বে থাকা তেজগাঁও থানা পুলিশের উপ-পরিদর্শক (এসআই) ফারুক উল ইসলাম চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আমরা সকালে এসে ড্রয়িং রুমে বৃদ্ধা মিলু মিলগেডের রক্তাক্ত মরদেহ পড়ে থাকতে দেখি।
“দুর্বৃত্তরা মৃতের গলার বামপাশে ধারালো চাকু দিয়ে গুরুতর জখম করে মৃত্যু ঘটায়।এ সময় সোফায় তার স্বামী হিউবাট অনিল গোমেজ বসে ছিল এবং টেবিলে রক্তাক্ত চাকু ও আলমারির ভাঙ্গা তালাটি পড়ে ছিল।”
তিনি আরো বলেন, জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ইতিমধ্যে আমরা মৃতের স্বামী ও কাজের বুয়াকে থানায় এনেছি। বুয়া জানিয়েছে, সকালে দরজা ভেড়ানো ছিল, ভেতরে ঢুকে রক্তাক্ত লাশ তিনি দেখেন। যেহেতু আলমারি থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র চুরি হয়েছে তাই আমরা ডাকাতিসহ সব বিষয়গুলো খতিয়ে দেখছি।