১৯৪৯ সালে ঢাকার টিকাটুলীর রোজ গার্ডেন প্যালেসে প্রতিষ্ঠার পর ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে মুক্তিযুদ্ধসহ গণতান্ত্রিক সকল আন্দোলনে নেতৃত্ব দেয়া প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ৬৮ বছরে পা রেখেছে। ধর্মনিরপেক্ষতার চর্চা এবং অসাম্প্রদায়িক চেতনায় বিশ্বাসী এই দলের সবচেয়ে বড় অর্জন জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জন। কিন্তু যাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে এই স্বাধীনতা এসেছে সেই পাকিস্তানি গোষ্ঠীর সমর্থকদের হাতে ১৯৭৫ সালের ১৫ই আগস্ট জাতির জনককে সপরিবারে হত্যার পর এই দলের বহু নেতা-কর্মী আবারও হত্যা ও নির্যাতনের শিকার হন। এরপর ১৯৮১ সালে দেশে ফিরে বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনা আওয়ামী লীগের হাল ধরেন। তার নেতৃত্বে দল এখন রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকলেও বিরোধী দলে থাকার সময় তাকে হত্যার জন্যও কম আঘাত আসেনি। এসব হামলা-নির্যাতন মোকাবেলা করে আওয়ামী লীগ এখন বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সবচেয়ে দীর্ঘসময় সরকারকে নেতৃত্ব দেবার গৌরব অর্জন করেছে। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে রাষ্ট্র পরিচালনায় এসে আওয়ামী লীগের সবচেয়ে বড় অর্জন হচ্ছে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করে সর্বোচ্চ দণ্ডের বাস্তবায়ন। এর পাশাপাশি তাদের উন্নয়নমূলক কাজ, আন্তর্জাতিকভাবে বাংলাদেশকে আলাদা পরিচয়ে পরিচিত করা, জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং তথ্যপ্রযুক্তিতে এগিয়ে যাওয়ার অনেক নজির রয়েছে। এসব কারণে এখনও এই দল দেশের তরুণসমাজসহ সাধারণ মানুষের অন্যতম ভরসাস্থল। প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীতে আগামীর পথচলায় দলকে নিষ্কলুষ রেখে দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার প্রত্যয় জানিয়েছেন প্রবীণ নেতারা। কিন্তু দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, সুশাসনের ঘাটতি এবং দেশ পরিচালনায় অনেক ক্ষেত্রে স্বৈরাচারি মনোভাবের বিষয়ে এখন তাদের বিরুদ্ধে সাধারণ মানুষের অনেক অভিযোগ রয়েছে। এই অভিযোগগুলো আওয়ামী লীগের নীতিনির্ধারকরা গুরুত্বের সঙ্গে নেবেন বলেই আমাদের ধারণা। কেননা দেশ পরিচালনা করতে গিয়ে স্বাধীনতার পক্ষের দলের নেতাকর্মীরা দুর্নীতি, দমন পীড়ন ও অগণতান্ত্রিক চর্চায় জড়িয়ে পড়বেন দেশের মানুষ এমনটা প্রত্যাশা করে না। পুরনো গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের মূল্যবোধ ও গণতন্ত্রের চর্চা ব্যাহত হওয়ার ফলে তাদের সাফল্যগুলো অনেক সময় ব্যর্থতার কাছে ম্লান হয়ে যায়। তাই বঙ্গবন্ধুর হাতে গড়া এই দলের সুনাম অক্ষুণ্ণ রাখতে আগের অবস্থানে ফিরে এসে, পরিচ্ছন্ন রাজনীতির সঙ্গে সমানভাবে গণতন্ত্র চর্চা এবং জনগণের সম্পৃক্ততা বাড়ানোর দিকে নজর দিতে হবে। তাহলে দলের সঙ্গে আওয়ামী লীগ দেশ ও জাতিকে আরো বেশি সমৃদ্ধ করতে পারবে বলে আমাদের বিশ্বাস।