চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘জীবন থেকে নেয়া’র অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মাননা প্রদান

ভাষা আন্দোলনের পটভূমিতে নির্মিত জহির রায়হানের পরিচালনায় ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের সম্মাননা দিয়েছে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস উপলক্ষে আজ মঙ্গলবার দুপুরে বাংলাদেশ চলচ্চিত্র উন্নয়ন করপোরেশনের (এফডিসি) জহির রাহহান কালার ল্যাব মিলনায়তনে ‘জীবন থেকে নেয়া এবং জহির রায়হান’ শীর্ষক এক আলোচনা সভা ও চলচ্চিত্র প্রদর্শনী অনুষ্ঠানে এ সম্মাননা জানানো হয়। সম্মাননাপ্রাপ্তরা হলেন ছবির চিত্রনাট্যকার ও অভিনেতা আমজাদ হোসেন, অভিনয়শিল্পী রাজ্জাক ও সূচন্দা এবং চিত্রগ্রাহক আফজাল চৌধুরী।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু, বিশেষ অতিথি এফডিসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক তপন কুমার ঘোষ, গুণী চলচ্চিত্র নির্মাতা সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী, চলচ্চিত্র সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার প্রমূখ। অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব সৈয়দ হাসান ইমাম।

অনুষ্ঠানের শুরুতে অতিথিদের ফুল দিয়ে শুভেচ্ছা জানান চলচ্চিত্র নির্মাতা মেহের আফরোজ শাওন। এরপর এই ছবির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীদের উত্তরীয় পরিয়ে দেন তথ্যমন্ত্রী। অনুষ্ঠানে আলোচনা পর্বের মাঝে আবৃত্তি করেন শিমুল মোস্তফা ও চিত্রনায়ক অমিত হাসান। ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি’ গানটি পরিবেশন করেন মেহের আফরোজ শাওন। পুরো অনুষ্ঠান উপস্থাপন করেছেন মুশফিকুর রহমান গুলজার।

সৈয়দ সালাউদ্দিন জাকী বলেন, ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবিটি আমাদের সংগ্রামী চেতনায় উদ্বুদ্ধ করেছে। যার ফলশ্রুতিতে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে আমরা জয়ী করেছি।

আফজাল চৌধুরী বলেন, ‘জহির রায়হানের চিন্তাধারা সময়ের আগে চলত। আমি তার ছবিতে ক্যামেরার কাজ করেছি, এটা আমার জন্য বড় পাওয়া।

আমজাদ হোসেন বলেন, ‘বহুমাত্রিক প্রতিভাবান ব্যক্তি ছিলেন জহির রায়হান। যার জন্য এমন একটি ছবি নির্মাণ করতে পেরেছেন। আমি এই ছবির একজন ভাবতে খুব ভাল লাগছে।’

সুচন্দা বলেন, ‘জহির রায়হানের সঙ্গে আমার কত কত স্মৃতি আছে। সবগুলো বলে শেষ করা যাবে না। তার কারণে আমি ও আমার সন্তানেরা অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছি। কিন্তু আমরা গর্বিত তার জন্য। তার সৃষ্টি তাকে অমর করে দিয়েছে।’

রাজ্জাক বলেন, ‘জহির রায়হান ছিলেন আমার ওস্তাদ। তিনি আমাকে এই আজকের রাজ্জাক বানিয়েছেন। তার সাহসের প্রশংসা করি। আমাদের অভিনীত এ ছবিটি তিনবার নিষিদ্ধ হয়েছিল। জহির রায়হান পাকিস্তান সরকারের সাথে সাহসের সঙ্গে কথা বলে বলে শেষে ছবিটি মুক্তি দিতে পেরেছেন।’

অনুষ্ঠানে আগত অতিথি ও ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির অভিনয়শিল্পী ও কলাকুশলীরা

সৈয়দ হাসান ইমাম বলেন, ‘জহির ও আমি একই বয়সের। আমরা একই চেতনার মানুষ। মূলত উনসত্তরের আন্দোলনে আমাদের পরিচয় হয়, মুক্তিযুদ্ধের সময় আমরা কলকাতায় বাংলাদেশ চলচ্চিত্র শিল্পী ও কলাকুশলী সমিতি গঠন করি। সেখানে তিনি ছিলেন সভাপতি ও আমি সাধারণ সম্পাদক। আমরা তখন অনেক কাজ করেছি। তখন তাকে খুব কাছ থেকে দেখার সুযোগ হয়েছে। তার মত দৃঢ়চেতা মানুষ খুব কমই দেখেছি।’

তপন কুমার ঘোষ বলেন, ‘ছবিটি আমাদের ভাষা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের মধ্যে সেতুবন্ধন তৈরি করেছে।

তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু বলেন, ‘জহির রায়হানের এ ছবিটি আমাদের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। এটা বাঙালী চেতনা উদ্বুদ্ধকরণের ছবি। আমি চেষ্টা করব জহির রায়হানের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কিছু করা যায় কিনা। ’

তিনি আরও বলেন,‘১৯৫২ সালে যেমন বাংলা ভাষার ওপর ষড়যন্ত্র হয়েছিল, তেমনি এখনও সেই ষড়যন্ত্র অব্যহত আছে। বিদেশি ভাষার সংমিশ্রণ বাংলাভাষাকে বিকৃত করার একটা অপচেষ্টা বিদ্যমান আছে। তা যে কোন মুল্যে রুখতে হবে।’

শেষে জহির রায়হানের ছবি ‘জীবন থেকে নেয়া’ ও তথ্যচিত্র ‘বাহান্নর মিছিল’ প্রদর্শন করা  হয়।

আলোকচিত্রী : সাকিব উল হাসান