চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘এবতেদায়ী শিক্ষকদের বেতন না পাওয়া অমানবিক’

জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আন্দোলনরত স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসা শিক্ষকদের দাবি মানবিকতার খাতিরে হলেও মেনে নেওয়া উচিৎ বলে মনে করেন বিশিষ্ট লেখক ও কলামিস্ট সৈয়দ আবুল মকসুদ। তিনি বলেন: সরকার যেহেতু বলছে, তারা নিরক্ষর শিশুদের সংখ্যা শূন্যের কোটায় নিয়ে আসতে চায়; এসব শিক্ষকরা কিছুটা হলেও তো শিক্ষার্থীদের অক্ষরজ্ঞান দিচ্ছে, এ কারণে তাদের দাবি মেনে নেয়া দরকার। দীর্ঘদিন ধরে তাদের বেতন না পাওয়ার বিষয়টি অমানবিক।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে একান্ত সাক্ষাতকারে সৈয়দ আবুল মকসুদ এসব কথা বলেন। এছাড়া তিনি দেশ-বিদেশের চলমান নানা ঘটনার কথা উল্লেখ করে সবাইকে মানবিক বোধসম্পন্ন মানুষ হওয়ার আহ্বান জানান।

সৈয়দ আবুল মকসুদ বলেন: এবতেদায়ী মাদ্রাসার কারিকুলামে কোন সমস্যা থাকলে সেসব বিষয় সমাধান করতে হবে। এছাড়া দেশের বিভিন্ন স্থানে আদৌ এসব প্রতিষ্ঠান আছে কিনা সংশ্লিষ্ট উপজেলা শিক্ষা অফিসার এবং সহকারী শিক্ষা অফিসারসহ অন্যান্য লোকবলের মাধ্যমে রিপোর্ট নিয়ে বিষয়টির সুরাহা করতে হবে। এভাবে দিনের পর বেতন-ভাতা ছাড়া বিষয়টি ঝুলিয়ে রাখার কোন মানে হয় না।

সৈয়দ আবুল মকসুদ। ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন

প্রধানমন্ত্রীর আশ্বাসে নন-এমপিও শিক্ষকদের আমরণ অনশন প্রতাহ্যারের পর প্রচণ্ড শীতে খোলা আকাশের নিচে বিভিন্ন জেলা থেকে আসা মাদ্রাসার শিক্ষকরা সমাবেত হয়ে জাতীয়করণের দাবিতে ‘লাগাতার অবস্থান ধর্মঘট’ করছেন স্বতন্ত্র এবতেদায়ী মাদ্রাসার শিক্ষকরা। গত এক সপ্তাহেরও বেশি সময় ধরে তারা এই অবস্থান ধর্মঘট চালিয়ে যাচ্ছেন।

‘সরকার একসময় এসব প্রতিষ্ঠানকে মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ডের রেজিস্ট্রেশন দিয়েছে। রেজিস্ট্রেশন দিয়ে এভাবে বছরের পর বছর বেতন না দেওয়া তো অমানবিক। এসব অমানবিক ঘটনায় সকলকে সোচ্চার হতে হবে। তাদের কারিকুলাম বা অন্য কোন বিষয়ে যদি সমস্যা থাকে তাহলে সেগুলো সমাধান করতে হবে। বেতন না দিয়ে এভাবে দায়সারা মনোভাব দেখানো সমাধান হতে পারে না।’, বলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।

দেশের ব্যাংকখাতে লুটপাটের বিষয়ে তিনি বলেন: অনেক ব্যাংক ভুয়া গ্রাহক বানিয়ে নামে-বেনামে ঋণ দিয়ে সেসব টাকা লুটপাট করছে। এক্ষেত্রে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে না পারায় অপরাধীরা আরও বেপরোয়া হয়ে উঠছে।

‘প্রধানমন্ত্রী এসব অপরাধীদের বিষয়ে অনেকটা বিরক্ত হলেও দলীয় কিছু নেতার কারণে তার ভাবমূর্তি নষ্ট হচ্ছে। এক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীকেই আরও কঠোর ভূমিকা পালন করতে হবে। দলীয় পরিচয়ের ভিত্তিতে ব্যাংক, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, মেডিকেল কলেজসহ সেবামূলক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অনুমোদন দেওয়া বন্ধ করতে হবে।’, বলেন সৈয়দ আবুল মকসুদ।

রোহিঙ্গামিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিধনের বিষয়কে বিশ্ব ইতিহাসের বিরল ঘটনা হিসেবে উল্লেখ করে এই কলামিস্ট বলেন: প্রতিবেশি দেশের সঙ্গে এমন সমস্যার সঠিক সমাধানে আসলে পোড় খাওয়া নেতৃত্বের প্রয়োজন হয়। কিন্তু আমাদের এই নেতৃত্বের অভাব রয়েছে। তাই রোহিঙ্গা সমস্যার বিষয়টি এখনও সেভাবে সমাধান হচ্ছে না।

‘বলা হচ্ছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারে শীঘ্রই ফেরত পাঠানো হবে। আবার তাদের বাসস্থান নির্মাণসহ বিভিন্ন কারণ দেখিয়ে সরকারিভাবে তাদের জন্য হাজার কোটি টাকার প্রকল্প নেয়া হচ্ছে। বিষয়টি আসলে ধোঁয়াশার। তাদেরকে শীঘ্রই মিয়ানমারে ফেরত পাঠানোর ব্যবস্থা করতে হবে। তাদের বিষয়টি সঠিক নেতৃত্বের মাধ্যমে যথাযথভাবে সমাধান করতে না পারায় ভারতের আসাম রাজ্য আমাদেরকে চাপে রাখার জন্য সেখান থেকে কথিত অনুপ্রবেশকারী বাঙালি খেদাওয়ের পরিকল্পনা করছে। এই অমানবিক পরিকল্পনার বিষয়ে আমাদের সরকারি পর্যায় থেকে এখনই কোন পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে বিষয়টি বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়াবে।’

মন্ত্রিপরিষদে যুক্ত হওয়া নতুন মন্ত্রীদের কথা কম বলে কাজে বেশি মনোযোগ দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন: সরকারের মেয়াদের শেষ বছরে তাদের হাতে সময় খুবই কম। এই আট-নয় মাসে অনেক বড় ধরনের কোন পরিবর্তন করা যাবে না, তা ঠিক। তবে এই অল্প সময়ও যদি কথায় কথায় চলে যায় তাহলে দেশের প্রতি তাদের অবদান কী থাকবে? দেশের মানুষ এই আট মাসে তাদের কাছ থেকে রক্ত চায় না, তারা এই অল্প সময়ে হলেও উদাহরণ তৈরি করার মতো কাজ চায়। তাই কথা কম বলে যতো দ্রুত সম্ভব কাজ শুরু করে দিতে হবে। কাজের মাধ্যমে মন্ত্রিসভাকে গতিশীল করে তুলে তুলতে হবে।