চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

কারো নাম মনে রাখার দারুণ উপায়

১৯৯০ সাল। তখন লন্ডনের একটি বারে কাজ করতেন মার্ক চ্যানন। তখনই পদ্ধতিটি তিনি শেখেন এক বন্ধুর কাছ থেকে। তখন টুকটাক অভিনয়ও করতেন চ্যানন। নিজের অভিনয়ের জন্য প্রয়োজনীয় ডায়ালগের লাইনগুলো মনে রাখতে পারলেও কখনোই কারো নাম মনে রাখতে পারতেন না তিনি।

সমাধানটা পেলেন বন্ধুর কাছ থেকেই। তারপরই বারের ক্রেতাদের নাম মনে রাখা এবং তাদের ড্রিঙ্ক মনে রাখা তার জন্য অনেক সহজ হয়ে গেলো।

পরে তিনিই একটি গেম শো ডিজাইন করেন বিবিসির জন্য, যার নাম তিনি দিয়েছেন ‘মনকহাউজ মেমোরি মাস্টার’। এই গেম শোতে তিনি সবাইকে মনে রাখার কিছু সহজ কৌশল শেখান। ১৯৯৫ সালে তিনি ষষ্ঠ ওয়ার্ল্ড মেমোরি চ্যাম্পিয়নশিপ জেতেন চ্যানন এবং প্রথম ইন্টারন্যাশনাল গ্র্যান্ড মাস্টার অব মেমোরিও নির্বাচিত হন।

ক্যারিয়ারে উন্নতি করতে স্মরণশক্তির কোন বিকল্প নেই বলে মনে করেন চ্যানন। তিনি বলেন, আপনি একটি ঘরে ঢুকলেন এবং সবার নাম মনে রাখলেন সেটার থেকে ভালো আর কি হতে পারে। 

আরেক মেমোরাইজ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা কাইল বুচানান সবাইকে মনে রাখার উপায় শেখাতে নিজের চাকরিই ছেড়ে দেন। পরে কাজ শুরু করেন মেমোরি কোচ হিসেবে। বুচানান মানুষকে সেই সব জিনিস মনে রাখতে সাহায্য করেন যেগুলো মনে রাখা বেশ কঠিন। যেমন নাম বা অন্যান্য তথ্য।

মানুষ সাধারণত একটি বাড়ির কোনো একটি জিনিস বা কোনো বিখ্যাত জায়গার নাম দিয়ে মানুষের নাম মনে রাখতে পারে। সেক্ষেত্রে পরিচিত কোনো শব্দও সাহায্য করতে পারে।

সেক্ষেত্রে প্রথম পদক্ষেপটাই হচ্ছে, কেউ যখন আপনাকে তার নামটি বলবে তখন সেটা মনোযোগ দিয়ে শোনা। মানুষ সাধারণত কারো নাম শোনার সময় নিজের চিন্তাতেই ডুবে থাকে, কখনো কখনো শোনেই না। কিন্তু নামটি শোনার পর সেটি কোনো একটি জিনিসের সঙ্গে সংযুক্ত করতে পারলেই দেখবেন নামটি খুব সহজেই মনে থাকছে, সঙ্গে যুক্ত করুন মানুষটির চেহারা। তারপর সবশেষে কার কার সঙ্গে পরিচয় হলো সেটা একবার মিলিয়ে নিন। এবার দেখবেন নামটা ঠিক মনে থাকছে।

যেমন ধরুন, হয়তো একটি পার্টিতে আপনার একজনের সঙ্গে পরিচয় হলো। তার নাম ম্যাট। প্রথম পরিচয়ের সময় তার নামটি ভালো করে শুনুন। তার সঙ্গে সম্পর্কযুক্ত কোনো ছবি বা ছড়া চিন্তা করুন। হতে পারে সেটা ওয়ালম্যাট। এবার সেই ছবিটার সঙ্গে ম্যাটের চেহারার একটা সংযোগ তৈরি করুন। যেমন হয়তো তার কানটা একটু বড়। তাহলে ভাবুন, ওয়ালম্যাটে বড় বড় দুটি কান বাধানো বাঁধানো আছে। তবে ভুলেও তাকে বলবেন না, যে আপনি তাকে নিয়ে কি কি ভাবছেন। পরে একবার এই ছবিটা মনে করুন। দেখবেন সহজেই নামটি মনে থাকছে।

প্রথম প্রথম এমনটা করতে আপনার বাড়তি সময় ক্ষয় হবে এবং বাড়তি কাজ মনে হবে তা ঠিক কিন্তু কয়েকদিন পরেই সেটা আত্মস্থ হয়ে যাবে বলে আশ্বস্ত করেন চ্যানন। ঠিক এমনই হয়েছে চ্যাননের ক্ষেত্রেও।

খানিকটা স্মৃতিশক্তি হারানো রোগীদের নিয়ে কাজ করেন ম্যাকঅ্যান্ড্রু। তিনি স্মৃতি ও মস্তিস্কের অন্যান্য অংশের মধ্যে গভীর সংযোগ খুঁজে পান। তার টিমের গবেষণায় পাওয়া যায়, নাম মনে রাখতে পারলে অন্যান্য জ্ঞানগত যোগ্যতাও বৃদ্ধি পায়। নাম মনে রাখতে পারলে মানুষের কল্পনাশক্তিও প্রখর থাকে ফলে যেকোনো সমস্যার সমাধান করাটা তাদের জন্য সহজ হয়।