বীরবল হাত দেখা শুরু করেছে। রাজ্যে দ্রুত তার সুনাম ছড়িয়ে পড়েছে। দূর-দূরান্ত থেকে সবাই হাত দেখাতে আসে। একদিন সম্রাট আকবর পরখ করতে চাইলেন বীরবলকে। হাত বাড়িয়ে বললেন, ‘বীরবল ভালো করে দেখে আমার ভবিষ্যৎ বলো।’
বীরবল পরখ করে বলল, ‘মহারাজ। ভবিষ্যৎ বলা যাচ্ছে না। তবে অতীত বলতে পারবো।’ আকবর বিরক্ত হয়ে বলল, ‘অতীত তো সবাই বলতে পারে। ঠিক আছে বলো।’ বীরবল বলল, ‘আপনি এই মাত্র ঢাকা থেকে এসেছেন।’
আকবরের বিস্ময়ের শেষ নেই! সে ঢাকা গিয়েছিল অন্যবেশ ধারণ করে। বীরবল জানলো কী করে? তবে কি বীরবল আকবরের পেছনে গুপ্তচর লাগিয়ে রেখেছে? আকবর রেগে বললেন, ‘তুমি কী করে বুঝলে হে বীরবল?’ বীরবল বলল, ‘মহাশয়। ভুল বুঝবেন না। আপনার কোমর অবধি ময়লা পানিতে ডুবে গেছিল। গা থেকে পচা পানির গন্ধ পারস্যের সুগন্ধিতেও ঢাকতে পারেননি। ঢাকা ছাড়া এমন কোমর অবধি ময়লা পানি আর কোন শহরে পাবেন জাঁহাপনা?’
সম্রাট আকবর বীরবলের উপর রেগেছিলেন না খুশি হয়েছিলেন তা আমাদের জানা নেই। বীরবলের কথাগুলো যে সত্য সেই তথ্য কারও অজানা নয়।
ঢাকায় এসে আকবর কী ভেবেছিলেন সেটাও আমাদের অজানা। তবে অনুমান করতে পারি আকবর ভেবেছিলেন, মাত্র একটা পানিপথের যুদ্ধে জিতে আমি কত লাফ ঝাপ পারি। আর এরা প্রতিদিন পানিপথের যুদ্ধে জেতে।
আকবর মতিঝিল গিয়ে যখন দেখলেন চারদিকে অথৈ পানি। পানিপথের যুদ্ধে লড়ছে স্কুল ফেরত শিশু-কিশোর, অফিস যাওয়া যুবক-যুবতী। তখন কী ভেবেছিলেন? কিংবা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা স্কুলের ছেলে-মেয়েদের প্লাস্টিকের নৌকায় করে পার করে দিচ্ছিলেন, তখন কী ভেবেছিলেন?
আন্দাজ করতে পারি, তিনি ভেবেছিলেন, ভাগ্যিস পানিপথের যুদ্ধটা পনের শতকেই হয়েছিল। নইলে এইসব যুদ্ধের চাপে তার বীরত্বের কথা মানুষ ভুলেই যেত।
পানির অপর নাম জীবন। এই তত্ব যিনি দিয়েছিলেন তিনি উল্লেখ করে বলেননি ঠিক কতটা পানির অপর নাম জীবন। সেটা উল্লেখ করলে ঢাকাবাসীর জন্য সুবিধা হতো। রাস্তা উপচে ময়লা সমেত ডোবার পানি বাসায় ঢোকার সময় সেই পানির অপর নাম জীবন না মরণ, তা অন্তত জানা যেত।
বৃষ্টিতে, জলাবদ্ধতায় রাস্তায় পানিপথের যুদ্ধ পেপার পত্রিকায় দেখা যায়। কিন্তু ঘরের যুদ্ধ তো দেখা যায় না।
জলাবদ্ধতার দরুণ অফিসে যেতে না পারা এক স্বামীর জন্য তার স্ত্রী খিচুড়ি রান্না করলেন। হলুদ-মরিচ এদিক সেদিক হওয়ায় খিচুড়ির স্বাদ একটু কম হলো। স্বামী মুখে দিয়ে বললেন, ‘কী রেঁধেছো। গোবরের মতো স্বাদ।’
স্ত্রী কাজ করতে করতে বললেন, ‘তাহলে গোবরের স্বাদও পরখ করা হয় তোমার?’
যেহেতু পথে পানি জমে থাকাই এইসব যুদ্ধের সূত্রপাত; সেহেতু এ ধরণের যুদ্ধকে পানিপথের যুদ্ধের মর্যাদা দেওয়াই যায়।
পানিপথের যুদ্ধে সম্রাট বাবর, আকবর জিতলেও এ যুগের পানিপথের যুদ্ধে সাধারণত বুদ্ধিমানরাই জেতে। কয়েকদিন আগে ফেসবুকে একটা ছবি দেখলাম। জলাবদ্ধতায় রাস্তায় চলার জন্য এক লোক প্লাস্টিকের টুলের সাথে জুতা আটকে নিয়েছেন। দুই টুলের সাথে দুই জুতা। আমরা যেমন জুতা পায়ে দেই, তিনিও জুতা পায়ে দেন। কিন্তু দেখলে মনে হবে তিনি আসলে জুতা না, টুল পায়ে দিয়েছেন। এরপর পায়ের নিচের টুল নিয়ে হেঁটে পার হন জলাবদ্ধ এলাকা। সবার যেখানে হাঁটু পানি, তার সেখানে টুল পানি। পা ভেজার চান্স নেই।
জলাবদ্ধতা আমাদের পুরনো সমস্যা। সমাধানের কোনো লক্ষণ নেই। সমাধান ভাবার অনেক মানুষ আছে। আমরা বরং পুরনো সমস্যাকে মনে করে পুরনো কৌতুক পড়ে শেষ করি-
করিম সাহেব হন্তদন্ত হয়ে পাশের ফ্ল্যাটে গিয়ে বললেন, আমাকে এক গ্লাস পানি দিতে পারবেন?
দ্রুত তাকে এক গ্লাস পানি দেওয়া হলো।
পানি নিয়ে করিম সাহেব তার ফ্ল্যাটে চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর খালি গ্লাস নিয়ে আবার এসে এক গ্লাস পানি চাইলেন।
এভাবে পরপর সাত আট গ্লাস পানি নেওয়ার পর পাশে ফ্ল্যাটওয়ালা করিম সাহেবকে থামালেন।
‘ভাই সাহেব, সেই কতক্ষণ ধরে আপনি একগ্লাস করে পানি নিচ্ছেন। এত পানি দিয়ে আপনি কি করেন?’
করিম সাহেব বললেন, ‘না মানে আমার ফ্ল্যাটে আগুন লেগেছে । তা নেভানোর চেষ্টা করছি!’