বিভিন্ন সমস্যার কারণে অনেক সময় কারও কারও টনসিল বা অ্যাপেন্ডিক্স অস্ত্রোপচার করে ফেলে দেয়া হয়। তবে এই অস্ত্রোপচারকে এতদিন অভিশাপ মনে করা হলেও একে আশির্বাদ বলে দাবি করেছেন স্কটল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ডান্ডির একদল গবেষক।
যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বিখ্যাত এই বিশ্ববিদ্যালয়ের ওই গবেষকদল ৫ লাখেরও বেশি ব্রিটিশ নারীর মেডিক্যাল রেকর্ড বিশ্লেষণ করে বলেছে, টনসিল বা অ্যাপেন্ডিক্সের অপারেশন হয় শারীরবৃত্তীয়ভাবে সরাসরি নারীর সন্তান ধারণক্ষমতাকে প্রভাবিত করে, অথবা এতে ‘আচরণগত’ কোনো পরিবর্তন দায়ী।
চমক লাগানো এই গবেষণায় দেখা যায়, যেখানে প্রতি ১শ’ গর্ভবতী নারী তাদের টনসিল বা অ্যাপেন্ডিক্স কোনোটিতেই কোনো অস্ত্রোপচার করেননি, সেখানে ১৩৪ জন গর্ভবতী আগে অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করেছেন, ১৪৯ জন টনসিল অপসারণ করেছেন আর ১৪৩ জন দু’টোই এর আগে কোনো সময় অপারেশন করে ফেলে দিয়েছেন।
প্রাপ্ত ফলাফলের ভিত্তিতে গবেষণার অন্যতম গবেষক ড. সামি শিমি বলেন, এতদিন পর্যন্ত ডাক্তাররা ভুল শিখে এসেছিলেন। তারা জানতেন অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণে নারীর উর্বরতা কমে যায়। বিবিসিকে তিনি বলেন, ‘গবেষণাটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ এবং এটি নারীদের নিশ্চয়তা দিচ্ছে যে, অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করলে তাদের ভবিষ্যতে গর্ভধারণের সম্ভাবনা কমে যায় না।
বরং অ্যাপেন্ডিক্স আর টনসিল দু’টোর দিকেই যদি আমরা তাকাই, তবে গবেষণাটি থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায়, এ ধরণের অঙ্গ বা যে অঙ্গ বারবার প্রদাহের সৃষ্টি করতে পারে, সেগুলো দেহ থেকে অপসারণ করে ফেললে নারীর সন্তান ধারণের ক্ষমতা কমার বদলে উল্টো বেড়ে যায়।’
গবেষণাপত্রটি ফার্টিলিটি অ্যান্ড স্টেরিলিটি জার্নালে প্রকাশিত হয়েছে।
ঘটনাটা ব্যাখ্যা করলেও ঘটনার কারণ ব্যাখ্যা করাটা এখনো বেশ কঠিন গবেষকদের জন্য। এক্ষেত্রে শারীরবৃত্তীয় ব্যাখ্যাটি হতে পারে, টনসিল বা অ্যাপেন্ডিক্সে একবার জীবাণুর সংক্রমণ হলে মোটামুটি নিয়মিতই তার পুনরাবৃত্তি ঘটে। এর ফলে মানবদেহে প্রদাহের মাত্রা বেড়ে যায়, যা নারীর জরায়ু আর ডিম্বাশয়ের ওপরও প্রভাব ফেলে।
তবে ডান্ডির গবেষকদলটি ‘আচরণগত’ ব্যাখ্যাটিকেই বেশি উপযুক্ত মনে করছেন। এই ব্যাখ্যা অনুসারে, নারীরা সাম্প্রতিক সময়ে আগের চেয়ে বেশি ‘উদার যৌন কার্যকলাপ’-এ অভ্যস্ত হচ্ছে, যার ফলে গর্ভধারণ আর পেলভিক ইনফ্ল্যামেটরি ডিজিজে আক্রান্তের পরিমাণ বাড়ছে। এই সমস্যার ফল হিসেবেই অনেক সময় অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ করতে হয়।
তবে এ ব্যাপারে নিশ্চিত হওয়ার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন বলেও মনে করেন গবেষকরা।
বিশেষজ্ঞদের মতে, এই গবেষণা থেকে পাওয়া তথ্য হয়তো অনুর্বরতার চিকিৎসায় নতুন আলো দেখাতে পারে। কিন্তু তাই বলে নারীরা যেন বিনা কারণে টনসিল বা অ্যাপেন্ডিক্স অপসারণ না করেন, সেই পরামর্শ দিয়েছেন তারা।