‘নান্দনিক চলচ্চিত্র, মননশীল দর্শক, আলোকিত সমাজ’-স্লোগানে ‘১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’-এর পর্দা উঠেছে শুক্রবার ১২ জানুয়ারি। উৎসব চলবে ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত। ১৭ই জানুয়ারি ২০১৮, বুধবার, শাহবাগ পাবলিক লাইব্রেরির মূল মিলনায়তনে বিকাল সাড়ে পাঁচটায় এই উৎসবে দেখানো হয়েছে জয়া আহসান অভিনীত ও আকরাম খান পরিচালিত ছবি ‘খাঁচা’। ছবিটি দেখে এসে কবি কাজল শাহনেওয়াজ তার ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দিয়েছেন। স্ট্যাটাসটি হুবহু তুলে দেয়া হলো-
‘পুরো সিনেমাটা ভরা শব্দ! সারাক্ষণ পাখি ডাকতেছে, বাসন-কোসন জুতার খসখসানি, হাঁপানির শব্দ, আর খানিক পরপর অনবরত রিপিট করা ঢং বিহীন ঘুণপোকার অদম্য ক্রন্দন!
আকরাম খান পরিচালিত চলচ্চিত্র ‘খাঁচা’ দেখছিলাম। ১৬তম ঢাকা আন্তর্জাতিক ফিল্ম ফেস্টিভ্যালে সুযোগ পাওয়া গেল দেখার।
আকরাম ছিল আমার কাছে কবি পরিচয়ে, সেই ১৯৮৯ সাল থেকে। ওর সিনেমা তাই কী আলাদা মাত্রা বহন করছে সেই জন্য? কিন্তু তাই বা কেন! কী মনোযোগেই না ‘খাঁচা’ বানানো। সাহিত্যের গল্প তো আসলে বাস্তবের। অতি বাস্তবের। তার যে রয়েছে এতো খুঁটিনাটি, এত ছোট ছোট বিষয়ের অন্তর্ভেদী দৃশ্যগ্রাহ্যতা, অবিরাম ধ্বনিমণ্ডলির সিনেমা বলার শক্তি, আকরামের
সিনেমা-চোখ তা আমাকে দেখাল।
দেশভাগের পরের বেদনা পূর্ববাংলা থেকে আর কত নির্মম ভাবে উপস্থাপনা সম্ভব? একটা পরিবারের বেদনা আকরাম সংগ্রহ করেছে হাসান আজিজুল হকের গল্প থেকে। কিন্তু তা সমস্ত পৃথিবীর বোধগম্য বেদনা হয়ে যাওয়াটা যেন আকরাম ও তার টীম সৃজন করল।
সব কথা এখন বলা গেল না। তবে শেষ মুহূর্তের গল্পটা মনে করা যাক। সম্পূর্ণ অসার্থক ব্যক্তিটি পুরানো আমলের শ্যাওলা পড়া ছাদে রাতের বেলা চরম সেতার বাজাচ্ছে। ততক্ষণে সেই বিরক্তিকর ঘুণপোকা বিলোপ হয়ে গেছে। বউটা তার আঞ্চলিক ভাষার ভিতরে নরম হৈয়া আশা নিয়া ভেসে থাকত, হঠাৎ শে স্তব্ধ হয়ে গেল। …। তারপর হারিকেন উল্টাইয়া আগুন বানাইয়া সেইখানে ঝাপ দিল। আর ব্যক্তিটি তখনো বাজাচ্ছিল নিখুঁত মানভাষায় সেতারে বাগেশ্রীরাগের ঝংকার, জীবনে শেষ বারের জন্য, নিশ্চিত।
একটা মোমেন্টাম। এক বালতি এড্রিনালিন! মনটা বেদনায় ঘুণপোকার চেয়েও আর্ত হয়ে যায়!’