বাংলাদেশের পপসম্রাটখ্যাত কিংবদন্তি শিল্পী ‘গুরু’ আজম খানের পঞ্চম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। দীর্ঘদিন ক্যান্সারে ভুগে এই গুণী শিল্পী ২০১১ সালের ৫ জুন ঢাকার সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালে মৃত্যুবরণ করেছিলেন।
‘বাংলাদেশ’, ‘ওরে সালেকা ওরে মালেকা’, ‘আলাল ও দুলাল’সহ নানা বহুল জনপ্রিয় গানের শিল্পী আজম খান ছিলেন একাধারে গীতিকার, সুরকার ও গায়ক৷ বাংলাদেশে পপ সংগীতের অন্যতম পথপ্রদর্শক তিনি। পশ্চিমা ধাঁচের পপগানে দেশজ বিষয় সংযোজন করে আজম খান গানের জগতে এক নতুন ধারা তৈরি করেন। যা সহজেই যুব সমাজকে আকৃষ্ট করে।
শৈশব থেকেই নিজ আগ্রহ ও মায়ের অনুপ্রেরণায় তিনি নিয়মিত সংগীতচর্চা অব্যাহত রাখেন। আজম খানের সংগীত জীবনের শুরু ষাটের দশকে। ১৯৬৯ সালের গণঅভ্যুত্থানের সময়ে তিনি ক্রান্তি শিল্পী গোষ্ঠীর সক্রিয় সদস্য ছিলেন এবং পাকিস্তানী শাসকগোষ্ঠীর শোষণের বিরুদ্ধে গণসঙ্গীত প্রচার করেন। ১৯৭১ সালের পর লাকী আখন্দ, হ্যাপী আখন্দ, নিলু, মনসুর এবং সাদেককে নিয়ে গড়ে তোলেন ব্যান্ডদল ‘উচ্চারণ’।
অংশ নিয়েছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধে। মাত্র ২১ বছর বয়সে যুদ্ধে অংশ নেন আজম খান। মুক্তিযুদ্ধের সময় ঢাকায় সংঘটিত কয়েকটি গেরিলা অভিযানে তিনি অংশ নেন। আজম খান ছিলেন দুই নম্বর সেক্টরের একটা সেকশনের ইনচার্জ। তার নেতৃত্বে সংঘটিত ‘অপারেশন তিতাস’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য।
১৯৭২ সালে বিটিভিতে আজম খানের ‘এতো সুন্দর দুনিয়ায় কিছুই রবে না রে’ ও ‘চার কালেমা সাক্ষী দেবে’ গান দুইটি সরাসরি প্রচার হলে দেশব্যাপী ব্যাপক প্রশংসা আর তুমুল জনপ্রিয়তা অর্জন করেন। ১৯৭৪ সালে ‘বাংলাদেশ (রেললাইনের ঐ বস্তিতে)’ গান গেয়ে সারা দেশব্যাপী হৈ-চৈ ফেলে দেন আজম খান। বন্ধু ইশতিয়াকের পরামর্শে সৃষ্টি করেন একটি এসিড-রক ঘরানার গান ‘জীবনে কিছু পাবো না’। বাংলা গানের ইতিহাসে এটিই প্রথম হার্ডরক সংগীত বলে বিবেচিত।
গানের জগত ছাড়াও আজম খান অভিনয় জগতে একটি বাংলা সিনেমায় অভিনয় করেছেন। এ ছাড়াও তিনি বেশ কিছু বিজ্ঞাপন চিত্রেও মডেল হয়েছিলেন।
খেলাধুলার প্রতিও ছিলো তার আগ্রহ, ১৯৯১—২০০০ সালে তিনি গোপীবাগ ফ্রেন্ডস ক্লাবের পক্ষ হয়ে প্রথম বিভাগ ক্রিকেট খেলেছেন।
স্বাধীনতাযুদ্ধে এবং সংগীতে বিশেষ অবদানের জন্য তিনি অনেক সম্মাননা ও পুরস্কার লাভ করেন। এর মধ্যে হলিউড থেকে ডিস্কো রেকর্ডিংয়ের সৌজন্যে ১৯৯৩ সালে ‘বেস্ট পপ সিঙ্গার’ অ্যাওয়ার্ড, টেলিভিশন দর্শক পুরস্কার ২০০২, কোকাকোলা গোল্ড বোটলসহ লাইফ টাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড অন্যতম।
আজম খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আজিমপুরের এক সরকারি কোয়ার্টারে। তার আসল নাম মোহাম্মদ মাহবুবুল হক খান। বাবা আফতাব উদ্দিন খান ছিলেন সরকারের সচিবালয়ের একজন উর্ধ্বতন কর্মকর্তা, মা জোবেদা বেগম একজন সংগীত শিল্পী। জন্ম-জীবনকাল-যুদ্ধ-কাজ-মৃত্যু সবমিলিয়ে তিনি পুরো জীবনটাই ঢাকায় কাটিয়েছেন।
স্ত্রী সাহেদা বেগমকে নিয়ে সুখের সংসারে তিনি ছিলেন এক ছেলে এবং দুই মেয়ের জনক। প্রথম সন্তানের নাম ইমা খান এবং দ্বিতীয় সন্তানের নাম হৃদয় খান এবং তৃতীয় সন্তানের নাম অরণী খান।