চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

গুগলে বাংলা অ্যাপের ভীড় বাড়লেও মান নিয়ে প্রশ্ন

এখন মোবাইল ফোনে মায়ের ভাষার সরব উপস্থিতির জানান দিচ্ছে বাংলা লেখার কিবোর্ড অ্যাপ্লিকেশন রিদমিক, বিজয় এন্ড্রয়েড কিংবা বর্ণালী। শুধু কিবোর্ড নয় স্বাস্থ্য থেকে সাহিত্য, সাধারণ জ্ঞান থেকে বিসিএস গাইড, পাঠ্যপুস্তক থেকে বাংলায় কুরআন-হাদিসের অ্যাপ স্মার্টফোনের জয়যাত্রায় যুক্ত করে চলেছে বাংলাদেশকে। গুগল প্লে স্টোরে এসব বাংলা অ্যাপের ভীড় বাড়ছে। তবে অ্যাপগুলোর মান নিয়ে প্রশ্ন জাগছে। দেশের নতুন প্রজন্ম ঠিক মতো বুঝতে শেখার আগেই স্মার্টফোন-ট্যাবের নাগাল পাচ্ছে। কিন্তু তাদের জন্য বাংলাকে নাগালে আনার, তাদের চাহিদা মেটাতে সক্ষম অ্যাপের অভাব থেকে যাচ্ছে বলে মনে করেন দেশের প্রযুক্তিজগতের সংশ্লিষ্টজনেরা।

তবে বিশাল জনগোষ্ঠীর মুখের ভাষা বাংলা দাপুটে ইংরেজির ইন্টারনেট জগতেও মাথা তুলে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা তাদের। আর দেশের মানুষের জন্য মাত্র যাত্রা শুরু করা বাংলা ভাষার অ্যাপের দুনিয়া খুব শীঘ্রই সমৃদ্ধ হবে বলেও আশা তাদের।

গুগল প্লে স্টোরে বাংলা ভাষার অ্যাপগুলোর বর্তমান অবস্থা নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেন বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অব সফটওয়্যার এন্ড ইনফরমেশন সার্ভিসেসের (বেসিস) সভাপতি মোস্তফা জব্বার।

বর্তমান অ্যাপগুলোর গুণগত মান নিয়ে সংশয় প্রকাশ করে তিনি বলেন,‘ অনেক অ্যাপ আছে। তবে মানুষের চাহিদা অনুযায়ী প্রয়োজনীয় অ্যাপ চোখে পড়ছে না। শিক্ষা, বিনোদন এবং লাইফস্টাইলের মতো ৩ টি গুরুত্বপূর্ণ খাতে বাংলাতে তেমন কোনো মানসম্পন্ন অ্যাপ নেই।’

স্মার্টফোন প্রজন্মের কাছে বাংলাকে পৌঁছে দেয়ার প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘হাতে মোবাইল-ট্যাব নিয়ে বড় হচ্ছে এই প্রজন্ম। তবে তাদের জন্য দেশীয় ভাষা-সংস্কৃতির আকর্ষণীয় কোনো অ্যাপ আমরা দিতে পারছি না বলে মনে হচ্ছে। এই দায়বদ্ধতা থেকে এই মাসেই উইনটেলের মাধ্যমে শিশুদের জন্য শিক্ষামূলক ১’শ টি অ্যাপ ছাড়া হবে। এসব অ্যাপে থাকবে ফ্রি স্কুল, বাংলা ছড়াসহ দেশজ আমেজ।’

বর্তমান সময়ে ইন্টারনেট জগতে মাতৃভাষার অবস্থান মজবুত করতে সরকারি-বেসরকারি বাংলা অ্যাপ আরও বাড়ানোর ব্যাপারে জোর দেন তিনি।

বেসিস সভাপতি বলেন,‘ সরকারি-বেসরকারি ভাবে যেসব অ্যাপ আসছে সেগুলোকে আদতে পরিকল্পিত বলা যায় না। সরকারের তথ্যপ্রযুক্তি সম্প্রসারণের শত কোটি টাকার প্রকল্পগুলোতেও বাংলা ভাষায় অ্যাপের বিষয়ে তেমন গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে না।’

তবে স্মার্টফোনের দরজা দিয়ে ইন্টারনেট দুনিয়ায় ঢোকা বাংলা অনেকদূর এগিয়ে যাবে বলে আশা করে তিনি বলেন,‘এই দেশটা তৈরি হয়েছে ভাষার ওপর। বিশ্বে বাংলা ভাষায় কথা বলা মানুষের সংখ্যা ত্রিশ কোটিরও বেশি। বিশ্বের চতুর্থ অবস্থানে থাকা মাতৃভাষাটি দিনে দিনে ইন্টারনেট পরিসরেও বিস্তৃত হবে।’

দেশের সর্বস্তরের স্মার্টফোন ব্যবহারকারীদের জন্যই বাংলা ভাষার অ্যাপের বিকল্প নেই বলে মনে করেন দেশীয় অ্যাপ নির্মাতা প্রতিষ্ঠান মাল্টিমিডিয়া কন্টেন্ট এন্ড কমিউনিকেশন্স (এমসিসি) লিমিটেডের কর্মকর্তা আশরাফ আবির।

চ্যানেল আই অনলাইনকে দেশের বাংলা অ্যাপ বাজারের বর্তমান-ভবিষ্যৎ প্রসঙ্গে তিনি বলেন,‘ ২০০৮ সালে এমসিসি কার্যক্রমের শুরু থেকেই বাংলা ভাষায় ইন্টারনেট পণ্যে জোর দিয়ে আসছে। আসলে আমাদের জন্মই বাংলা ভাষায় অ্যাপ নির্মাণের ইচ্ছা নিয়ে। দেশের সাধারণ মানুষের মুখের ভাষাকে প্রাধান্য না দিয়ে উপায় নেই। তাই বাংলা অ্যাপের বিকল্প নেই। স্থানীয়ভাবে অ্যাপ জনপ্রিয় করতে অ্যাপ হতে হবে বাংলা ভাষা নির্ভর । দেশে এখন স্মার্টফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা বেড়েছে এবং বাড়ছে। এখনই তাই বাংলা ভাষায় অ্যাপ তৈরির উপযুক্ত সময়। নতুন প্রজন্মকে বাংলায় আকৃষ্ট করতে আমরা রূপকথা, মিনা কার্টুন গেম, ছড়ার অ্যাপ তৈরি করেছি।’

বর্তমান বাংলা অ্যাপগুলোর মান নিয়ে বেসিস সভাপতির সঙ্গে একমত হলেও আবির আশা করেন সামনে সুদিন আসছে। তাই প্রতিযোগীতায় টিকতে ভালো মানের অ্যাপ নিয়েই বাজারে আসতে হবে।

তিনি বলেন,‘দেশ ডিজিটাল যুগে প্রবেশ করেছে বেশিদিন হয়নি। প্রাথমিক দিকে মান সম্মত অ্যাপ কম আসতে পারে। তবে আগামী ২-৩ বছরের মধ্যে দেশে ভালো অ্যাপ আসবে। কারণ ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে।’