চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

কবিতা আমার জীবন যাপনের স্টাইল: রোজেন হাসান

রোজেন হাসান এই সময়ের উজ্জ্বল কবিদের একজন। তার ভাষাভঙ্গী, কনটেন্ট, নির্মাণ আলাদা করে চোখে পড়ার মতো। তার প্রথম বই ‘অক্ষর স্তব্ধবন’ প্রকাশ হয়েছে চলতি বছরের একুশে বই মেলায়। কবিতা, কবিতার বই, অনুপ্রেরণা, যাপন, ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ইত্যাদি নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন তিনি-

প্রথম বই, অনুভূতি কেমন?
অনুভূতি আসলে বুঝতে পারছি না ঠিকঠাক, তবে এটা বুঝছি যে আমি বর্মহীন হয়ে গেছি, কেননা বইটা তো বেরিয়ে গেছে, এটা আর আমার দখলে নেই এখন তা পাঠকের। তাদের মত করে তারা পড়বেন, আনন্দিত বা বিষাদাচ্ছন্ন হবেন।

বইয়ের কবিতাগুলো নিয়ে কিছু বলুন…
বইয়ের কবিতাগুলো সম্পর্কে আমি মনে করি তারা একটা ধারণার ভিত্তিতে গেছে, প্রতিটা কবিতাই ভিন্ন ভিন্ন নোট থেকে একটা মূলধারণার মাঝে এসে বাঁধা পড়েছে। এদের সম্পর্কে আলাদা করে কিছু না বলাই ভালো, কেননা কবিতার বিষয়ে আলাদা করে কিছু বোঝানো যায়না, যেটা কবিতা পড়ানোর মাধ্যমে যায়।

কবিতা নিয়ে কথা বলা যাক, কবিতা আপনার কাছে কী বা কেন লেখেন?
কবিতা আমার জীবন যাপনের মাধ্যম, স্টাইল বলতে পারেন। এর ভেতরেই আপনার সব উত্তর আছে। কবিতা ছাড়া আমি বেঁচে থাকতে পারব ঠিকই কিন্তু সেটা সুন্দর বা ভালো হবে না।

বই প্রকাশ হলো, প্রকাশ হওয়া মানে আপনি নিজেকে অন্যের কাছে পৌঁছুতে চাচ্ছেন। আপনি কাদের কাছে পৌঁছুতে চান?
পাঠক এক ধারণা, আর বই হচ্ছে এক ভ্রমণ। পাঠক এবং বই পরস্পর তাদের পছন্দানুযায়ী কাছাকাছি আসে। তবে আমি মূলত কবিতা ধারণ করেন এমন পাঠকদের কাছেই পৌঁছুতে চাই, তারা যেকোনো মাধ্যমের হতে পারেন।

কবি হিসাবে আপনার গড়ে উঠা মানে এই পর্যন্ত আপনার ভ্রমণটা কেমন ছিল? অনুপ্রাণিত হন কোথা থেকে?
“ভ্রমণ এক নিজস্ব ঋতু” নামে আমার একটা কবিতা আছে বইয়ে, আপনার প্রশ্নে কথাটা বললাম। আমার ভ্রমণটা নৈঃশব্দ আর কোলাহলের মাঝামাঝি বলতে পারেন, আমি আমার অভিজ্ঞতার ওপর বিশ্বাস রাখতে চেয়েছি, আমি দেখেছি অভিজ্ঞতা নতুনত্ব তৈরি করে কিন্তু সেটা গিমিক নয়। আমি অনুপ্রাণিত হই আমার জীবনের কিছু অভ্যাস থেকে যেগুলো আমি কোনোভাবেই ছাড়তে পারি না, এগুলো হচ্ছে পড়া, সিগারেট, নিঃসঙ্গতা, রাতজাগা এবং চিন্তা করা- অনেক সময় দুঃশ্চিন্তা। এইগুলোর দ্বারা আমি অনুপ্রাণিত হই।

আপনার কবিতার যে ভাষা, নির্মিতি এগুলা সহজ সরল না। অচেনা অনেক সময়। এমন একটা ভাষা কেন বেছে নিলেন?
আমি যে পৃথিবীতে জন্ম নিয়েছি চলে যাওয়া আর আসতে থাকা সময়ের মাঝখানে, সেই পৃথিবীর সাথে আমার আত্মার যোগাযোই আমার কবিতা। এর বেশিও নয় কমও নয়। আমার বেঁচে থাকার কাছে এই ঢাকা আর বাংলাদেশ যেমন সত্য এবং পরিবর্তনশীল একইভাবে আলেকজান্দ্রিয়ার সেই পুড়ে যাওয়া লাইব্রেরীও সত্য এবং পরিবর্তনশীল। তো এইসবের মাঝে অনেক গ্যাপ থেকে যায়, যেখানে আমি কফি শপের বাইরে আবিষ্কার করতে পারি প্যারিসকে, যে তার জাহাজের ডেকে অপেক্ষা করছে এবং ট্রয়ের উদ্দেশ্যে বন্দর ছেড়ে যাবার প্রতিটি মুহুর্তকে অপেক্ষার শীর্ষ বিন্দুতে নিয়ে যাচ্ছে। যেখানে যেকোনো কিছুই সম্ভব। এই আমার অভিজ্ঞতা ভাষার প্রতি। আর কবিতার ক্ষেত্রে এর বাইরে কোনো ভাষা দ্বারা আমি কাজ করতে চাইওনি, পারি না বলতে পারেন। তবে এই ভাষা এই কবিতা একটু বেশি মনোযোগ দাবী করে এবং আমি মনে করি মনোযোগ দাবী করাটা কবিতার জন্যে ভাল। আর সহজ সরল কবিতা আমি নিজে অপছন্দ করি এর ফলে তাদের এড়িয়ে চলি কবিতায়।

ফর্ম এবং কনটেন্টের মধ্যে আপনি কোনটাকে বেশি গুরুত্ব দেন? আপনার সচেতনতার জায়গাটা কোনটা?
আমি দুইটাকেই সমান গুরুত্ব দেই, আমার কাছে কবিতা হচ্ছে টোটাল একটা ব্যাপার, যেখানে কনটেন্ট তার ফর্ম খুঁজে নেয় আবার উল্টোটা।

 

প্রকাশিত বইয়ের কবিতাগুলো কোন সময়ে লেখা? বইয়ের কবিতাগুলোর কিছু কি আগে পত্রিকা বা ওয়েবে প্রকাশিত?
এই বইয়ের কবিতা আমি লিখি ২০১৩ থেকে ২০১৭ সাল পর্যন্ত। এর আগে পরে আমার অনেক কবিতা আছে, কিন্তু এই বইয়ের কবিতা শুধুমাত্র এই বইয়ের জন্যই লিখা হয়েছে। আমি ওয়েবম্যাগ এড়িয়ে চলেছি এই বইয়ের ক্ষেত্রে, তবে পত্রিকায় আর আমার ফেসবুকে কয়েকটা প্রকাশিত হয়েছে।

কঠিন প্রশ্ন করা যাক, এত এত কবিতার বই বের হচ্ছে আপনারটা পাঠক কেন পড়বে? কেন আলাদা?
খুব কঠিন প্রশ্ন আসলেই। পাঠক পড়বে কারণ পাঠক কবিতা চায়, পাঠক কবিতাই চায় শেষপর্যন্ত, আর কিছু না, এবং পাঠক নতুন কবিতা নতুন অভিজ্ঞতা চায়, আর এই কবিতাগুলো সেই দাবী কিছুমাত্রায় পূরণ করতে পেরেছে বলে আমার মনে হয়। আলাদার কারণ তো ব্যাপক আছে, সেটা কবিতাই বলবে।

মাত্রই একটা বই বের হলো, নিশ্চয়ই অনেক ধকল গেছে। ভবিষ্যত পরিকল্পনা নিয়ে কিছু বলুন।
ধকল গেছে বললে কম বলা হয়, আসলে আমি এটা লিখে বা বলে বুঝাতেও পারব না। আমাকে বিমূর্ত ধারণাগুলোর সাথে একটা অসম যুদ্ধ করতে হয়েছে বলা যায়। পরিকল্পনা ছাড়া আমি কিছুই করি না, তবে এখন আমার পরিকল্পনাকে খুঁজতে হচ্ছে।

শুভ কামনা, রোজেন হাসান…
অসংখ্য ধন্যবাদ আপনাকেও

‘অক্ষর স্তব্ধবন’
রোজেন হাসান
প্রকাশক: ঐতিহ্য’
প্রচ্ছদ: ধ্রুব এষ