চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কেমন আছেন অগ্নিদগ্ধ সাদিয়া?

নাকের নল খুলে ফেলা হয়েছে। এখন মুখেই খেতে পারেন সাউথ এশিয়ান গেমসে স্বর্ণজয়ী শুটার সাদিয়া সুলতানা। শরীরের পুড়ে যাওয়া অংশ থেকে ধীরে ধীরে খুলে ফেলা হচ্ছে ব্যান্ডেজ। অস্ত্রোপচার হচ্ছে পর্যায়ক্রমে। হাঁটাচলা করতেও সমস্যা হচ্ছে না। এমনটা দেখে স্বস্তি পাচ্ছেন সাদিয়ার আপনজনরা। কিন্তু মাথার উপর তাদের চিকিৎসা খরচ যোগানোর চিন্তা!

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটের কেবিনে সাদিয়াকে থাকতে হবে আরও তিন মাস। নিরবচ্ছিন্নভাবে চিকিৎসা চললে পাওয়া যাবে আগের সাদিয়াকে। সুস্থ-সবলভাবে মেয়েকে ফিরে পেতে চায় পরিবার। চিকিৎসার পুরো প্রক্রিয়া শেষ করতে লাগবে আরও অন্তত লাখ পাঁচেক টাকা। যা যোগাড় করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে সাদিয়ার স্বজনদের। কিন্তু টাকা জোগাড়ে যত কষ্টই হোক, সাদিয়াকে সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলতে শেষ সম্বলের সবটুকু নিংড়ে দিতেও প্রস্তুত তারা।

চট্টগ্রামের এমএ আজিজ স্টেডিয়াম সংলগ্ন সাদিয়াদের দোকানটি বিক্রি করে দেওয়ার পরিকল্পনা চলছে। যে দোকানের ভাড়া বাবদ ২০ হাজার টাকা আসে প্রতি মাসে। সাদিয়ার বড় ভাই সাজ্জাদ উল্লাহ জানালেন, ‘ওষুধ, খাওয়া-দাওয়া, কেবিন খরচ, সব মেলালে প্রতিদিন সাদিয়ার পেছনে ব্যয় ৬ হাজার টাকার মত। এভাবে আরও ৯০ দিন চলবে। যে কারণে দোকানটি বিক্রি করে দেয়ার চিন্তা করছি আমরা।’

ঢাকায় এনে প্রথম দুই সপ্তাহ সাদিয়াকে রাখা হয়েছিল হাই-ডিপেন্ডেন্সি ইউনিটে (এইচডিই)। যেখানকার প্রতিদিনের খরচ ২০ হাজার টাকা। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সেই খরচ না নেয়ায় বড় বাঁচা বেঁচেছেন স্বর্ণজয়ীর পরিবার!

অগ্নিদগ্ধ সাদিয়াকে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকা মেডিকেলে আনার পর দেখতে এসেছিলেন শুটিং ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ইন্তেখাবুল হামিদ অপু। ৫০ হাজার টাকা আর্থিক সহায়তা দিয়ে গেছেন। যা দিয়ে সপ্তাহখানেক চলেছে। তিনি সাদিয়ার স্বজনদের কয়েকটি ফোন নাম্বার দিয়ে গেছেন, বলে গেছেন সমস্যায় পড়লে যোগাযোগ করতে।

সাজ্জাদ উল্লাহ বলছিলেন, ‘ফেডারেশন থেকে কিছু ফোন নাম্বার দিয়ে গেছে। বলেছে যোগাযোগ করতে। তারা নিজে থেকে আর কখনও যোগাযোগ করেনি। একটা জিনিস কী জানেন, আমরা তো উচ্চমধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত না। এখন যদি সাদিয়ার চিকিৎসা খরচ চালাতে তাদের খুঁজি কেমন লাগে! আমরা নিজেরাও তো খেলোয়াড়। আমাদের আত্মসম্মানে তো বাধে। এর চেয়ে দোকানটা বিক্রি করে দেয়াই ভাল।’

ফেডারেশন কর্মকর্তারা খোঁজ না নিলেও সাদিয়ার সতীর্থরা এসে দেখে যাচ্ছেন নিয়মিত। হাসপাতালে প্রতি সপ্তাহে এসে সাদিয়াকে সাহস দিয়ে যাচ্ছেন শুটার রত্না, হিমেলরা।

সাদিয়া সুলতানা

সাদিয়ার বাবা সৈয়দ সরওয়ার আলম ৩৪ বছর কাজ করেছেন চট্টগ্রাম জেলা ক্রীড়া সংস্থায়। গড়ে তুলেছেন নিখাদ এক ক্রীড়া পরিবার। সাদিয়ার তিন ভাই ব্যাডমিন্টন খেলোয়াড়। বড় ভাই সৈয়দ সাজ্জাদ উল্লাহ ২০১২ সালের বাংলাদেশ গেমসে ব্যাডমিন্টনে মিশ্র দ্বৈতে সোনা জিতেছেন, খেলা ছেড়ে কোচিংয়েও নাম লিখিয়েছেন। মেজো ভাই সৈয়দ সিবগাত উল্লাহ জাতীয় স্কুল ক্রীড়ায় ব্যাডমিন্টনে চ্যাম্পিয়ন হয়েছেন টানা দুবার। চতুর্থ শ্রেণি পড়ুয়া ছোটভাই সৈয়দ সাফাই উল্লাহও ব্যাডমিন্টন খেলেন। সাদিয়ার ছোট বোন সৈয়দা সায়েমা সুলতানা ২০১২ সালে জাতীয় প্রতিযোগিতায় ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে জুনিয়র বিভাগে ব্রোঞ্জজয়ী।

আর সাদিয়া ২০১০ সালে দিল্লিতে কমনওয়েলথ শুটিংয়ে উড়িয়েছেন বাংলাদেশের পতাকা। ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে শারমিন আক্তার রত্নার সঙ্গে জুটি গড়ে দেশকে এনে দিয়েছেন দলগত সোনা। ২০১০ সালেই এসএ গেমসে ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে দলগত সোনার গর্বিত অংশীদার, ব্যক্তিগত ইভেন্টে রুপার পদক তুলেছেন গলায়।

পরে ২০১৩ সালের এপ্রিলে বাংলাদেশ গেমসে সোনা জেতেন ১০ মিটার এয়ার রাইফেলে। সাদিয়ার বড় ভাই আক্ষেপ করেই বলছিলেন, ‘এমন শুটার কী আর এসেছে বাংলাদেশে? সামনেও ওর সম্ভাবনা আছে ভাল করার। দেশকে আরও কিছু দেয়ার।’

গত ১৫ অক্টোবর চট্টগ্রামে নিজ বাসায় খাবার গরম করতে গিয়ে অগ্নিদগ্ধ হন স্বর্ণকন্যা সাদিয়া। শুরুতে স্থানীয় একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ২১ অক্টোবর তাকে নিয়ে আসা হয় ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইন্সটিটিউটে। এখন স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে যুদ্ধটা করে যাচ্ছেন। সঙ্গী কেবল পরিবার-পরিজন।