সিনেমাপ্রেমীদের আবার সিনেমার জগতে ফেরাতে শুরু করেছেন সাম্প্রতিক সময়ের পরিচালকরা। তাইতো ফেসবুকে এবার এই বিষয়ে পোস্ট দিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের শিক্ষক ড. ফাহমিদুল হক।
এক ফেসবুক পোস্টে তিনি সম্প্রতি মুক্তি পাওয়া ‘আইসক্রিম’ সিনেমাটি নিয়ে লিখেন। সেখানে তিনি লিখেন, আমাদের জেনারেশনে আমরা এক-প্রেমে বিশ্বাসী ছিলাম, ফলে প্রেমবিষয়ক জটিলতা কম ছিল, কিন্তু একটা সম্পর্ক ভেঙ্গে গেলে জীবন বরবাদ হবার যোগাড় হতো। এখনকার তরুণদের জীবনযাপনে ‘ব্রেক-আপ’ বেশ চেনা শব্দ- অল্পেই সম্পর্ক হয়, অল্পে ভেঙ্গেও যায়। তবে এই ভাঙ্গাচোরার বিষয়গুলো তারা স্পোর্টিংলি সামলেও নেয়।
এরপর সাম্প্রতিক সময়ের সম্পর্কগুলো নিয়ে ফাহমিদুল হক লিখেন, নানান উপলক্ষ্যে, বিচারক হিসেবে, এই সময়ের তরুণদের নির্মিত নানান দৈর্ঘ্যের ফিকশন চলচ্চিত্র দেখতে হয়েছে। সেসবে একটা বড় অংশ জুড়ে থাকে প্রেম-ব্রেক-আপ, বহু সম্পর্ক, আত্মাহুতি ইত্যাদি সেসব চলচ্চিত্রে মামুলি কায়দায় উপস্থাপন করা হয়। ‘এ বয় মিটস এ গার্ল’- এই ফর্মুলাই আছে, তবে একটু পাল্টে ‘এ বয় মিটস মেনি গার্লস’ হয়েছে। কিন্তু আর্ট পিসে, এই সম্পর্কের ভাঙ্গা-গড়া দেখাতে গেলে এর স্থূল ঘটনা ও সূক্ষ্ম অনুভূতি উভয়ই ক্র্যাফটসম্যানশিপের মধ্য দিয়ে হাজির করতে হয়। নয়তো তা বাতিল হয়ে যায়। নব্বই দশকে ব্যান্ড সংগীতের জোয়ারে একটা সস্তা গানের কথা ছিল এরকম- ‘মৌচাক মার্কেটে হলো দেখা, নিউমার্কেটে হলো পরিচয়, রমনা পার্কে বসে গাছের ছায়ায় মনটা করেছি বিনিময়…’। এখানে স্থূল ঘটনাবলী আছে, সূক্ষ্ম ডিটেইল নেই। তাই এটাকে আমি নির্ভয়ে সস্তা গান বলতে পারছি। আমার দেখা তরুণদের নির্মিত প্রেম-সম্পর্কের চলচ্চিত্রগুলোতে এইসব সূক্ষ্ম ডিটেইলের অভাব লক্ষ করেছি। প্রেমানুভূতির গভীরতাও দুষ্প্রাপ্য।
সবশেষে আইসক্রিম চলচ্চিত্রটি নিয়ে তিনি লিখেন, রেদওয়ান রনির ‘আইসক্রিম’ চলচ্চিত্রে এই প্রজন্মের প্রেম-বহুসম্পর্ক-ব্রেকআপ ইত্যাদির কাহিনী আছে। তবে এতে স্থূল ঘটনাবলী যেমন আছে, সূক্ষ্ম ডিটেইলও আছে। প্রচেষ্টাটা ভালো লেগেছে। এই প্রজন্মের তরুণ নাগরিদের প্রেম-বহুসম্পর্ক-ব্রেকআপ নিয়ে ডিটেইলসহ একমাত্র পূর্ণদৈর্ঘ্য চলচ্চিত্র হিসেবে চিহ্নিত করে রাখলাম। আর কোনো চলচ্চিত্রের কথা কেউ জানলে বলবেন। এই চলচ্চিত্র কেবল একটি ক্লাসের কথা বলে- তিনটি প্রধান চরিত্রই অ্যাফ্লুয়েন্ট, বয়সে তরুণ হলেও সবারই গাড়ি আছে, বড় বড় বাড়িতে তারা বাস করে। শিল্প-সংস্কৃতি থেকে মধ্যবিত্ত-নিম্ন মধ্যবিত্ত ক্রমশ হারিয়ে যাচ্ছে। সম্ভবত ‘ব্যাচেলর’ চলচ্চিত্র এই ট্রেন্ডটা সেট করে দিয়েছিল। যে তরুণ-তরুণী বাসে-রিকশায় চড়ে, মেসে-হোস্টেলে থাকে, তাদের প্রেম-বহুসম্পর্ক-ব্রেকআপ নিয়েও কাজ হওয়া দরকার।
নতুনদের অভিনয় ভালো হয়েছে। গানগুলোও শ্রুতিমধুর। কাহিনীর শেষটা ওপেন এন্ডেড, তবে অগোছালো মনে হলো।