আর মাত্র দশ দিন পর ১ বছর পূর্ণ হবে শিশু মিথিলার। বাবা স্থানীয় যুবলীগ (মাদারীপুর) নেতা লিটন মুন্সী আর মা মাফিয়া আক্তার। লিটন-মাফিয়া দম্পতির প্রথম সন্তানের জন্মদিন ঘিরে তাদের আয়োজন কমতি ছিলো না। শিশু মিথিলার জন্য কাপড় কিনতে ৯দিন আগে ঢাকা এসেছিলেন লিটন। কিন্তু তার আর বাচ্চার কাপড় নিয়ে বাড়ি ফেরা হলো না। ঘাতকের বুলেট এবং গ্রেনেডের স্প্রিন্টার কেড়ে নিলো লিটনের প্রাণ। যে লিটনের বাড়িতে ফেরার কথা ছিলো বাচ্চার কাপড় হাতে করে, তাকে ফিরতে হলো লাশ হয়ে।
লিটনের বাবা আইয়ু্ব আলী মুন্সী বলেন: আওয়ামী লীগের মিছিল দেখলে লিটনকে আটকে রাখা যেতো না। সব সময় সোচ্চার ছিলো শোষিত বঞ্চিত মানুষের পক্ষে। তাইতো, আগেই বাড়ি ফেরার কথা থাকলেও-আওয়ামী লীগের সমাবেশের খবরে ঢাকাতেই থেকে যায়। কিন্তু কী হলো? আমার ছেলেকে বাড়িতে ফিরতে হলো লাশ হয়ে। আমার ছেলের তো কোন দোষ ছিল না। আমার একমাত্র ছেলেকে কবরে শুইয়ে রেখে কিভাবে বেঁচে আছি বলতে পারেন?
২০০৪ সালের ২১ আগস্ট বঙ্গবন্ধু এভিনিউয়ে আওয়ামী লীগের সমাবেশে গ্রেনেড হামলার ঘটনায় নিহত হন মোট ২৪ জন আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী। আর শরীরে ঘাতক গ্রেনেডের স্প্রিন্টার নিয়ে এখনও বেঁচে আছেন প্রায় ৫ শতাধিত মানুষ।
আক্ষেপ ঝরলো লিটনের মা এবং স্ত্রীর কণ্ঠেও। মা আছিয়া বেগম আক্ষেপ করে বলেন: আমার বাবা (লিটন) বলেছিল, মা তোমার পেটের পাথর অপারেশন করে আনবো। মাত্র ১০ দিন অপেক্ষা করো। ৯ দিনের মাথায় বাবা লাশ হয়ে ফিরেছে।
আগামী ১ সেপ্টেম্বর মিথিলার বয়স ১৪ বছর পূর্ণ হবে। ২০০৪ সালে মিথিলার প্রথম জন্মদিন উপলক্ষে জামা-কাপড় নিয়ে তার বাবার মাদারীপুর শহরের ফেরার কথা ছিল। মিথিলার জন্মদিনের পোষাক আর তার আনা হয়নি। মিথিলা বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে জানতে চাইতো, আমার বাবা কোথায়? আমি কোনো উত্তর দিতে পারিনি।কথা বলতে বলতেই চোখ গড়িয়ে পানি নেমে আসছিলো মাফিয়া আক্তারের স্ত্রী মাফিয়া আক্তারের।
ইতিহাসের বর্বরচিত এ গ্রেনেড হামলার ১৩ বছর আজ। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের এই দিনে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে তখনকার বিরোধীদলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে হত্যার উদ্দেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
হামলায় শেখ হাসিনাসহ আওয়ামী লীগের শীর্ষ স্থানীয় নেতারা অল্পের জন্য প্রাণে বেঁচে যান। কিন্তু গ্রেনেডের আঘাতে নিহত হন দলের মহিলা বিষয়ক সম্পাদক ও প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভী রহমানসহ ২৪ জন। আহত হন আরো প্রায় ৫শতাধিক। যাদের অনেকেই চিরতরে পঙ্গু হয়ে গেছেন।
ওই হামলায় নিহতরা হলেন- আইভি রহমান, প্রধানমন্ত্রীর ব্যক্তিগত নিরাপত্তারক্ষী ল্যান্স করপোরাল (অব:) মাহবুবুর রশীদ, আবুল কালাম আজাদ, রেজিনা বেগম, নাসির উদ্দিন সরদার, আতিক সরকার, আবদুল কুদ্দুস পাটোয়ারি, আমিনুল ইসলাম মোয়াজ্জেম, বেলাল হোসেন, মামুন মৃধা, রতন শিকদার, লিটন মুনশী, হাসিনা মমতাজ রিনা, সুফিয়া বেগম, রফিকুল ইসলাম (আদা চাচা). মোশতাক আহমেদ সেন্টু, মোহাম্মদ হানিফ, আবুল কাশেম, জাহেদ আলী, মোমেন আলী, এম শামসুদ্দিন এবং ইসাহাক মিয়া।