চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘চলচ্চিত্রে আমাদের মুক্তিযুদ্ধ খুব সরলভাবে এসেছে’

২০১৪ সালে প্রখ্যাত কথা সাহিত্যিক আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্প অবলম্বনে ‘মেঘমল্লার’ নামের একটি চলচ্চিত্রের মধ্য দিয়ে নির্মাতা হিসেবে আলোচনায় আসেন জাহিদুর রহিম অঞ্জন। প্রথম পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণ করেই জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার জিতে নেন তিনি। যদিও এর আগে থেকেই তিনি স্বল্পদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত রয়েছেন। বাংলাদেশ শর্টফিল্ম ফোরামের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য তিনি। প্রথম চলচ্চিত্রকে মুক্তিযুদ্ধের বিষয় করা এই নির্মাতা চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন মুক্তিযুদ্ধ-নির্ভর বাংলা চলচ্চিত্র নিয়ে:

বাংলা চলচ্চিত্রে মুক্তিযুদ্ধের উপস্থাপন ঠিকঠাক ভাবে ব্যবহার হয়েছে বলে মনে করেন?

এ বিষয়ে আলোচনা করতে গেলে প্রত্যেকটা সিনেমা নিয়ে আলাদাভাবে আলোচনা করতে হবে। ‘ওরা এগারো জন’-এর মধ্যে কি আছে এটা এক কথায় বলা যায় না। তবে ওভার অল যদি মুক্তিযুদ্ধের সিনেমা নিয়ে বলি, তাহলে বলতে হয়, বাংলাদেশের প্রায় সব ছবির মধ্যে মুক্তিযুদ্ধ যে একটা গণ মানুষের যুদ্ধ ছিল সেভাবে চলচ্চিত্রে আসেনি। চলচ্চিত্রে আমাদের মুক্তিযুদ্ধটা খুব সরলভাবে উপস্থিত হয়েছে।

যেমন…?
ধরেন, মুক্তিযুদ্ধের ছবি মানেই পাকিস্তানি কিংবা আলবদরদের সাথে সম্মুখ যুদ্ধ, নারীধর্ষণের দৃশ্য, জ্বালাও পোড়াওয়ের দৃশ্য। এগুলো স্বাভাবিক, কিন্তু এর বাইরে ব্যক্তি মানুষের ক্ষত, কী পরিস্থিতিতে একটা মানুষ যুদ্ধে জড়িয়ে গেছে এগুলো কিন্তু আমাদের চলচ্চিত্রে অনুপস্থিত। মানুষ যে আলাদা আলাদাভাবে, ব্যক্তিগত স্ট্রাগল থেকেও যুদ্ধে জড়িয়েছে, এগুলো আমাদের সিনেমায় সেইভাবে আসেনি।

কোন সিনেমাগুলোতে আসছে বলে আপনার মনে হয়?
আমার মনে হয় বেশিরভাগ সিনেমাতেই আসেনি। ‘মুক্তির গান’ আর ‘স্টপ জেনোসাইড’ ছাড়া। অনেক সিনেমাতেই মুক্তিযুদ্ধকে বানিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হয়েছে হত্যা, ধর্ষণ, ভায়োলেন্স ইত্যাদি লাগামহীনভাবে দেখানোর মাধ্যমে।

বর্তমানে মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে ছবি করলে কেমন হওয়া উচিত?
আসলে আমাদের মুক্তির ইতিহাসও শহুরে মধ্যবিত্তের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলা হয়েছে। ধরুন, গ্রামের সাধারণ একজন কৃষক যে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছে। সে হয়তো যুদ্ধ করে বেঁচে আছে, কিংবা বেঁচে নেই। কিন্তু মূল কথা হচ্ছে, সে কিন্তু কিছু পাওয়ার আশায় যুদ্ধটা করেনি। মুক্তিযুদ্ধে তার এইঅবদানের স্বীকৃতি দেয়া উচিত। এরকম অসংখ্য মানুষের সেক্রিফাইস সিনেমায় আসা উচিত। তাহলে আমাদের বিজয়ের মর্মটা কিছুটা হলেও উপলব্ধি করা যাবে। ব্যক্তিগতভাবে আমার চাওয়া, এরকম আখ্যান উঠে আসুক আমাদের সিনেমায়।

মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর প্রিয় সিনেমার কথা বলা হলে কোনটার কথা বলবেন?
মুক্তিযুদ্ধ নির্ভর চলচ্চিত্রের কথা বললে এই মুহূর্তে জহির রায়হানের স্টপ জেনোসাইট, মুক্তির গানের কথা মনে পড়ছে। এগুলোতে মুক্তিযুদ্ধ যে একটা গণমানুষের যুদ্ধ ছিল এর আঁচ পাওয়া যায়। আমাদের সিনেমা মেঘমল্লারেও মুক্তিযুদ্ধকে আমরা এভাবে দেখতে চেয়েছি। অবশ্য আখতারুজ্জামান ইলিয়াসের ‘রেইনকোট’ গল্পেই বিষয়টা এভাবে ছিল।

‘মেঘমল্লার’-এর পর আরও কোনো চলচ্চিত্রে এখনো দেখা যায়নি। নতুন চলচ্চিত্রের কোনো খবর আছে?
নতুন একটি চলচ্চিত্রের জন্য চিত্রনাট্য করছি। প্রযোজক পেলে শিগগির হয়ত কাজ শুরু করব।