ছেচল্লিশ বছর আগে যে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দাঁড়িয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের স্বাধীনতার ডাক দিয়ে ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ দিয়েছিলেন; সেই একই জায়গায় দাঁড়িয়ে, সেই ভাষণের বিশ্ব স্বীকৃতিকে উদযাপন করলেন শিক্ষক, কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, রাজনীতিকসহ বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ। নাগরিক সমাবেশে তাদের প্রায় সবাই বলেছেন, স্বাধীনতার দীর্ঘ ৪৬ বছর পর ৭ মার্চের ভাষণকে আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে ঠিকই; কিন্তু এই ভাষণ নিয়ে বিভিন্ন সময় ইতিহাসকে বিকৃত করার চেষ্টা করা হয়েছে। এমনকি এক সময় এই ভাষণ বাজানো, শোনা নিষিদ্ধ করা হয়েছিল। সেই নিষেধাজ্ঞা অমান্য করতে গিয়ে অনেককে অপমান, নির্যাতন, লাঞ্ছনার শিকার হতে হয়েছে। কাউকে কাউকে জীবনও দিতে হয়েছে। কিন্তু এতো কিছুর পরও বঙ্গবন্ধুর নাম ষড়যন্ত্রকারীরা মুছতে ফেলতে পারেনি। যতই তারা এই ভাষণ বন্ধ করতে চেয়েছে, ততই মানুষ তাকে ধারণ করে এগিয়ে গেছে দেশের জন্য, মানুষের জন্য। এ কথা সত্যি বঙ্গবন্ধুকে সপরিবার হত্যার পর আমরা বিভিন্ন সময় দেখেছি এই ভাষণ নিয়ে অবৈধ-বৈধভাবে রাষ্ট্র ক্ষমতায় থাকা একটি গোষ্ঠির মধ্যে ভীতি কাজ করেছে। তারা কখনও একে স্বাভাবিকভাবে গ্রহণ করতে পারেনি। অথচ এই ভাষণই ছিলো জাতির মুক্তিযুদ্ধে সবচেয়ে অনুপ্রেরণা, লড়াইয়ের বড় হাতিয়ার। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি ৭ মার্চ প্রসঙ্গে দেশের অন্যতম দল বিএনপি এবং তার মিত্ররা দিনের পর দিন মিথ্যাচার করেছে, বির্তকিত করতে চেয়েছে। এমনকি রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন-রেডিও-সংবাদপত্রে সেই ভাষণ প্রচারে বাধা দিয়েছে। যদিও দলটির প্রতিষ্ঠাতা জিয়াউর রহমান তার নিজের লেখাতেই স্বীকার করে গেছেন, ৭ মার্চের ভাষণই ছিলো বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতা ঘোষণার সবুজ সংকেত। কিন্তু তারপরও এই ভাষণ নিয়ে বির্তকের পেছনে ছিলো দীর্ঘমেয়াদী ষড়যন্ত্র। তবে সেই ষড়যন্ত্র যে ব্যর্থ হয়েছে তার সর্বশেষ প্রমাণ দিয়েছে ইউনেস্কো। গত ৩১ অক্টোবর ফ্রান্সের প্যারিসে সংস্থাটির সদর দপ্তরে দীর্ঘ বৈঠকের পর মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড কর্মসূচির আন্তর্জাতিক উপদেষ্টা কমিটি (আইএসি) বৈশ্বিক ঐতিহ্যের তালিকা বা মেমোরি অব দ্য ওয়ার্ল্ড ইন্টারন্যাশনাল রেজিস্টার-এ বঙ্গবন্ধুর ৭ মার্চের ঐতিহাসিক ভাষণকে অর্ন্তভুক্ত করে। এমন স্বীকৃতি আবারো প্রমাণ করেছে, চাইলেও ইতিহাসকে মুছে ফেলা যায় না। আমরাও তাই মনে করি, যে ভাষণ একটি জাতির জন্মের আহ্বান, যে ভাষণের সঙ্গে জড়িয়ে আছে একটি জাতির সংগ্রামের দীর্ঘ ইতিহাস; হাজারো চেষ্টাতেও তা কখনো মুছে ফেলা যাবে না।