ম্লান হয়ে গেছে শত বছরের ঐতিহ্যবাহী চাঁদপুর নৌবন্দরের অস্তিত্ব। নেই পুরনো ঘাটে হাজারো মানুষের ব্যস্ততা। কালের গর্ভে হারিয়ে যাচ্ছে দেশের পূর্বাঞ্চলের প্রবেশমুখের চিরায়ত চেহারা।
একসময় লঞ্চে দাঁড়িয়ে চোখে পড়ত চাঁদপুর নৌবন্দর, শতবছরের পুরনো ঘাট, পুরনো বাজার, প্রাচীন স্থাপনা, মসজিদের মিনার। হাজারো মানুষের কলতানমুখর এই ঘাটকেই বলা হতো প্রাচ্যের সিংহদ্বার, যা এখন নিরব এক শ্মশান। নেই লঞ্চ ও যাত্রীর কোলাহল। এমনকি নেই ঐতিহ্য কামড়ে টিকে থাকা হাজারো মানুষের প্রাত্যহিক জীবন জী৫বিকার তাড়া। সবাই যেন হারিয়েছে অনেক কিছু।
এলাকাবাসীর মতে, চাঁদপুরের মেরুদণ্ড পুরানবাজার। পুরানবাজারের ব্যবসায়ীদের চাঁদপুর থেকেই চলাচলে সুবিধা হয়। নতুন ঘাটে রিকশা বা সিএনজি অটোরিক্সা যা-ই এসে থামুক, সবাইকেই ঘাটে বাহন নিরাপদ রাখার জন্য প্রতিবার টাকা দিতে হয়। “আমরা চাই এখানেই (পুরনো ঘাট) লঞ্চঘাটটা হোক,” বলেন তারা।
ব্যবসায়ী জাকির হোসেন বলেন, নতুন ঘাটে মানুষের ওঠানামায় অনেক অসুবিধা হচ্ছে। তারা ট্রেনে উঠতে পারে না। স্থায়ীাভাবেও কোনো টার্মিনাল নেই। নতুন ঘাটে আসা-যাওয়ারও কোনো ব্যবস্থা নেই বলেন জানান তিনি।
শাহ আলম মল্লিক নামে চাঁদপুরের আরেক ব্যবসায়ী জানান, প্রায়ই মালামাল লঞ্চ থেকে পুরানবাজার আনা-নেয়া করতে খুব সমস্যা হচ্ছে। এতে ব্যবসায় মন্দাভাব দেখা দিচ্ছে। তিনি বলেন, “আমরা চাই, ডাকাতিয়া নদীর ড্রেজিং হওয়ার পর আবার সেই ডাকাতিয়া নদীতেই আগের মতো লঞ্চঘাট ফিরে আসুক।”
দক্ষিণাঞ্চলের সঙ্গে পূর্বাঞ্চলের যোগাযোগের প্রধান এই ক্ষেত্রে এখন হাজারো মানুষ লঞ্চ থেকে নতুন ঘাটে নেমে পড়েন এক দুর্বিপাকে। দফায় দফায় টাকা আর হয়রানি।
নতুন ঘাটে মালপত্র ও শিশুদের নিয়ে এসে বিপাকে পড়তে হয় যাত্রীদের। যানবাহন যেমন ঠিকমতো পাওয়া যায় না, তেমনি যাত্রীদের বসার ব্যবস্থাও নেই। এমনকি লঞ্চে ওঠানামার জন্য যে সেতুগুলো তৈরি করা হয়েছে সেগুলোর অবস্থাও ভালো নয় বলে জানান স্থানীয়রা।
স্থানীয়রা বলেন, দিনে দিনে ডাকাতিয়া নদীর নাব্যতা হারানো এবং মেঘনা মোহনা থেকে লঞ্চ ঘোরাতে গিয়ে একাধিক দুর্ঘটনার কারণে বর্ষা মৌসুমে পুরনো ঘাট পাল্টে নতুন ঘাট চালু করা হয়। দু’বছর আগে নতুন ঘাটটিই স্থায়ী হয়ে গেছে।
একদিকে নতুন ঘাটে গড়ে তোলা হয়নি কোনো অবকাঠামো, অন্যদিকে পুরনো ঘাট হতে চলেছে নিশ্চিহ্ন।