চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

চাইলে ক্রিকেটারও হতে পারতেন কর্নেল আজাদ: নাজমুল আবেদীন ফাহিম

সিলেটে জঙ্গিদের ফেলে যাওয়া বোমা বিস্ফোরণে নিহত র‌্যাবের গোয়েন্দা শাখার পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদ উচ্চ মাধ্যমিক পাসের পর ১৯৯৬ সালে বিএমএ ৩৪তম দীর্ঘমেয়াদি কোর্সে যোগদান করেন। কিন্তু এর আগে তিনি দীর্ঘ ছয় বছর বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (বিকেএসপি) প্রশিক্ষণ গ্রহণ করেছেন। তিনি ছিলেন বিকেএসপির ক্রিকেটের প্রথম ব্যাচের স্টুডেন্ট। তার ব্যাচমেট ছিলেন একসময়ের জনপ্রিয় ক্রিকেট তারকা নাইমুর রহমান দুর্জয়, কোচ মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। যারা আজ বাংলাদেশের ক্রীড়া জগতের প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্ব। সে সময়ে তাদের কোচ ছিলেন বিসিবি’র ন্যাশনাল গেম ডেভেলপমেন্ট ম্যানেজার নাজমুল আবেদীন ফাহিম।

ছাত্র আবুল কালাম আজাদের স্মৃতিচারণ করে তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আজাদের ডাক নাম ছিলো রাসেল। সে খুবই ভালো বাঁ হাতি ব্যাটসম্যান ছিলো। ফিল্ডিংও খুব ভালো পারতো। প্র্যাকটিসের অসংখ্য জেতা ম্যাচে তার অনেক অবদান ছিলো। চাইলে সে ভালো ক্রিকেটার হতে পারতো। কিন্তু তা না করে উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পরে সেনাবাহিনীতে যোগ দেয়।

ছাত্র জীবন থেকেই প্রচণ্ড পরিশ্রমী ছিলেন উল্লেখ করে তিনি আরো বলেন: ও ছিলো এমন একজন ছেলে যাকে কখনো কোনো কাজ দিয়ে শেষ করতে দ্বিতীয়বারের জন্য বলতে হতো না। খুবই বিনয়ী ছিলো। বেশি কথা বলতো না। তবে বন্ধুদের মধ্যে ওর জনপ্রিয়তা ছিলো। ও কখনো নিজের কাজ শেষ না করে থাকতো না। প্রচুর পরিশ্রম করতে পারতো। দায়িত্ব পালনে কারও মুখাপেক্ষি হয়ে থাকতো না, নিজের দায়িত্ব নিজেই শেষ করতো।

আবুল কালাম আজাদের মৃতদেহ বহন করে নিয়ে যাচ্ছেন সহকর্মীরা। ছবি তুলেছেন: ওবায়দুল হক তুহিন

রাসেল কিছুটা প্রচার বিমুখ ছিলো উল্লেখ করে নাজমুল আবেদীন বলেন: রাসেলের এই প্রচার বিমুখ স্বভাব তার পরবর্তী পেশা জীবনেও দেখা গেছে। নিজের অর্জন ও দক্ষতা সম্পর্কে তেমন কথা বলতো না। নিজেকে জাহির করার কোনো চেষ্টা ওর মধ্যে ছিলো না। সব কাজকেই ও দায়িত্বের অংশ মনে করতো এবং আলাদা করে তার জন্য প্রশংসা পাওয়া উচিত এমনটি ও ভাবতো না। ছাত্র অবস্থায় আমাকে যেরকম সন্মান ও শ্রদ্ধা করতো, র‌্যাবের গোয়েন্দা পরিচালক হওয়ার পরও ঠিক একই রকম ছিলো ও। এ বিষয়গুলোই ওকে ’আউটস্ট্যান্ডিং’ করে তুলেছিলো।

আবুল কালাম আজাদের মৃত্যুতে যে ক্ষতি হয়েছে তা কখনো পূরণ হবে না উল্লেখ করে একটি বিশেষ ঘটনার স্মৃতি চারণ করেন নাজমুল আবেদীন। তিনি বলেন: একদিন খেলার সময় রাসেল ফিল্ডিং করছিলো। ব্যাটসম্যান বলে শট করার পর তা কুড়িয়ে স্ট্যাম্প লক্ষ্য করে ছুড়ে মারলো। ওই বল স্ট্যাম্পে লেগে পরে আমার থুতনিতে (চিন) এসে লাগে। এতে কিছুটা এখানে কেটে যায়। এ বিষয়টি নিয়ে ও (রাসেল) বেশ বিব্রত ছিলো এবং এ নিয়ে তার মধ্যে সৌজন্যতার অন্ত ছিলো না। কতোবার যে দুঃখ প্রকাশ করেছে। আমি বলার পরেও ও দুঃখ প্রকাশ করতেই থাকে।

আবুল কালাম আজাদকে র‌্যাংক পরিয়ে দেয়া হচ্ছে

র‌্যাব ইন্টেলিজেন্স উইং এর পরিচালক লেফটেন্যান্ট কর্নেল আবুল কালাম আজাদের জন্ম ১৯৭৫ সালের ৩০ অক্টোবর চাঁপাইনবাবগঞ্জে। সেনা কমান্ডো আজাদ সেনাসদর, ১ প্যারা কমান্ডো ব্যাটালিয়ন এবং ১৯ ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে দায়িত্ব পালন করেছেন। ২০১১ সালের ২৬ অক্টোবর র‌্যাব-১২ এর একজন কোম্পানি কমান্ডার হিসেবে এই বাহিনীতে আসেন। ইংরেজিতে স্নাতকোত্তর ডিগ্রিধারী আজাদকে ওই বছর শেষেই র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইংয়ে আনা হয়। দুই বছর উপ-পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালনের পর ২০১৩ সালের ৮ ডিসেম্বর ইন্টেলিজেন্স উইংয়ের পরিচালক হন তিনি। তার দুই ছেলে ও এক মেয়ে রয়েছে।