চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে পাখিমেলা

‘পাখ-পাখালি দেশের রত্ন, আসুন করি সবাই যত্ন’ এ প্রতিপাদ্য নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে ‘পাখিমেলা-২০১৮’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। শুক্রবার বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ ও ওয়াইল্ড লাইফ রেসকিউ সেন্টারের যৌথ উদ্যোগে জহির রায়হান মিলনায়তনের সামনে এ মেলার আয়োজন করা হয়। সকাল ১০ টায় প্রধান অতিথি হিসেবে বেলুন উড়িয়ে পাখি মেলার উদ্বোধন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে উপাচার্য অধ্যাপক ড. ফারজানা ইসলাম বলেন: বন্যপ্রাণী, পশু-পাখি আমাদের পরিবেশ ও প্রকৃতিকে রক্ষা করছে। এজন্য পরিবেশকে বাচাঁতে পশু-পাখি, প্রকৃতি ও প্রাকৃতিক সম্পদকে প্রাণ থেকে ভালবাসতে হবে। প্রকৃতির সৌন্দর্য দেখা সৌভাগ্যের বিষয়। সৌভাগ্যের অনুষঙ্গ প্রাণীগুলোর বসবাসযোগ্য পরিবেশ অক্ষুণ্ণ রাখা আমাদের সকলের দায়িত্ব।

তিনি আরও বলেন: জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মূল মাষ্টার প্ল্যানে স্থাপনা নির্মাণের ক্ষেত্রে মানুষ ও অন্যান্য প্রাণীর আবাসন স্থান অক্ষুণ্ণ রাখা হয়েছে।

প্রাণিবিদ্যা বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. মনোয়ার হোসেনের সভাপতিত্বে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বক্তারা পরিবেশ ও প্রকৃতি রক্ষায় সবাইকে সচেতন হওয়ার আহবান জানান।

আরণ্যক ফাউন্ডেশনের প্রধান নির্বাহী ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন: অনেকেই হয়তো মনে করছে পাখিমেলায় শুধু পাখি দেখতে আসছি। কিন্তু পাখি মেলা আয়োজনের আসল উদ্দেশ্য হচ্ছে জনসচেতনতা তৈরি করা। কেবল পাখি নিয়েই সচেতনতা তৈরি করবো না, আমরা সকল প্রকার বন্যপ্রাণী নিয়ে সচেতনতা তৈরি করবো। আমরা আমাদের বন্য প্রাণীকে সম্মান করবো, ভালোবাসবো। পৃথিবীটা শুধু আমাদের জন্যই নয়, কাজেই তারাও আমাদের সাথে সহাবস্থান করবে।

তিনি বলেন: আমাদের জন্য আশার বাণী হচ্ছে তরুণরা এখন স্ব-উদ্যোগে পাখি সংরক্ষণে এগিয়ে আসছে, নিঃসন্দেহে এটি একটি ভালো উদ্যোগ। আমদের উচিত হচ্ছে তাদেরকে উৎসাহিত করা, তাদেরকে সম্মানিত করা।’

মেলার আয়োজক জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগকে ধন্যবাদ জানিয়ে বাংলাদেশ বার্ড ক্লাবের প্রতিষ্ঠাতা ইনাম আল হক বলেন: গত ১৭ বছর যাবত সচেতনতামূলক এই মেলায় আসছি। জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসই হচ্ছে রাজধানীতে একমাত্র যায়গা, যেখানে পাখি ও প্রজাপতি নিয়ে এ ধরণের মিলন মেলা হয়। এখানে আমরা আসি, পাখি দেখি, পাখি প্রেমীদের দেখি।

মেলায় বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ বন বিভাগের বন সংরক্ষক জাহেদুল কবির বলেন: এখনও আমাদের উপকূলীয় এলাকায় পাখি হত্যা করা হচ্ছে। পাখি শিকার করে এখনো অনেক মানুষ খাচ্ছে। গরীব মানুষ খাচ্ছে না, খাচ্ছে সমাজের উচ্চ শ্রেণির মানুষরাই।

উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক ড. শেখ মো. মঞ্জুরুল হক, আইইউসিএনের বাংলাদেশ প্রতিনিধি রকিবুল আমিন, ডব্লিউআরসির প্রতিষ্ঠাতা মো. মোস্তফা ফিরোজ, অধ্যাপক সাজেদা বেগম এবং মেলার আহবায়ক ও প্রাণীবিদ্যা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক মো. কামরুল হাসান।

দেশে পাখি সংরক্ষণ ও নতুন প্রজাতির পাখি সনাক্তকরণে ভূমিকা রাখায় হাসনাত রনি, রাজিব রাশেদুল কবির এবং মো. তারিক হাসান ‘বিগবার্ড অব দ্য ইয়ার’ সম্মাননা দেয়া হয়।

অন্যদিকে পাখির কিচির-মিচির ও গুঞ্জন শুনতে সারাদেশের পাখিপ্রেমিরা সকাল থেকেই সকাল থেকেই ভিড় জমাতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের জলাশয়গুলোতে। দর্শনার্থীরা জলাশয়ের পাশে দাঁড়িয়ে দিনব্যাপী পাখিদের ডানা মেলে আকাশে ওড়াউড়ি, সাঁতার কাটা উপভোগ করে। এসময় কিছুক্ষণ পরপর পাখিরাও এক লেক থেকে আরেক লেকে ওড়াউড়ি করে দর্শনার্থীদের আনন্দ দেয়।

দিনব্যাপী এই মেলায় পাখির আলোকচিত্র ও পত্র পত্রিকা প্রদর্শনী, টেলিস্কোপে শিশু-কিশোরদের পাখি পর্যবেক্ষণ, শিশু-কিশোরদের জন্য পাখির ছবি আঁকা প্রতিযোগিতা, আন্ত:বিশ্ববিদ্যালয় পাখি চেনা ও পাখি বিষয়ক কুইজ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। সবশেষে বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার বিতরণ করা হয়।

পাখি সংরক্ষণে গণসচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ২০০১ সালে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম পাখি মেলা অনুষ্ঠিত হয়। এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে পাখিমেলা অয়োজন করে আসছে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগ।