বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে ‘প্রায়োগিক গবেষণা কেন্দ্র’ (Adaptive Research & Development Center) স্থাপন করা হচ্ছে। চীন সরকারের অর্থায়নে প্রতিকূল পরিস্থিতি সহ্য করার ক্ষমতাসম্পন্ন ফসলের জন্য গবেষণা কেন্দ্রটি পরিচালিত হবে। এতে সহায়তা করবে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশন (বিএডিসি)।
আজ সোমবার রাজধানীর বিএডিসি কৃষি ভবনে এ সংক্রান্ত এক চুক্তিপত্র স্বাক্ষরিত হয়। এতে চীন সরকারের ‘চায়না ন্যাশনাল সিড গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেড’ এর পক্ষে ভাইস প্রেসিডেন্ট বিংচুয়ান তিয়ান এবং বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন কর্পোরেশনের (বিএডিসি) পক্ষে চেয়ারম্যান মো. নাসিরুজ্জামান স্বাক্ষর করেন।
চুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে জানানো হয়, খরা প্রবণ উত্তরাঞ্চল এবং দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্ততার কারণে ১০ লাখ হেক্টর জমিতে প্রত্যাশিত ফলন মিলছে না। কিন্ত বিস্তৃত এ এলাকায় উন্নতমানের খরা ও লবনাক্ত সহিষ্ণু জাতের চারার মাধ্যমে ফসল চাষ করতে পারলে বাংলাদেশের খাদ্য নিরাপত্তা আরো নিশ্চিত হবে। জনবহুল বাংলাদেশে অল্প জমিতে অধিক ফলন উৎপাদনের মাধ্যমে বিশ্বে নজির সৃষ্টি করবে।
কৃষি বিজ্ঞানীরা বলছেন, বর্তমানে দেশের খরা প্রবণ ১ বিঘা জমিতে ৭ থেকে ১০ মণ এবং লবনাক্ত জমিতে ৫ থেকে ৮ মণের বেশি ধান উৎপাদন হয়না। সেক্ষেত্রে খরা ও লবণ সহিষ্ণু উন্নত জাত চাষ করা হলে বিঘা প্রতি গড়ে ২০ থেকে ৩৫ মণ ধান উৎপাদন সম্ভব। এরইমধ্যে (‘প্রায়োগিক গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপনের আগে) উন্নতমানের ৫৬টি জাতের শস্য গত দেড় বছর ধরে মাঠ পরীক্ষায় সফল হয়েছে।
বিএডিসির কর্মকর্তারা জানান, ‘প্রায়োগিক গবেষণা কেন্দ্র’ স্থাপনের জন্য দর্শনার (যশোর) অদুরে দত্তনগর ফার্মে এ কেন্দ্রের প্রধান কার্যালয় স্থাপিত হবে। থাকবে কেন্দ্র সংলগ্ন গবেষণা মাঠও। এজন্য এশিয়ার সর্ববৃহৎ এ খামারে ৩৭ বিঘা জমি বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে এ কাজে আগামী দুই বছরে ১৬০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করবে চীন সরকার। এই বিনিয়োগের ফলে খরা ও লবনাক্ত জমিতে ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি উন্নত জাত উদ্ভাবন, দেশীয় গবেষক ও কৃষকদের ট্রেনিং, ফসলের রোগ প্রতিরোধে কার্যকর ভুমিকাসহ নানাখাতে বিশেষ কার্যকরী সহায়তা মিলবে।
চায়না ন্যাশনাল সিড গ্রুপ কোম্পানী এর বাংলাদেশী কো-পার্টনার ‘গোল্ডেন বার্ন কিংডম প্রাইভেট লিমিটেড’ (এইক) এর পরিচালক, শাহদাব আকবর বলেন, প্রায়োগিক গবেষণা কেন্দ্র স্থাপনের মাধ্যমে বাংলাদেশের কৃষি আরো সমৃদ্ধ হবে। এ উদ্যোগ কৃষির উন্নয়ন, স্থিতিশীল খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনসহ বৈশ্বিক জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব ও কৃষিক্ষেত্রে নানা ঝুঁকি ও হুমকি মোকাবেলা করবে।
গবেষণা কেন্দ্রটি বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলেও মনে করেন তিনি।