১৯৮১ সালের ৩০ মে দলীয় সফরে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসে অবস্থানকালীন কিছু সেনাসদস্যের হাতে নিহত হন তৎকালীন রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। সেদিন রাতে সার্কিট হাউসে আসলে কী ঘটেছিল তার বিস্তারিত বর্ণনা উঠে এসেছে চট্টগ্রামের তৎকালীন ডেপুটি কমিশনার (ডিসি) জিয়াউদ্দিন চৌধুরীর লেখা আত্মস্মৃতিমূলক গ্রন্থ ‘অ্যাসাসিনেশন অব জিয়াউর রহমান অ্যান্ড আফটারম্যাথ’ গ্রন্থে। ডিসি হিসেবে ওই সফর আয়োজনের দায়িত্বে থাকা জিয়াউদ্দিনকে উদ্ধৃত করে সেদিন রাতে সার্কিট হাউসের ঘটনা তুলে ধরেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক এবং ইতিহাস গবেষক মুনতাসির মামুন তার ‘ষড়যন্ত্রের রাজনীতি: দুই রাষ্ট্রপতি হত্যা’ বইয়ে।
রাষ্ট্রপতি জিয়া হত্যাকাণ্ডের ওপর রচিত বিভিন্ন বইপত্রে এবং ইতিহাস গবেষকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, চট্টগ্রাম বিএনপির দুটির পক্ষের অন্তর্কোন্দল মেটাতেই জিয়াউর রহমান ইরাক এবং ইরানে দুটি গুরুত্বপূর্ণ রাষ্ট্রীয় সফর বাতিল করে ওইদিন চট্টগ্রাম যান। হঠাৎ পরিকল্পনা করা এ সফরের কথা চট্টগ্রামের ডিসি জিয়াউদ্দিন চৌধুরীকে জানানো হয় সফরের মাত্র ৪৮ ঘণ্টা আগে, যদিও এ ধরনের সফরের ক্ষেত্রে এর আগে প্রায় মাসখানেক আগে ডিসিকে জানানো হতো। এই অল্প সময়ের মধ্যেই ডিসি সার্কিট হাউসে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান এবং তার সফরসঙ্গীদের থাকার ব্যবস্থা করেন। ওই সফরে জিয়ার সফরসঙ্গী ছিলেন বিএনপির তৎকালীন মহাসচিব ডা. একিউএম বদরুদ্দোজা চৌধুরী (পরবর্তীতে তিনি বিএনপি মনোনীত রাষ্ট্রপতি হন), উপ-প্রধানমন্ত্রী জামাল উদ্দিন আহমেদ, আমেনা রহমানসহ দলের আরো কিছু নেতা।
২৯ মে সকালে বাংলাদেশ বিমানের একটি ফ্লাইটে চট্টগ্রাম পৌঁছান জিয়াউর রহমান। বিমান বন্দরে তাকে অভ্যর্থনা জানান বিভাগীয় কমিশনার সাইফউদ্দিন, মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার বদিউজ্জামান, ডিআইজি শাহজাহান এবং ডিসি জিয়াউদ্দিন। বিএনপির কিছু নেতা এবং তিন বাহিনীর স্থানীয় কমান্ডাররাও সেখানে ছিলেন। তবে সেনাবাহিনীর চট্টগ্রাম অঞ্চলের জিওসি মেজর জেনারেল মনজুর সেদিন উপস্থিত ছিলেন না। তার পক্ষ থেকে উপস্থিত ছিলেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আজিজ। রাষ্ট্রপতি জিয়া জিওসি মনজুরের না আসার কারণ জানতে চাইলে তাকে জানানো হয়, টেনিস খেলে কিছুটা আহত হওয়ায় জেনারেল মনজুর উপস্থিত থাকতে পারেননি।
বিমান বন্দর থেকে জিয়া সরাসরি চলে যান ভিআইপি লাউঞ্জের বাইরে রাষ্ট্রপতির জন্য অপেক্ষায় থাকা গাড়ি বহরের দিকে। ডিসি জিয়াউদ্দিনের সঙ্গে তার টয়োটা করোলায় চড়ে সার্কিট হাউসের দিকে রওনা হন তিনি।
রাষ্ট্রপতি জিয়া যখন সার্কিট হউসে পৌঁছান তখনও অনেকে সেখানে পৌঁছাতে পারেননি। সার্কিট হাউসে ঢুকেই তিনি কারও সঙ্গে কথা না বলে সোজা চলে যান তার জন্য নির্ধারিত রুমে। জুম্মার নামাজ আদায় করার জন্য তিনি অত্যন্ত গম্ভীরমুখে বের হয়ে চন্দনপুরা মসজিদের উদ্দেশে রওনা হন। সেসময় তার সঙ্গে ছিলেন বিভাগীয় কমিশনার।
মসজিদ থেকে ফিরে রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান জানান, ডিআইজি ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করবেন যেখানে বিভাগীয় কমিশনার এবং ডিসিও থাকবেন।
তবে উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের কথা বললেও রাষ্ট্রপতি জিয়া দুপুরের খাবার সেরেই দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। সন্ধ্যা সাতটার দিকে কর্মকর্তারা সার্কিট হাউসে এসে জানতে পারেন, রাষ্ট্রপতি দলীয় নেতা-কর্মীদের সঙ্গে আলোচনায় ব্যস্ত। কর্মকর্তাদের যে দেখা করতে বলেছিলেন তা সম্ভবত ভুলে গিয়েছিলেন জিয়া। ৩ ঘণ্টা অপেক্ষার পর রাত ১০টার দিকে কমিশনার ওপরে উঠে জানতে পারেন কর্মকর্তাদের সঙ্গে মিটিং হবে না। মিটিং না হওয়ায় তখনই কর্মকর্তারা যে যার বাড়ি ফিরে যান।
দলীয় নেতাকর্মীদের সঙ্গে দুপুরে শুরু হওয়া বৈঠক মাঝে রাতের খাবারের বিরতি দিয়ে চলে মাঝরাত পর্যন্ত। বৈঠক শেষে রাষ্ট্রপতি ও তার সফরসঙ্গীরা যে যার রুমে যান ঘুমাতে। সেসময় সার্কিট হাউসের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তা বাহিনীর দুজন ছিলেন রাষ্ট্রপতির দরজার দুইপাশে। বাইরে প্রহরায় ছিলেন পুলিশ সদস্যরা। ডিসির সহকারী প্রটোকল অফিসারও ছিলেন সার্কিট হাউসে কর্তব্যরত।
নিজের সেই প্রটোকল অফিসারকে উদ্ধৃত করে জিয়াউদ্দিন তার বইতে লিখেছেন: ভোর চারটার দিকে বিকট আওয়াজে ঘুম ভাঙে প্রটোকল অফিসারের। কিছু বুঝে ওঠার আগেই দেখেন তার সামনের বারান্দার (সার্কিট হাউসের) কিছু অংশ ঝুলে পড়েছে। খুব সম্ভব কোন শেল আঘাত করেছে। খাবার ঘরের জানালা দিয়ে তিনি দেখলেন, সার্কিট হাউসের গেট দিয়ে সামরিক বাহিনীর যান ঢুকছে। সেখান থেকে লাফিয়ে নামছে সৈন্যরা এবং গুলি করছে পুলিশকে লক্ষ্য করে। পুলিশ কোন প্রতিরোধ করেনি। কারণ প্রতিরোধ বৃথা তা তারা বুঝতে পেরেছিলেন। ডাইনিং রুমের টেবিলের নিচে লুকিয়ে থাকা প্রটোকল অফিসার কিছুক্ষণের মধ্যেই রাষ্ট্রপতির ঘরের দিকে যাওয়া সৈন্যদের বুটের আওয়াজ শুনতে পান। সেখান থেকে ভেসে আসে গুলির শব্দ, আর্তচিৎকার।
প্রটোকল অফিসারের মতে, প্রায় একঘণ্টা এই তাণ্ডব চলার পর সেনাবাহিনীর গাড়িগুলো সার্কিট হাউস ছেড়ে যায়। তিনি খাবার ঘর থেকে উঁকি দিয়ে দেখেন, সামনে পড়ে আছে রাষ্ট্রপতির গার্ডের একজনের মৃতদেহ। চারদিকে ধ্বংসের চিহ্ন, রক্ত।
এ অবস্থা দেখে ভয় পেয়ে পেছনের দরজা দিয়ে প্রটোকল অফিসার পালিয়ে আসেন সার্কিট হাউসের পাশে ট্রান্সপোর্ট পুলে। গুলি ও মেশিনগানের শব্দে আতঙ্কিত পাহারাদারের হাঁকডাকে ভোর চারটার দিকে যখন ডিসি জিয়াউদ্দিনের ঘুম ভাঙে, টেলিফোনে এই অফিসারের কাছ থেকেই তিনি সার্কিট হাউসে ঘটে যাওয়া ঘটনার প্রথম বর্ণনা শোনেন। তবে রাষ্ট্রপতি জিয়া নিহত হয়েছেন কিনা সে সম্পর্কে কিছু জানাতে পারেননি প্রটোকল অফিসার। এর কিছুক্ষণ পর বিভাগীয় কমিশনার ডিসিকে ফোন করে লে. কর্নেল মাহফুজের বরাত দিয়ে জানান রাষ্ট্রপতি নিহত হয়েছেন।
ডিসি জিয়াউদ্দিন নিজে গাড়ি চালিয়ে বিভাগীয় কমিশনার সাইফউদ্দিনকে পথ থেকে তুলে নিয়ে যখন সার্কিট হাউসে পৌঁছান তখন ভোরের আলো ফুটেছে। সেখানে আগেই উপস্থিত হয়েছিলেন ডিআইজি, পুলিশ কমিশনার এবং এসপি। তারা দেখতে পান, দেয়ালে গুলির দাগ, গোলার আঘাতে উড়ে গেছে ছাদের একটা অংশ, কাঠের টুকরো-টাকরা পড়ে আছে গাড়িবারান্দায়। সেখানে প্রচুর রক্ত।
দায়িত্বরত পুলিশ অফিসার তাদেরকে জানান: প্রাথমিকভাবে বাইরে থেকে সশস্ত্র সৈন্যদের একটি কনভয় এবং পরে ভেতর থেকে সৈন্যের দল সার্কিট হাউস আক্রমণ করে। তারপর চালায় মেশিনগান। রাষ্ট্রপতির রুম লক্ষ্য করে রকেট শেল ছোড়া হয় কিন্তু তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়ে ছাদে আঘাত হানে। ফলে ছাদের একটি অংশ ভেঙে পড়ে। পুলিশ পাল্টা গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু প্রতিরোধ করতে পারেনি। আক্রমণকারীরা ঢুকে যায়। ভেতরে তারা রাষ্ট্রপতির নিরাপত্তাবাহিনীর গার্ড এবং পুলিশের সম্মুখীন হয়। গাড়ি বারান্দায় রাষ্ট্রপতির একজন গার্ড এবং একজন পুলিশ কনস্টেবল নিহত হন। গাড়ি বারান্দার রক্ত তাদেরই।
আক্রমণকারীরা রাষ্ট্রপতি জিয়ার রুমের দরজায় পদাঘাত করলে জিয়া দরজা খোলেন এবং মুহূর্তেই গুলিতে ঝাঁজরা হয়ে যান। অন্যদিকে আরেকটি দল জিয়ার নিরাপত্তা অফিসার কর্নেল আহসানের রুম খুঁজে তাকে হত্যা করে। তিনি জিয়ার রুম থেকে কয়েকটি রুম পরে ছিলেন। এখানেও একজন গার্ড এবং একজন কনস্টেবলের লাশ পড়ে থাকতে দেখা যায়।
এসপি এবং স্পেশাল ব্রাঞ্চের একজন অফিসারকে নিয়ে জিয়াউদ্দিন দোতলায় উঠে দেখেন রাষ্ট্রপতির রুমের সামনে একটি মৃতদেহ পড়ে আছে রক্তের মাঝে। শরীরটি সাদা চাদরে ঢাকা। মৃতদেহটি পাহারা দেওয়া রাষ্ট্রপতির একজন গার্ড তাদের বলেন: স্যার ইনি রাষ্ট্রপতি জিয়া।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের অধ্যাপক ড. নাদির জুনাইদ একটি প্রবন্ধে ওই রাতের ঘটনার বর্ণনা দিয়ে লিখেছেন: ৩০ মে ভোর রাতে সার্কিট হাউসে হামলার পরিকল্পনা করায় এবং হত্যাকাণ্ড ঘটার পর সবচেয়ে সক্রিয় ছিলেন দুজন মুক্তিযোদ্ধা অফিসার: চট্টগ্রাম ডিভিশনাল হেড কোয়ার্টার্সের সিনিয়র স্টাফ অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান ও ২১ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের তৎকালীন কমান্ডিং অফিসার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মেহবুবুর রহমান। মেহবুব ছিলেন জেনারেল মঞ্জুরের আপন ভাগ্নে।
সার্কিট হাউসে হামলায় কেবল অফিসাররাই অংশগ্রহণ করেছিলেন। বিভিন্ন অফিসারের বর্ণনায় জানা যায় যে, তাদের বলা হয়েছিল প্রেসিডেন্টকে সার্কিট হাউস থেকে তুলে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টাল সেন্টারে নিয়ে আসা হবে, বিভিন্ন দাবি নিয়ে তাঁর সঙ্গে কথা বলার জন্য। কিন্তু প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা অনুযায়ী, জিয়ার নিরাপত্তায় নিয়োজিত অফিসার ও সেনাসদস্যদের সঙ্গে হামলাকারীদের গোলাগুলি শুরু হওয়ার এক পর্যায়ে রাষ্ট্রপতি জিয়া তাঁর কক্ষ থেকে বাইরে বেরিয়ে আসেন। তখন লেফটেন্যান্ট কর্নেল মতিউর রহমান খুব কাছ থেকে স্বয়ংক্রিয় অস্ত্র দিয়ে এক ঝাঁক গুলি করে জিয়াকে হত্যা করেন।
জিয়াউদ্দিন তার বাইতে লিখেছেন: ৩০ মে চট্টগ্রাম সার্কিট হাউসের দৃশ্য ছিল ‘ভীতিপূর্ণ’। গাড়ি বারান্দায় লাশ, দোতলার কিছু অংশ ঝুলে পড়েছে। পুলিশ বাহিনী ছন্নছাড়া। কী করবেন বুঝে উঠতে পারছিলেন না।
এরপরে রাষ্ট্রপতির সফরসঙ্গীদের খোঁজ করেন ডিসি জিয়াউদ্দিন। তাকে দেখে কক্ষ ছেড়ে বের হন ‘পাংশুবর্ণ’ বদরুদ্দোজা চৌধুরী, আমেনা রহমান এবং অন্যরা। আক্রমণের সময় তারা স্নানঘরে বা বিছানার তলায় লুকিয়ে ছিলেন। ডিসি তাদের রেস্ট হাউসে পাঠানোর ব্যবস্থা করেন।
তবে সার্কিট হাউস থেকে ইউনিফর্ম পরে বের হওয়া লে. কর্নেল মাহফুজের ব্যবহার অবাক করার মতো ছিল বলে লিখেছেন জিয়াউদ্দিন। তিনি লিখেন: আমি যখন কমিশনার ও অন্য পুলিশ অফিসারদের জটলার দিকে এগোচ্ছিলাম তখন দেখলাম ওয়্যারলেস সেট হাতে পুরো ইউনিফর্ম পরে লে. কর্নেল মাহফুজ বের হচ্ছেন সার্কিট হাউস থেকে। জটলা থেকে ৫০ গজ দুরে দাঁড়িয়ে তিনি ওয়্যারলেসে কথা বলছিলেন। কথা শেষ করে তিনি জটলার কাছে এসে জানালেন, তিনি (লে. কর্নেল মাহফুজ) সেনাপ্রধান জেনারেল এরশাদ এবং স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেছেন। তিনি তাদের জানিয়েছেন, সেনাবাহিনীতে অনুপ্রবেশকারীরা রাষ্ট্রপতিকে হত্যা করেছে। তাদের তিনি জানিয়েছেন, রাষ্ট্রপতির মরদেহ ঢাকায় নেওয়ার বন্দোবস্ত করতে। মাহফুজের মতে, জেনারেল এরশাদ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে নিয়ে যেকোন সময় হেলিকপ্টারে করে পৌঁছাতে পারেন।
মাহফুজের ভাবলেশহীন অবস্থার বর্ণনা দিয়ে জিয়াউদ্দিন লিখেছেন: তাকে (লে. কর্নেল মাহফুজ) উত্তেজিত মনে হচ্ছিল না বরং বেশ শান্ত দেখাচ্ছিল। গত রাতের ঘটনাবলীর বিবরণও তিনি দিলেন না। শুধু বললেন, আক্রমনকারীরা তাকে লক্ষ্য করে গুলি ছুড়েছিল। কিন্তু তিনি বিছানার নিচে আশ্রয় নিয়ে বেঁচেছেন।
পরে জিয়াউদ্দিন সেখানে গুলির দাগ দেখেছিলেন বটে, তবে সেগুলো ছিল পেছনের দেয়ালে, দরজায় গুলির কোন আঘাতের চিহ্ন ছিল না।
পরবর্তী কিস্তি: জিয়া হত্যার নয়, সেনাবিদ্রোহের বিচার হয়, দণ্ডিতদের বেশিরভাগই মুক্তিযোদ্ধা