জাতীয় ইতিহাসে এক গৌরবোজ্জ্বল দিন ১৬ ডিসেম্বর। বাঙালি জাতির দীর্ঘ তেইশ বছরের রাজনৈতিক সংগ্রাম ১৯৭১ সালে পরিপূর্ণতা লাভ করে ৯ মাসের সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে। যদিও এই অর্জন সহজে আসেনি। এজন্য জাতিকে দিতে হয়েছে কঠিন থেকে কঠিনতর সংগ্রামের পরীক্ষা।বায়ান্ন’র ভাষা আন্দোলন, বাষট্টি’র শিক্ষা আন্দোলন, ছেষট্টি’র ৬-দফা, ঊনসত্তরের ১১-দফা আর গণঅভ্যুত্থান ছিল সেই সংগ্রামের একেকটা ধাপ। সেইসব ধাপ পেরিয়েই আসে চূড়ান্ত স্বাধীনতা। এই স্বাধীনতার পেছনে জাতির ত্যাগের পরিমাণও কম নয়। বিশ্ব মানচিত্রে বাংলাদেশ নামটি লিখতে রক্ত দিয়েছিলেন ত্রিশ লাখ শহীদ, সম্ভ্রম হারিয়েছিলেন দুই লাখ মা-বোন। অসামান্য আত্মত্যাগ ছিল আরো বহু মানুষের। ইতিহাসে তাদের সেই অপরিসীম ত্যাগ আর বীরত্বগাথা চিরদিন স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে। এরইমধ্যে আমরা স্বাধীনতা অর্জনের ৪৬ বছর পার করেছি। নানা প্রতিবন্ধকতা সত্বেও সুদীর্ঘ এই সময়ে আমাদের প্রাপ্তির পরিমাণও কম নয়। গর্ব করা সেই প্রাপ্তি বাংলাদেশকে বিশ্ব দরবারে অন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। এরইমধ্যে অর্থনৈতিক অগ্রগতির সূচকে বিশ্বের শীর্ষ ৫টি দেশের একটি বাংলাদেশ। আমাদের মাথাপিছু আয় ১ হাজার ৬১০ মার্কিন ডলার ছাড়িয়েছে। বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ ৩৩ বিলিয়ন ডলার। মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হয়েছে দেশ। নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর মতো বড় প্রকল্প বাস্তবায়নের সহজ করেছে। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে যোগ দিচ্ছে পারমাণবিক বিশ্বে। বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট প্রকল্পের মাধ্যমে নতুন দিগন্তের পথে পা রেখেছে বাংলাদেশ। তবে এ সাফল্য একদিনে আসেনি। আমরা জানি স্বাধীনতার মূল লক্ষ্য প্রথম বাধাগ্রস্ত হয়েছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবার হত্যার মাধ্যমে। স্বাধীনতাবিরোধী যুদ্ধাপরাধী চক্র তারপর থেকে মেতে উঠে হত্যা, ক্যু ও ষড়যন্ত্রে। মূলত সেই ষড়যন্ত্র ছিল মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও স্বাধীনতার লক্ষ্য ধ্বংস করে দেওয়া। যে কারণে বিজয়ের এতো বছর পরেও মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য পুরোপুরি বাস্তবায়িত হয়নি। তবে এই গৌরবোজ্জ্বল অর্জন আমাদের এগিয়ে চলার অনুপ্রেরণা। আমদের বিশ্বাস- যে দেশ অর্জিত হয়েছে লাখো বীর শহীদের রক্ত আর প্রাণের বিনিময়ে, যত বাধাই আসুক না কেন; সেই দেশ তার লক্ষ্যে পৌঁছাবেই।