চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

ক্ষমতার আওয়ামী লীগ, বিরোধী দলে আওয়ামী লীগ

বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ৬৮ বছরের ইতিহাসে দলটি কখনও ক্ষমতায় থেকেছে, আবার বিরোধী দলেই কেটেছে বেশিরভাগসময়। পথ চলার এই দীর্ঘ পরিক্রমায় ক্ষমতায় থেকে দেশ পরিচালনার পাশাপাশি বিরোধী দলে থেকে জনগণের কল্যাণে দেশ পরিচালনার পথ তৈরি করেছে আওয়ামী লীগ। কিন্তু কেমন ছিল আওয়ামী লীগের ক্ষমতায় এবং ক্ষমতার বাইরে থাকার সেই পথ পরিক্রমা?

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক এবং রাজনৈতিক বিশ্লেষক রোবায়েত ফেরদৌস চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ক্ষমতায় থাকা আওয়ামী লীগের চেয়ে বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগ বেশি সফল। কেননা আওয়ামী লীগের মধ্যে বিদ্রোহী শক্তি প্রবল। তাই তারা গণমানুষের স্বার্থে যেকোন সরকারের অন্যায়ের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে সফল হয়।

‘তবে ক্ষমতায় গেলে এই বিদ্রোহী শক্তিকে আবার তারা অগণতান্ত্রিক বা স্বৈর কায়দায় দমন করতে চায়। এমনটা করতে গিয়ে আওয়ামী লীগের নেতারা দুর্নীতিতে ও দমন পীড়নে জড়িয়ে পড়ে। দেশ পরিচালনার জন্য যে ধীরস্থির ও ঠাণ্ডা মাথা দরকার, আওয়ামী লীগে তা খুবই কম।’

এক দার্শনিকের বক্তব্য উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘ঘোড়া চালিয়ে রাজ্য জয় করা সোজা, কিন্তু ঘোড়া থেকে নেমে রাজ্য পরিচালনা করা কঠিন। সেই জায়গাতেই আওয়ামী লীগের সমস্যা আছে। সেখানে রাজা হয়ে অন্যকে দমন করার কৌশলটা যতটা প্রয়োগ করতে পারে রাজ্য শাসন করার বিষয়টা ঠিক ততটা পারে না।’

চিররঞ্জন সরকার

আওয়ামী লীগের এমন ভূমিকার বিষয়ে একমত লেখক ও উন্নয়নকর্মী চিররঞ্জন সরকার।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, তাদের কাছে গণমানুষের প্রত্যাশা বেশি। এছাড়া যারা অন্তরে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধারণ করেন, তাদের একমাত্র ভরসা আওয়ামী লীগ। সেই প্রত্যাশার চাপ অনেক সময় তারা সামলাতে পারে না। বিরোধী দলে থাকলে তারা নিজেদের ছোট দাবিকেও জনগণের অনেক বড় দাবি হিসেবে তুলে ধরতে পারে, কিন্তু ক্ষমতায় গেলে তারা দল এবং ক্ষমতাকে আলাদা করে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না।

‘একটি পুরনো গণতান্ত্রিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগে যেসব মূল্যবোধ থাকা দরকার, ক্ষমতায় থাকলে সেসব জায়গায় ব্যাপক ঘাটতি দেখা দেয়। এর ফলে তাদের সাফল্যগুলো ব্যর্থতার কাছে ম্লান হয়ে যায়। এসব শক্তি তারা সুশৃঙ্খলভাবে ব্যবহার করলে দলেরও কল্যান হতো, রাষ্ট্রেরও কল্যান হতো।’

তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. শান্তনু মজুমদার এই দুজনের সঙ্গে একমত নন।

তিনি মনে করেন, আওয়ামী লীগ কোন চ্যারিটি নয়, এটা রাজনৈতিক দল। ফলে তার লক্ষ্য হবে ভোটের মাধ্যমে ক্ষমতায় যাওয়া। আজীবন বিরোধী দলে থাকা কোন রাজনৈতিক দলের লক্ষ্য হতে পারে না। আর জনগণের সঙ্গে কাজ করলে সেখানে অনেকের অনেক অভিযোগ থাকা স্বাভাবিক।

ড. শান্তনু মজুমদার

‘বাংলাদেশের রাজনীতি দুটি ধারায় বিভক্ত। এর মধ্যে একটি আওয়ামী লীগ, আর অন্যটি এন্টি আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগকে সকল পরিবর্তনের রূপকার হিসেবে আমরা দাবি করি। কিন্তু আমরা নিশ্চয়ই আশা করতে পারি না যে তারা তাদের ভোটব্যাংক নষ্ট করবে। বিএনপিকেও ভোটের কথা ভেবে নানান কিছু ঠিক রাখতে হয়। নানান কথা বলতে হয়।’

তিনি বলেন: কিছু কিছু সমালোচনা যেগুলো হওয়া উচিত বুদ্ধিজীবীদের দিকে, সেটাই হচ্ছে আওয়ামী লীগকে কেন্দ্র করে। কিন্তু একটি রাজনৈতিক দলকে দল হিসেবেই দেখা উচিত। আওয়ামী লীগ রাজনৈতিক দল, ভোটই তাদের প্রথম শর্ত। তাই বর্তমানে আমরা যেসব দেখছি সেগুলো চলছে এবং হয়তো সবসময় তা চলবে। কোন রাজনৈতিক দল কখনোই বলবে না আমার ভোট দরকার নেই, মতাদর্শই আমার মূল।

‘আওয়ামী লীগ যখন শফি হুজুরের সঙ্গে আলোচনায় বসে কিংবা ভাস্কর্য সরিয়ে নেয় সেটা অবশ্যই হতাশার এবং অগণতান্ত্রিক। তবে, দলের জায়গা থেকে তারা হয়তো বলবেন যে তারা তাদের ভোটব্যাংক রক্ষা করছেন।’

দুর্নীতি, সুশাসন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই তিন ক্ষেত্রে দলটিকে ব্যাখ্যা করেন শান্তনু মজুমদার। বলেন, দুর্নীতি, সুশাসন ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা এই তিন ক্ষেত্রে আওয়ামী লীগের পারফর্মেন্স অন্যান্য যেকোনো দলের থেকে বেশি হওয়া উচিত কারণ তারা মুক্তিযুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল। ৮ বছরের ক্ষমতায় যদি তারা মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নের কথা বলে তাহলে সুশাসনের ক্ষেত্রে তাদের ইন্ডিকেটর আরো উপরে যাওয়ার কথা ছিলো। দুর্নীতির বিস্তার রোধ হওয়া উচিত ছিলো। মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আরো বিস্তার ঘটা উচিত ছিলো। কিন্তু বাস্তবে তেমনটা ঘটেনি।