‘এ খাঁচা ভাঙবো আমি কেমন করে?’ ‘জীবন থেকে নেয়া’ ছবির এই কালজয়ী গানের কথা আমরা সবাই জানি। খাঁচা ভাঙার স্বপ্ন বাঙালির এই চিরায়ত ব্যাপার। পরাধীনতার জিঞ্জির ছিঁড়ে বেরিয়ে আসার সাধ থেকেই একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ। সেই যুদ্ধে পাকিস্তানীদের বুঝিয়ে দিয়েছে বাংলার সোনার ছেলেরা কিভাবে শক্রু তাড়াতে হয়। অবশেষে ১৬ ডিসেম্বর, বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। উপহার দিয়েছে সবুজ জমিনের মাঝে লাল রঙা পতাকা।
আজকের রোহিঙ্গা সংকট আমাদের সেই গানকে মনে করিয়ে দিচ্ছে। গানের সুর ঠিক রেখে আমরা যদি বলি-‘এ কাঁটা খুলব এখন কেমন করে?’ তা হলে কি বেশিই বলা হবে? রোহিঙ্গারা আমাদের গলায় কি কাঁটা হয়ে বেঁধেনি?
আমরা যেমন খাঁচা ভেঙে ফেলার স্বপ্নে বিশ্বাসী, তেমনি আবার মানবতা দেখাতেও পিছপা হই না। মানবিকতার দিক থেকে সর্বোচ্চ স্থানেও বিরাজ করছে বাংলাদেশ। বিশ্ববাসী স্বীকৃতি দিয়েছে যে আমরা বা আমাদের সরকার মানবতা দেখিয়েছে রাখাইনের রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিয়ে।
কিন্তু এই মানবিকতা আমাদের শেষ পর্যন্ত না আবার গলার কাঁটা হয়ে দাঁড়ায়, সেটাও ভাবতে হচ্ছে। কারণ সুন্দর সমাধানের জন্য যতই দুই দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বৈঠক হোক না কেন মিয়ানমার তাদের বর্বরতা থেকে এক চুলও কি নড়েছে? নড়েনি। সু চির চোখে এখনও শকুনের ছায়া। ওই দেশের সামরিক জান্তার পোশাকে এখনও রক্তের নেশা খেলা করছে। এখনও রোহিঙ্গা গ্রাম পুড়িয়ে দেয়া হচ্ছে। এখনও ধর্ষণের শিকার হচ্ছে কিশোরীরা। এখনও বাংলাদেশে রোহিঙ্গারা টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে ঢুকছে।
জাতিসংঘের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারাও সোচ্চার মিয়ানমারের মানবিক সংকট দেখে। তাদের হিসাব মতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশে ৬ লাখ ২৬ হাজার রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে।
এখন প্রশ্ন হল এই রোহিঙ্গাদের নিয়ে বাংলাদেশ কি করবে? একদিকে বাংলাদেশের মানবিকতা অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের ক্রমশ হিংস্র হয়ে ওঠার সম্ভাবনার বিষয়টি। নিজেদের চাহিদার ব্যাপারে যখন সোচ্চার হয়ে উঠবে তখনই তারা যেকোনো অপরাধের সাথে জড়িয়ে যাবে। তাদেরকে ব্যবহার করা হবে নানা কৌশলে। তাদেরকে দিয়ে ইয়াবা ব্যবসা ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে, পত্রিকার খবরে জানা গেল। তারা কোথাও কোথাও বাঙালিদের ওপর আক্রমণও করছে সে খবরও পাওয়া যাচ্ছে। এর পাশাপাশি রয়েছে রাজনৈতিক কৌশল। দেশকে অচল করে দেবার জন্য যা যা করা যায় সরকার বিরোধীরা তাই করবে। ধর্মীয় উন্মাদনা থেকে শুরু করে যত রকম রাজনৈতিক অপকৌশল রয়েছে সবই সম্ভব তাদের ব্যবহার করে। সেটা সরকারের জন্য যেমন বিপদ তেমনি দেশের শান্তিপ্রিয় জনগণের জন্য বিপদ। এর থেকে রেহাই পাবার একমাত্র পথ যত দ্রুত সম্ভব এদেরকে সুষ্ঠু পন্থায় তাদের দেশে ফিরিয়ে নেয়া। এর জন্য বিশ্বকর্তাদের সাহায্য চাওয়া ছাড়া আর কোনো পথ খোলা নেই। কারণ মিয়ানমার সরকার যতই নাটক করুক সাময়িক বিশ্ব চাপে, তারা আসলে রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে চাইবে না। আর যদি তাই না হয় তা হলে ওই গানের সুর ধরে আমাদের সারাজীবন গাইতে হবে- এ কাঁটা খুলব এখন কেমন করে?
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)