চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কেন এই ব্যাটিং বিপর্যয়?

ক্রাইস্টচার্চ টেস্টে ৯ উইকেটের বড় হার দিয়ে নিউজিল্যান্ড সফর শেষ করেছে বাংলাদেশ। চতুর্থ দিনে ব্যাট করতে নেমে মাত্র ১৭৩ রানে গুটিয়ে যায় সাকিব-তামিমরা। এরআগে প্রথম ইনিংসে টাইগাররা করেছিল ২৮৯ রান।

টিম টাইগারদের কেন এই ব্যাটিং বিপর্যয়? সাবেক অধিনায়ক ও ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এমন বিপর্যয়ের মূল কারণ সিনিয়র ক্রিকেটারদের দায়িত্বহীনতা। এছাড়াও দল ইনজুরিগ্রস্ত হওয়ায় ভারসাম্য নষ্ট হয়েছে বলেও মনে করেন তারা।

তবে আশার বাণী শুনিয়ে ক্রিকেট বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, নিউজিল্যান্ড সফরে বাংলাদেশের বেশ কিছু প্রাপ্তিও আছে।

ক্রাইস্টচার্চে প্রথম ইনিংসে বাংলাদেশ করে ২৮৯ রান আর চতুর্থ ইনিংসে মাত্র ১৭৩ রান। আর ওয়েলিংটনে প্রথম ইনিংসে ৫৯৫ রানের পর দ্বিতীয় ইনিংস থামে ১৬০ রানে।

টেস্টে বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতার কারণের কথা জানতে চাইলে দেশের প্রথম টেস্ট অধিনায়ক নাঈমুল ইসলাম দুর্জয় চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বাংলাদেশের একটা ইনিংস ছাড়া আর কোনো টেস্ট সুলভ ইনিংস হয়নি। টেস্ট খেলতে হবে সেশন ধরে ধরে, সময় নিয়ে। আমাদের ব্যাটসম্যানরা তা করতে পারে নি।

“একটা দলে সিনিয়র জুনিয়র সবাই মিলেই থাকবে। তবে সিনিয়রদের স্বাভাবিকভাবেই দায়িত্বটা বেশি থাকে। যেটা এ সফরে খুব কমই দেখা গেছে। এছাড়াও দলের খেলোয়াড়দের ইনজুরি বাংলাদেশ শিবিরে অন্য খেলোয়াড়দের মনবলের ঘাটতি তৈরি করেছে।”

ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট শেষে সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের অধিনায়ক তামিম ইকবাল বলেছেন, মূলত কন্ডিশনের কারণেই আমরা হেরেছি।

তবে নিউজিল্যান্ডের অচেনা আবহাওয়া ও কন্ডিশনের কারণে টাইগারদের এমন ব্যাটিং বিপর্যয়ের বিষয়টি উড়িয়ে দিয়েছেন বাংলাদেশের প্রথম টেস্ট কোচ ও বর্তমানে নারী দলের কোচ সারোয়ার ইমরান।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন, ‘কন্ডিশন তো জেনেই সেখানে গিয়েছি। নরমালি আমরা দ্বিতীয় ইনিংসে খারাপ ব্যাট করি। হঠাৎ হঠাৎ ভালো করি। এ টেস্ট হয়তো আমরা হারতাম, তবে খেলোয়াড় বিশেষ করে সিনিয়র খেলোয়াড়রা যদি টেস্ট মেজাজে ব্যাট করত। আমাদের খেলোয়াড়দের যে কোনো অবস্থায় ব্যাটিং করার মতো মানসিক অবস্থা থাকতে হবে।’

ক্রাইস্টচার্চ টেস্ট বিশ্লেষণ করে জাতীয় দলের সাবেক কোচ শফিউল হক হীরা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘আমরা চতুর্থ দিনে নিউজিল্যান্ডের তিন উইকেট দ্রুত ফেলতে পারি নাই। তাই লিড অনেক বেড়ে গেছে। বাংলাদেশের ক্যাচ ছাড়ার মাশুল দিতে হয়েছে। লিড বেশি হওয়ায় খেলোয়াড়দের ভালো করার দায়িত্বটা বেড়ে গিয়েছিল।’

টাইগার ব্যাটসম্যানদের ব্যাটিং সমালোচনা করে সাবেক দেশসেরা এ উইকেটরক্ষক বলেন, ‘যে দল ৫৯৫ রান করে, সে দলের এমন পারফরম্যান্স মেনে নেওয়া যায় না। আমাদের শট সিলেকশনগুলো ছিল খুবই খারাপ। সাকিব যে শটে আউট হয়েছে সে শট না খেললেও ওই মুহুর্তে চলতো।’

“হ্যাঁ ওই শট খেলেই সাকিব প্রথম ইনিংসে ৫৯ ও ওয়েলিংটনে ২১৭ করেছে। তবে ম্যাচের সময়কাল বুঝেই শট চালাতে হবে। এছাড়া তামিম সাব্বিররাও যেভাবে উইকেট গিফট করেছেন তাতে বিসিবি’র কর্মকর্তাদের উচিত দলের খেলোয়াড়দের নিয়ে বসে ভুলগুলো বের করা।”

তিনি আরও বলেন, ‘কিউইদের উইকেট ছিল বাউন্স নির্ভর, বডি লাইন বোলিং করেছে তারা। তাদের মাঠে তারা পেশাদার বলই করেছে। তবে আমাদেরকেও এখন নিজেদের মাঠে বাউন্সি উইকেট বানাতে হবে ‘

বাংলাদেশের আরো বেশি করে বিদেশের মাটিতে খেলার কথাও জানান সাবেক জাতীয় দলের অধিনায়ক শফিকুল হক হীরা।

সাবেক অধিনায়ক ও বিশেষজ্ঞ কোচরা নিউজিল্যান্ড সফরকে ইতিবাচক দৃষ্টিতে দেখছেন।

নিউজিল্যান্ডের সফরের প্রাপ্তির কথা তুলে ধরে সাবেক অধিনায়ক নাঈমুর রহমান দুর্জয় বলেন, ‘ওয়েলিংটন টেস্টে সাকিবের ২১৭, মুশফিকের ১৫৯ ছাড়াও তাদের পঞ্চম উইকেটে ৩৫৯ রানের জুটি ছিল বড় অর্জন।’

তবে বিশেষজ্ঞ কোচ সরোয়ার ইমরান অবশ্য একটু ভিন্নভাবেই মূল্যায়ন করলেন টাইগারদের প্রাপ্তির খাতা।

তিনি বলেন, ‘দুই থেকে আড়াই বছর পর বাংলাদেশ বিদেশ সফরে যায়। এই সফরের প্রাপ্তি নিয়ে বসে থাকলে চলবে না। যে ভুলগুলো হয়েছে তা শুধরে সামনের বিদেশ সফরগুলোতে আরো মনোযোগী হতে হবে।’

সাবেক অধিনায়ক শফিকুল হক হীরাও এ সফরে প্রাপ্তির কথা উল্লেখ করে বলেন, নিউজিল্যান্ড সফরে প্রাপ্তি আমাদের পেস অ্যাটাক। আমাদের নতুন ও তরুণ পেসাররা যথেষ্ট ভালো বোলিং করেছে। তাসকিন আহমেদের বোলিংয়ে সুইং, গতি আর লাইন লেন্থ ছিল চমৎকার। কামরুল হাসান রাব্বীও ভালো করেছে। তবে ও একটু লুজ বল বেশি করেছে।

নিউজিল্যান্ড সফরের প্রাপ্তি ভবিষ্যতের বিদেশ সফরে বাংলাদেশকে নতুন বার্তা দিবে বলে মনে করছেন সাবেক এ তারকারা।