‘সবাই বলে ভালো ছবি মির্মাণ হচ্ছে না। তা হবে কী করে? চলচ্চিত্র কর্মীদের একত্রে বসার জায়গা নেই। কেউ কাউকে চেনে না। একজন নির্মাতা বা অভিনেতা কী ভাবছেন তা জানার সুযোগ সৃষ্টি হয় না। সবাই একত্রে বসলে, আড্ডায় আড্ডায় নতুন আইডিয়া সৃষ্টি হলে ভালো ছবি এমনিতেই নির্মাণ হবে।’ বললেন চলচ্চিত্র নির্মাতা নাসির উদ্দিন ইউসুফ। আজ শনিবার বিকেলে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির সেমিনার কক্ষে আয়োজন করা হয় চলচ্চিত্র সভা। ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ প্রতিষ্ঠার দাবিতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশ আয়োজনে এই সভায় সভাপতিত্ব করেন নায়করাজ রাজ্জাক। প্রধান অতিথি ছিলেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু।
চলচ্চিত্র সংসদ আন্দোলনের নেতাকর্মীদের ক্রমাগত দাবির প্রেক্ষিতে ঢাকায় ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র’ নির্মাণে আশ্বাস দেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। তিনি বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরেই চলচ্চিত্র নির্মাতা, কর্মীরা দাবি তুলছেন জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের। চলচ্চিত্র শিল্পের বিকাশ ও প্রসারের জন্য এই কেন্দ্র ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ। এই কেন্দ্রটি ঢাকার প্রাণকেন্দ্রেই নির্মিত হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারত থেকে দেশে ফেরার পর চলচ্চিত্র কেন্দ্র নির্মাণের মূল মডেল ও প্রস্তাবনা উত্থাপন করা হবে।’
তিনি আরও বলেন, ‘টেলিভিশন ও ফিল্ম ইনস্টিটিউট এবং ফিল্ম আর্কাইভের জন্য জায়গা যখন বের করে ফেলেছি, তখন নিশ্চয় আমরা এই কেন্দ্রের জন্যও জায়গা বের করতে পারব। শাহবাগে পুলিশের অস্থায়ী ক্যাম্পটি সরিয়ে ফেললে সেখানে এ কেন্দ্রটি নির্মাণ করা যায় কি না, তা নিয়ে আমি স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে কথা বলব।’
জঙ্গিবাদ দমনে চলচ্চিত্রের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘এ মুহূর্তে সবচেয়ে বড় খলচরিত্র হলো জঙ্গিবাদ। জঙ্গিবাদবিরোধী আন্দোলনে চলচ্চিত্র আন্দোলন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। জঙ্গিবাদের পুনরুৎপাদন ঠেকাতে চলচ্চিত্র আন্দোলনকে আরও বেগবান করতে হবে।’
অগণতান্ত্রিক প্রবণতা ও কুসংস্কার রুখে দিতে চলচ্চিত্র আন্দোলনকে আরও বেগবান করে তুলতে ফেডারেশন অব ফিল্ম সোসাইটিজ অব বাংলাদেশের নেতাকর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।
নায়করাজ রাজ্জাক বলেন, ‘এখন চলচ্চিত্র আন্দোলনের কর্মী, নির্মাতারা দুটি ধারা তৈরি করে ফেলেছেন। এভাবে চলতে চলতে তারা পরষ্পর বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছেন। একদিন দেখা যাবে, চলচ্চিত্রই ধ্বংস হয়ে গেছে। এখন উভয় পক্ষের মধ্যে চাই একতা।’
নতুন নির্মাতারা ‘সিনেপ্লেক্সভিত্তিক’ সিনেমা নির্মাণ করছেন—এমন মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘তাদের বলব, সিনেপ্লেক্সভিত্তিক চিন্তা বাদ দিয়ে সিনেমা হলগুলোর জন্যও ছবি বানান। দর্শক হলে আসুক।’ তরুণ নির্মাতাদের ইঙ্গিত করে রাজ্জাক বলেন, ‘এই নির্মাতাদের চিন্তাধারা ভীষণ ভালো। তারা সিনেমা হলে লোক টানতে সক্ষম।’
আরও উপস্থিত ছিলেন অভিনেতা সৈয়দ হাসান ইমাম, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব নাসিরউদ্দীন ইউসুফ, চলচ্চিত্র নির্মাতা মসিহ্উদ্দিন শাকের, মোরশেদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ফিল্ম আর্কাইভের সাবেক মহাপরিচালক জাহাঙ্গীর হোসেন, এফএফএসবির সভাপতি লায়লুন নাহার ও বাংলাদেশ চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতির সভাপতি মুশফিকুর রহমান গুলজার।
সভায় জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের খসড়া উপস্থাপন করেন ম্যুভিয়ানা ফিল্ম সোসাইটির সভাপতি বেলায়াত হোসেন মামুন।
কেন্দ্রের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সম্পর্কে বলতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘ কেন্দ্রটি জাতীয় চলচ্চিত্র সংস্কৃতির বিকাশে প্রয়োজনীয় ও সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। চলচ্চিত্র প্রদর্শনী, প্রশিক্ষণের মাধ্যমে কেন্দ্রটি এক অনুকূল পরিবেশ সৃষ্টি করবে, যা দেশের চলচ্চিত্র আন্দোলনকে আরও গতিশীল করবে।’
জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্রের খসড়া মডেল উপস্থাপন করে তিনি জানান, এতে যথাক্রমে ৭০০, ৩০০ ও ১৫০ সিটের তিনটি মিলনায়তন থাকবে, থাকবে ১৫০ সিটের একটি সেমিনার হল। স্বল্পমেয়াদী ও দীর্ঘমেয়াদী প্রশিক্ষণের জন্য দুই থেকে তিনটি প্রশিক্ষণ কক্ষ, অডিও-ভিজ্যুয়াল লাইব্রেরি, ক্যাফেটোরিয়া, অতিথিশালা, সভাকক্ষ থাকবে। চলচ্চিত্রবিষয়ক বিভিন্ন সংগঠনের কার্যক্রম পরিচালনার জন্য কেন্দ্রে অন্তত ৫টি কক্ষ বরাদ্দের সুপারিশ রয়েছে এই মডেলে।
জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র পরিচালনা কমিটিতে এফএফএসবি সুপারিশ করছে চলচ্চিত্রবোদ্ধা কোনো নির্মাতা, গবেষক বা শিক্ষককে। কেন্দ্রটি সম্পূর্ন আমলাতান্ত্রিক জটিলতামুক্ত রাখার দাবি জানান তারা।
এফএফএসবি এই মডেলে বলেছে, ‘জাতীয় চলচ্চিত্র কেন্দ্র পরিচালনার জন্য একটি উপদেষ্টা কমিটির নিয়ন্ত্রণে পরিচালনা কমিটি প্রণয়ণ করতে হবে। এর সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়া পরিচালনা কমিটি এবং উপদেষ্টা কমিটির মাধ্যমে নির্বাচিত হবে।’
এই উপদেষ্টা কমিটি চলচ্চিত্র নির্মাতা, সমালোচক, গবেষক, চলচ্চিত্রু শিক্ষক ও চলচ্চিত্র সংসদকর্মীদের নিয়ে গঠিত হতে পারে বলে অভিমত দিয়েছে সংগঠনটি।