২৫ নভেম্বর খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় দিবস। ১৯৯১ সালের এই দিনটিতে আনুষ্ঠানিকভাবে যাত্রা শুরু হয় বিশ্ববিদ্যালয়টির কার্যক্রম। খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় ছিল দক্ষিণপশ্চিম অঞ্চলের মানুষের প্রাণের দাবি। নানা আন্দোলন-সংগ্রাম ও চড়াই-উৎরাই পার হয়ে প্রতিষ্ঠা পায় বিশ্ববিদ্যালয়টি। আর এজন্য বিশ্ববিদ্যালয়টির প্রতি এ অঞ্চলের মানুষের রয়েছে আবেগমাখা অনুভূতি।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই আধুনিক বিশ্বের সাথে তাল মিলিয়ে মানসম্মত উচ্চশিক্ষা বিতরণ, যুগোপযোগী শিক্ষাক্রম,আধুনিক জ্ঞানচর্চা এবং দেশ পরিচালনায় বর্তমান ও আগামীকে নেতৃত্বদানে দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করে যাচ্ছে এই বিশ্ববিদ্যালয়।
২০১৬-১৭ শিক্ষাবর্ষে চালু করা হয়েছে ইউনিফাইড একাডেমিক ক্যালেন্ডার যার ফলে সকল ডিসিপ্লিনের ক্লাস একই সাথে শুরু এবং শেষ হচ্ছে। প্রতিটি ডিসিপ্লিনে রয়েছে সুনির্দিষ্ট আধুনিক ও যুগোপযোগী কারিকুলাম। এছাড়া নবীন শিক্ষকদের পাঠদান এবং গবেষণায় পারদর্শী করে তুলতে আইকিউএসি এবং সিইটিএল কাজ করে যাচ্ছে। এছাড়া বিদেশি বিভিন্ন ভাষা শিক্ষার জন্য রয়েছে মর্ডান ল্যাঙ্গুয়েজ সেন্টার, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাড়াও অন্যদের ভাষা শিক্ষার সুযোগ রয়েছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় একটি অনন্য বিদ্যাপীঠ। এটি রাজনীতিমুক্ত বিদ্যায়তন হলেও শিক্ষার্থীরা যথেষ্ঠ রাজনীতি সচেতন হয়ে গড়ে ওঠে। দেশের বিভিন্ন আপদকালীন সময় যেমন বন্যা, ঘূর্ণিঝড়ে শিক্ষার্থীরা ছুটে যায় সে সমস্ত মানুষদের সহায়তা করতে।
প্রতিবছর ২৫ নভেম্বর ‘বিশ্ববিদ্যালয় দিবস’ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় শিক্ষামেলার। সেখানে প্রতিটি ডিসিপ্লিনের জন্য একটি করে স্টল বরাদ্দ দেয়া হয়। প্রতিটি ডিসিপ্লিনের অ্যাকাডেমিক প্রোফাইল এবং সার্বিক চিত্র ডিজিটাল ব্যানারে উপস্থাপন করা হয়। যা বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি অনন্য বৈশিষ্ট্য। বিভিন্ন জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস যেমন স্বাধীনতা ও জাতীয় দিবসগুলো গুলোতে শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং কর্মকর্তাদের থাকে স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ। এছাড়া বিভিন্ন উৎসব, পার্বণও জাঁকজমকপূর্ণ ভাবে পালিত হয়। পহেলা বৈশাখ ও বসন্ত বরণ উৎসবে খুলনার মানুষের পদচারণায় মুখর থাকে সারা ক্যাম্পাস। প্রতি বছর শীতকালীন পিঠা উৎসবের আয়োজন করে শিক্ষার্থীরা সেখানে কয়েক শত পদের পিঠার সমাহার থাকে।
প্রতিষ্ঠার পর থেকেই শুধু জ্ঞানবিতরণ নয় শারীরিকচর্চায় ও পারদর্শী করে তুলতে প্রতিবছর বৃহৎ পরিসরে বার্ষিক ক্রীড়া প্রতিযোগীতার আয়োজন করা হয়। যেখানে ছেলে এবং মেয়ে শিক্ষার্থীদের জন্য থাকে ভিন্ন ভিন্ন ইভেন্ট। এক্সট্রা কারিকুলাম এ্যাকভিটিজ এর জন্য শিক্ষার্থীদের রয়েছে প্রায় ২৭টি মতো সংগঠন যেখানে বির্তক, আবৃত্তি, নাচ,গান,সহ বিভিন্ন বিষয়ে শিক্ষার্থীরা কাজ করে যাচ্ছে।
এই সাতাশ বছরে বিশ্ববিদ্যালয়ে এসেছে পরির্বতন। ৪ ঠা জানুয়ারি, ১৯৮৭ সালে খুলনা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা লাভ করলেও একাডেমিক কার্যক্রম শুরু হয় ২৫ নভেম্বর, ১৯৯১ সালে। প্রতিষ্ঠার শুরুতে চারটি ডিসিপ্লিনে ৮০ জন শিক্ষার্থী নিয়ে যাত্রা শুরু করে এর মধ্যে ১৯ জন ছাত্রী এবং ৬১ জন ছাত্র ছিল। আর সেই চারটি ডিসিপ্লিন হলো স্থাপত্য, কম্পিউটার সায়েন্স এ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং, আরবান এ্যান্ড রুরাল প্লানিং এবং ম্যানেজমেন্ট ডিসিপ্লিন পরবর্তীতে ব্যবসায় প্রশাসন ডিসিপ্লিন। বর্তমানে ২০১৭ সালে এসে ৬ টি স্কুল ও ২টি ইনিস্টিটিউটের অধীনে ২৮ টি ডিসিপ্লিন নিয়ে এগিয়ে চলেছে বিশ্ববিদ্যালয়টি। আবাসিক হল রয়েছে ৫টি এর মধ্যে ৩ টি ছেলেদের ও ২টি মেয়েদের। বর্তমান শিক্ষার্থীর সংখ্যা প্রায় সাত হাজার। শিক্ষক রয়েছেন চারশত। প্রতিষ্ঠাকালীন উপাচার্য প্রফেসর ড. গোলাম রহমান আর বর্তমানে নবম উপাচার্য হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন প্রফেসর ড. মোহাম্মাদ ফায়েক উজ্জামান। আগামী দিনে বিশ্ববিদ্যালয়টি আরও বহুদূর এগিয়ে যাওয়ার প্রত্যাশায় শুভকামনা রইল।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)