জাম্বিয়ায় নারীর মাসিক ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড নিয়ে প্রকাশ্যে আলোচনা করা অনেকটাই নিষিদ্ধ ব্যাপার। আর সে কারণেই এই বিশেষ সময়ে দেশটিতে প্রতিমাসে একদিনের ঐচ্ছিক ছুটি নারীরা নিতে পারেন Mother’s Day বা ‘মা দিবস’ নামে।
জাম্বিয়ার শ্রম আইন অনুসারে নারী কর্মীদের মাসে এই একদিনের ছুটি দিতে প্রতিটি প্রতিষ্ঠান বাধ্য। মা দিবসের এই ছুটি না দিলে সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সুযোগ রয়েছে কর্মীদের। নারী মা হোন বা না হোন, পিরিয়ড হলেই তিনি দরকারি দিনটিতে মা দিবসের ছুটি নিতে পারবেন।
তবে আইনটির সংজ্ঞা পরিষ্কার নয়। নারীরা পিরিয়ডের কারণ দেখিয়ে মাসের যে কোনো একটি দিনে ছুটি নিতে পারেন এবং এজন্য তাদের কোনো ডাক্তারি কাগজপত্র জমা দিতে হয় না। আবার ছুটিটা নেয়ার জন্য আগে থেকে আবেদনও করা লাগে না। শুধু সকালে ফোন করে অফিসে জানিয়ে দিলেই হয় আজ তিনি মা দিবসের ছুটি নিচ্ছেন।
ছুটি দেয়ার বিষয়টিকে অনেকেই স্বাগত জানিয়েছেন। তাদের বক্তব্য হলো, কর্মক্ষেত্র এবং সংসার একসঙ্গে সামলাতে গিয়ে নারীরা অনেক বেশি চাপের মধ্যে থাকেন। এর মাঝে পিরিয়ডের জন্যও যদি একদিনের ঐচ্ছিক ছুটি তারা পান, তবে সেদিন প্রয়োজনীয় বিশ্রাম নিতে পারবেন।
জনসংযোগ কর্মী নাদেকেলা মাজিম্বা অবিবাহিত। তবুও তিনি অফিস থেকে মা দিবসের ছুটি পান প্রতিমাসে। তার মতে, বেশিরভাগ নারীই পিরিয়ডের সময়টাতে অনেক যন্ত্রণা সহ্য করেন। তিনি নিজেও তীব্র পেটব্যথার শিকার হন। তাই ওই সময়টায় একদিন ছুটি নিয়ে মাজিম্বা সারাটা দিন বিশ্রাম নেন। এতে পরদিন আবার কাজ করার শক্তি ফিরে পান তিনি।
মাজিম্বার বস জাস্টিন মুকোসাও মা দিবসের পক্ষে। তার মতে, কর্মজীবী নারীর ওপর সব দিক থেকেই অনেক বেশি চাপ থাকে। তার ওপর পিরিয়ডের কষ্ট। তাই এর মাঝে একটা দিন ছুটি নিলে তারা বিশ্রাম নিতে পারেন এবং পরদিন নতুন উদ্যমে কাজে ফিরতে পারেন। এতে কাজের মানও বাড়ে বলে মনে করেন মুকোসা। অবশ্য অনেকে এর সুযোগও নিতে পারে বলে তার ধারণা।
এই ছুটির বিরোধীও আছেন অনেক। তাদের মধ্যে নারীরাও রয়েছেন। তাদের মতে, একজন নারীর কখন পিরিয়ডের জন্য মা দিবসের ছুটি প্রয়োজন তা অফিসের পক্ষে নিশ্চিতভাবে জানার উপায় নেই। ফলে যে কেউ অন্য কাজের জন্য প্রয়োজন হলেও মাসের কোনো একটা দিন মা দিবসের অজুহাতে ছুটি নিতে পারবেন।
তিন সন্তানের মা মুতিন্তা মুসোকোতওয়ানে-চিকোপেলা ফুলটাইম মার্কেটিং পেশায় আছেন। কিন্তু তিনি মা দিবসের ছুটির বিরোধী। তিনি নিজেও ছুটিটি নেন না। মুতিন্তা বলেন, “আমি এতে বিশ্বাস করি না এবং আমি এটা নেই না। পিরিয়ড গর্ভধারণ এবং সন্তান জন্মদানের মতোই নারীদেহের একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।”
মুতিন্তা বলেন, জাম্বিয়ায় এমনিতেই অনেক বেশি ছুটি রয়েছে। তার ওপর আরেকটা ছুটি কর্মজীবী নারীদের অলস হতে উৎসাহী করে তোলে। মা দিবসের ছুটি কখন কীভাবে কী অবস্থায় নেয়া যাবে – এ ধরণের নানা বিষয় উল্লেখ করে আইনটিকে আরও স্পষ্ট করা উচিত বলে মনে করেন তিনি।