চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কোথায় আমাদের সুশীল সমাজ?

যারা প্রগতির সঙ্গে থাকেন, যারা দেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবার কথা বলেন, যারা মানুষের কথা বলেন সর্বোপরি সমাজের কথা ভাবেন তারাই সুশীল সমাজ। তারা কখনো নিজের স্বার্থের কথা ভাবেন না। তারা নিজের জ্ঞান-গরিমা দিয়ে সমাজকে পরিবর্তন করার কথা বলেন। তারা দেশের সংস্কৃতিকে সমুন্নত রাখার জন্য, মানুষকে সচেতন করতে নানা রকমের লেখা লিখে থাকেন। মানুষকে অন্ধকার পথ থেকে আলোর পথের সন্ধান দেন। তারাই সর্বজন শ্রদ্ধেয় ব্যক্তিত্বে পরিণত হন। তাদেরকে কখনো অর্থের বিনিময়ে বা কোনো কিছুর বিনিময়ে কেনা যায় না এমনটাই জেনে এসেছি এবং এই জানাটাই সত্য বলে মানি।

আমাদের দেশেও এ রকম সুশীল সমাজ আছেন। যাদের জ্ঞান-গরিমার কথা আমরা জানি। সমাজকে এগিয়ে নিতে যাদের ভূমিকা কম না। যারা সমাজ ও রাষ্ট্র থেকে কোনো কিছুর আশায় কলম হাতে নেন না। নিজের বিবেক ও আত্মোপলদ্ধি থেকে সমাজের জন্য কিছু করেন। সমাজ তাদের অবদানের কথা জেনে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি দেন। তবে কেউ কেউ সেই স্বীকৃতির জন্য কাজ করেন না। আবার কেউ স্বীকৃতির জন্যই লোক দেখানো কাজ করে থাকেন, এমনটাও শোনা যায়।

যে কথাটি সর্বজনগ্রাহ্য, সেটি হচ্ছে স্বীকৃতিই ধরা দেয় কাজের গুণে, স্বীকৃতির পেছনে অযথা ছুটে লাভ নেই।
আর যারা প্রকৃত পণ্ডিতজন তারা নিরন্তর কাজ করে যান নীরবে। কোনা দলাদলিতে থাকেন না। কোনো সরকারের চাটুকারিতায় মেতে থাকেন না। কিংবা সরকার খুশি হবেন এমন কাজ করে কাঙালের মত তাকিয়েও থাকেন না।

সম্প্রতি আমাদের দেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় হচ্ছে সরকার-হেফাজত সমঝোতা। এ সমঝোতার বিষয়টি দেশের বাইরেও কোথাও আলোচিত। এ কারণে সুশীল সমাজ বিশেষ করে প্রগতিশীল মানুষ ও মুক্তিযুদ্ধের ধারকবাহকেরা প্রতিবাদী হয়ে উঠছেন।

হেফাজতের কথামত পাঠ্যপুস্তকেও পরিবর্তন আনা হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। কোনটা ভাস্কর্য আর কোনটা মূর্তি সেটা না বুঝেই যারা সবকিছুকে মূর্তি মনে করছে তাদেরকে খুশি করার চেষ্টা করা হচ্ছে।

আর এতসব কিছুর পেছনে যে কারণটি গুরুত্বপূর্ণ সেটি হচ্ছে ক্ষমতা। ক্ষমতায় টিকে থাকতেই নাকি এতসব কিছু করা হচ্ছে, ধরে নিই এটা নিন্দুকেরা বলে বেড়াচ্ছে।

কিন্তু দেশের এই অবস্থার সময় কোথায় আমাদের সেই সুশীল সমাজ? যারা আমাদেরকে প্রগতির কথা বলেন। বিবেকবান হতে বলেন। সাধারণ মানুষের সঙ্গে থাকার কথা বলেন। তারা কেন সরকারের এই হেফাজত প্রেমকে মেনে নিচ্ছেন? কেন প্রতিবাদ করছেন না? কেন বাঙালির ঐতিহ্যকে ভুলুণ্ঠিত করার জন্য একের পর এক ফতোয়া দিয়ে যাচ্ছেন যারা তাদের থেকে দূরে থাকার পরামর্শ দিচ্ছেন না সরকারকে। কেন তাদের এত দ্বিধা, সংকোচ। কোথায় বাধা তাদের?

আমরা সাধারণ মানুষ তাঁদের কাছ থেকে কি শিখব? দেশকে যারা পেছনের দিকে নিয়ে যেতে চায় তাদের প্রতিহত করার জন্য কেন তারা সবাইকে প্রতিবাদী হবার আহ্বান জানাবেন না। কেন তারা সরকারকে বোঝাবেন না, যে ক্ষমতায় টিকে থাকার জন্য তারা আজ যা করছে একদিন তা গলার কাঁটা হয়ে বিঁধবে। সেই কাঁটা পুরো জাতিকে ক্ষতবিক্ষত করবে।
সেই কাঁটা পুরো জাতিকে ক্ষতবিক্ষত করবে।

আমাদের সেই সুশীল সমাজ কোথায়? যাদের মুকুটে বর্তমান সরকারের স্বীকৃতির একেকটি পালক গোঁজা। তারা কেন এই দুঃসময়ে চুপ করে আছেন। নাকি তারাও চান বর্তমান সরকার ক্ষমতায় টিকে থাকলে আরো অনেক স্বীকৃতির পালক মুকুটে গোঁজা যাবে। সেই লোভে তারা চুপ করে আছেন। যদি তাই হয় তবে সেটা হবে এ জাতির জন্য দুর্ভাগ্যের ব্যাপার। সেটা এই জাতির আসাম্প্রদায়িক চেতনার মর্মমূলে পেরেক ঠোকাই হবে। আমাদের সাম্প্রদায়িক শক্তি এর ফলে আরো উৎসাহিত হবে।

এখনও সময় আছে সুশীল সমাজের প্রতি আহ্বান জানাই, আসুন পথে নেমে, আমরাও আপনাদের পাশে দাড়িয়ে প্রতিবাদ করি, অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ গড়ে তোলার আলোর পথে কোন অপশক্তিকে দাঁড়াতে দেব না। আমার বাংলাদেশ হবে অন্ধকারমুক্ত, অসাম্প্রদায়িক চেতনার আলোয় আলোকিত।

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)