চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

টাইব্রেকার রোমাঞ্চ শেষে ফাইনালে চিলি

জবাবের পরিবর্তে পাল্টা জবাব। ৪-৪-২ ফর্মেশনে রোনালদোকে বাঁদিকে রেখে পর্তুগাল কোচ সান্তোস যে ছক এঁকেছিলেন প্রথমার্ধে তা মাটি করে দেন চিলির কোচ পিজ্জি। ৪-৩-৩ ফর্মেশনে বাঁদিকে রোনালদোর জন্য ডাবল মার্কিংয়ের ব্যবস্থা করে রাখেন। পর্তুগাল তা সত্ত্বেও ওই অঞ্চল দিয়ে বেশি বেশি বল তোলার চেষ্টা করে। নির্ধারিত সময়ে হাড্ডাহাড্ডি লড়াই শেষে টাইব্রেকারে কপাল পোড়ে পর্তুগালের। তাদের প্রথম তিনটি শট ঠেকিয়ে নায়ক বনে যান গোলরক্ষক ক্লদিও ব্রাভো। কুয়ারেসমা, মৌতিনহো এবং ন্যানির শট নষ্ট হলে চিলির ফাইনাল দরজা খুলে যায়।

প্রথমার্ধে রোনালদো আরেক ফরওয়ার্ড আন্দ্রে সিলভাকে দারুণ সব বল সাজিয়ে দিয়েও গোল বের করতে পারেননি। অথচ ওই ধরনের বল সিলভা রোনালদোকে দিতে পারলে ওই সময়ে গোল হয়ে যায় গোটা দুয়েক।

ফিট থাকতে সবার আগে চিনি বাদ দিন, প্রাকৃতিক ও নিরাপদ জিরোক্যাল-এর মিষ্টি স্বাদ নিন।

ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়ন বনাম সাউথ আমেরিকান চ্যাম্পিয়নদের এই ম্যাচকে কেউ কেউ ‘গেম অব দ্য সেঞ্চুরি’ বলে অভিহিত করছেন। মাঠের লড়াইয়েও তার ঝাঁজ দেখা গেল।

পর্তুগাল এদিন শেষ ম্যাচের একাদশ থেকে পাঁচটি পরিবর্তন আনে। আক্রমণভাগের বাঁদিকে রোনালদো, ডানদিকে আন্দ্রে সিলভা। রোনালদোর উইংয়ে বের্নাডো সিলভা। আন্দ্রো সিলভার নিচে আন্দ্রে গোমেজ। দুই অ্যাটাকিং মিডফিল্ডার আদ্রিয়ান সিলভা এবং উইলিয়াম। অবাক করার বিষয় হলো শেষ ম্যাচে দুর্দান্ত খেলা উইঙ্গার কুয়ারেসমাকে এদিন শুরুর একাদশে রাখেননি সান্তোস। অন্যদিকে চিলি ভিদালকে মূল স্ট্রাইকার বানিয়ে ৪-৩-৩ ফর্মেশনে দল সাজায়। সানচেজ ডানদিকে, বাঁদিকে ভারগাস। তাদের দলে তিনটি পরিবর্তন ছিল।

ম্যাচের ছয় মিনিটের সময় সানচেজ বক্সের খানিকটা বাইরে থেকে ভারগাসকে দারুণ  একটি বল ছাড়েন। ভারগাস গোলরক্ষক রুই প্যাট্রিসিওর সামনে থেকেও বল জালে জড়াতে ব্যর্থ হন। ফিরতি আক্রমণে  বাঁদিক দিয়ে বল নিয়ে চিলির বক্সের কাছে চলে যান রোনালদো। আক্রমণভাগের সতীর্থ সিলভা ততক্ষণে বক্সে ঢুকে পড়েন। রোনালদোও সময় মতো বল ছাড়েন। কিন্তু সিলভা ভারগাসের মতো বল মারেন গোলরক্ষক ব্রাভোর শরীরে।

প্রথম দশ মিনিটে রোনালদো একটি হেড পেয়েছিলেন, সেটি ছাড়া আর সেভাবে কেউ তাকে বল দেননি।

২৩তম মিনিটে রাইটব্যাক পজিশন থেকে ডিফেন্ডার ডিয়াজ রোনালদোকে দারুণ একটি লং পাস দেন। চিলির রক্ষণ তখন এলোমেলো। রোনালদো ড্রিবলিং করতে করতে বল নিয়ে ভেতরে ঢোকেন। চকিতে আন্দ্রে সিলভার সীমানায় বল তুলে দেন। সিলভা বেশি সময় নিয়ে ফেলায় রক্ষণে ভিড় বাড়ায় চিলি। তাতে আরেকটি সুযোগ নষ্ট হয়। এভাবে গোলশূন্য স্কোর নিয়েই শেষ হয় প্রথমার্ধ।

দ্বিতীয়ার্ধে দুই দল আক্রমণে গতি বাড়ায়। ৫৬ মিনিটে রোনালদোর বিদুৎগতির শট ব্রাভো ফিরিয়ে দেয়ার আগে ভারগাসের আগুনে শট প্রতিহত করেন প্যাট্রিসিও। প্রথমার্ধে নিজের ছায়া হয়ে থাকা ভিদাল দ্বিতীয়ার্ধে নড়েচড়ে বসেন। নিজে থেকে বলে যান। দারুণ একটি হেড করেন। গোলমুখে দেখার মতো শট নেন, কিন্তু কাজের কাজ করতে পারছিলেন না।

দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম বিশ মিনিট রোনালদোকে সেভাবে খুঁজে পাওয়া যায়নি। ৭১ মিনিটে পেছন থেকে উঠে এসে চিলির বক্সের সামনে থেকে বল পেয়ে চিপ করেন সিআরসেভেন। কিন্তু নিশানা ঠিক রাখতে পারেননি।

ফরওয়ার্ড আন্দ্রে সিলভাকে নিয়ে পর্তুগীজ কোচের টনক নড়ে ৭৬ মিনিট পার হওয়ার পর। তাকে উঠিয়ে ভ্যালেন্সিয়ার মিডফিল্ডার ন্যানিকে নামান।

৭৭ মিনিটের পর থেকে চিলি হঠাৎ খেলার গতি কমিয়ে দেয়। নিজেদের অর্ধে  বেশি বেশি পাস খেলতে থাকে দলটি।

৮৩তম মিনিটে দ্বিতীয়বার খেলোয়াড় পরিবর্তন করে পর্তুগাল। উইঙ্গার বের্নাডো সিলভাকে উঠিয়ে আগের ম্যাচে আক্রমণভাগে দারুণ সব বলের জোগান দিয়ে নজরকাড়া কুয়ারেসমাকে স্মরণ করেন সান্তোস।

চিলির কোচও আর বসে থাকেননি। স্ট্রাইকার ভারগাসকে উঠিয়ে মিডফিল্ডার রদ্রিগুয়েজকে নামান। চিলি তাতে বাকিটা সময় ৪-৪-২ এ পরিণত হয়। অর্থাৎ আক্রমণভাগ থেকে শক্তি কমিয়ে মাঝমাঠের খেলায় নজর দেয় দলটি। নির্ধারিত সময়ের খেলায় দুই দলের কোনও চেষ্টাই কাজে লাগেনি। খেলা গড়ায় অতিরিক্ত ৩০ মিনিটে।

প্রথম ১৫ মিনিট দুই দল রক্ষণে চোখ রেখে সাবধানী ফুটবল খেলে। কিন্তু তখনও কেউ গোল বের করতে পারেনি।

খেলা শেষ হওয়ার মিনিট খানেক আগে চিলির যে সুযোগ নষ্ট হয়, তাতে ভাগ্যকে দোষ দেয়া ছাড়া উপায় নেই। ভিদালের নেয়া শট বারে লেগে ফিরে আসলে বদলি খেলোয়াড় রদ্রিগুয়েজ একদম গোলের সামনে ফিরতি বল পান। প্যাট্রিসিও তখন মাটিতে। রদ্রিগুয়েজ বা পা দিয়ে টোকাও দেন। কিন্তু বল আবার বারে লেগে পর্তুগীজ গোলরক্ষকের সামনে পড়ে। আকাশে দুহাত তুলে আর্তনাদ করতে থাকেন ভিদাল। ম্যাচ গড়ায় টাইব্রেকারে।

চিলির হয়ে প্রথম শট নেন আগেরদিন রোনালদোকে ‘স্মার্ট গাধা’ বলা ভিদাল। খুনে শটে জাল খুঁজে নেন। পর্তুগালের প্রথম তিনটি শটই ফিরিয়ে দেন ব্রাভো। কুয়ারেসমা এবং সান্তোস মৌতিনহোকে ডানদিকে ডাইভ দিয়ে হতাশ করেন তিনি। ন্যানি পরের শটে আর নিজেকে ঠিক রাখতে পারেননি। বাঁদিকে দুর্বল শট রাখেন। ব্রাভো সেটিও ফিরিয়ে দিয়ে বুকে হাত রেখে কী যেন বলতে থাকেন। শেষ শটের অপেক্ষায় থাকা রোনালদোর চোখে তখন বিদায়ের জল। ভিদালের হাত আকাশে। যিনি আগের দিন বলে রেখেছিলেন ফাইনালে জার্মানির সঙ্গে নাকি তাদের দেখা হবে।

ভিদাল কি জ্যোতিষী? উত্তর পেতে দ্বিতীয় সেমিফাইনাল, জার্মানি-মেক্সিকো ম্যাচ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে। তার আগে ভিদাল অবশ্য একটা জায়গায় জিতে গেলেন। মাথা ঠাণ্ডা রাখার খেলায়।