চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

এনডিটিভির বিরুদ্ধে কিভাবে এবং কেন এই অভিযোগ?

ভারতের এনডিটিভির প্রতিষ্ঠাতা প্রণয় ও রাধিকা রায় ও তাদের কোম্পানি আরআরপিআর হোল্ডিংসহ আইসিআইসি ব্যাংকের অজ্ঞাত এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে করা মামলার তদন্ত করছে দেশটির কেন্দ্রীয় তদন্ত ব্যুরো (সিবিআই)। এনডিটিভির বিরুদ্ধে কিভাবে এবং কেন এই অভিযোগ?

তাদের বিরুদ্ধে আনীত ওই মামলার ফার্স্ট ইনফরমেশন রিপোর্টের (এফআইআর) প্রথমেই ষড়যন্ত্র, প্রতারণা ও অসদাচরণ, এই তিনটি অপরাধের কথা লেখা হয়েছে। কিন্তু এনডিটিভির বিরুদ্ধে সিবিআই এবং প্রতিষ্ঠানটির সাবেক কনসালটেন্ট সনজয় দত্তের আনা ঋণ খেলাপির এই অভিযোগ প্রতারণামূলক বা অপরাধমূলক কাজ নয়।

সনজয় দত্তের অভিযোগের ভিত্তিতে সোমবার প্রণয় রায়ের বাসা, দিল্লী এবং দেহারাদানে অভিযান চালিয়েছে সিবিআই। এই অভিযানকে ভারতের গণমাধ্যমের স্বাধীনতায় ভয়ঙ্কর হস্তক্ষেপ বলে অভিহিত করেছে এনডিটিভি।

সিবিআইয়ের করা ওই মামলায় এনডিটিভির বিরুদ্ধে অনেকগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে। প্রণয় রায় ত্রুটিপূর্ণ একটি ঋণ পরিশোধ চুক্তির মধ্যে থেকে অর্থনৈতিক বাজারের অনেক নীতি স্বেচ্ছায় এড়িয়ে গেছেন এবং এই কারণে আইসিআইসি ব্যাংকের ৪৮ কোটি রুপি লোকসান গুনতে হয়েছে। যদিও সোমবার ভারতের গণমাধ্যমের সম্পূর্ণ দৃষ্টি ছিল এনডিটিভির উপর।

২০০৯ সাল থেকে কমপক্ষে ২০১২ সাল পর্যন্ত  রিলায়েন্সের কাগজ কোম্পানীর সাথে এনডিটিভির কার্যকরি মালিকানা পরিবর্তনে আইসিআইসি ব্যাংকের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয়েছে। অভিযোগগুলোর কোনটি গুরুতর এবং কোনটি তা নয়, বিষয়টি ভারতের অলাভজনক গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠান দি ওয়্যার এক প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে।

অভিযোগের পিছনে যারা?

বর্তমানের সময়ের ঘটনা প্রবাহ দেখে মনে প্রশ্ন আসতে পারে সিবিআই একটি ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কেন লাগতে গেল, যদিও এই মামলার বিভিন্ন বিষয়ে গত চার বছর ধরে কম-বেশি সবাই জানেন। এই মামলার বাদী হচ্ছেন কোয়ান্টাম সিকুউরিটিস প্রাইভেট লিমিটেডের মালিক সনজয় দত্ত।

সনজয় দত্ত দীর্ঘদিন ধরে এনডিটিভির কনসালটেন্ট হিসেবে দায়িত্বপালন করেছেন। তিনি কোম্পানীটির একটি ক্ষুদ্র শেয়ারের মালিক ছিলেন এবং স্টক ব্রোকার হিসেবেও কাজ করেছেন। ইন্ডিয়াবুলস এবং আইসিআইসি ব্যাংক থেকে এনডিটিভির মালিকের ঋণ নেয়ার বিষয়ে প্রথম প্রতিবেদন প্রকাশ করে দি সানডে গার্ডিয়ান। এরপর থেকে দত্ত এনডিটিভির বিরুদ্ধে অভিযোগ তোলা শুরু করেন।

২০১৩ সালের এপ্রিল মাসে আইসিআইসি ব্যাংক থেকে নেয়া ঋণের বিষয়ে তিনি আরবিআইয়ের কাছে একটি পত্রও লিখেছিলেন।ওই বছর জুন মাসে মানিলাইফ এই বিষয় নিয়ে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এরপর এনডিটিভির পক্ষ থেকে কোয়ান্টাম সিকিউরিটিস এবং দত্তের বিরুদ্ধে মানহানি পত্র লেখার অভিযোগ আনে।

প্রণয় রায়

ওই একই বছর, দত্ত ইডি পরিচালক (এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টর), ইনকাম ট্যাক্সের পরিচালক এবং বিদেশে অর্থ পাচাররোধে কাজ করা প্রতিষ্ঠানসমূহে এনডিটিভির বিরুদ্ধে তদন্ত করার আহ্বান জানিয়ে অভিযোগ করেন।

এই দুই বছর পর দত্ত ২০১৩ সালে করা অভিযোগের তদন্তে ব্যর্থতার অভিযোগ এনে ইডি এবং ডিজিআইটির বিরুদ্ধে হাইকোর্টে আপিল করেন। দুই বছর চেষ্টা করলেও হাইকোর্ট থেকে প্রত্যাশিত আদেশ জারি করা হয়নি।

২০১৭ সালের এপ্রিলে সিবিআইয়ের কাছে অভিযোগ করেন দত্ত। সেই অভিযোগের ভিত্তিতেই এনডিটিভির বিরুদ্ধে সক্রিয় হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

সিবিআই কি একাই এই অভিযোগ নিয়ে কাজ করছে? এটি কি আইনসঙ্গত?

সনজয় দত্তের করা এফআইআরটি ৮০ পৃষ্ঠা দীর্ঘ। এই অভিযোগ নিয়ে কাজ করা সিবিআই কি একাই কাজ করছে কি না এখন পর্যন্ত এই বিষয়টি স্পষ্ট নয়। তবে এর আগে এনডিটিভির বিরুদ্ধে ইডি ও ইনকাম ট্যাক্সের পরিচালকের পক্ষ থেকে পৃথকভাবে তদন্ত চালানো হয়েছিল।

আইনবিদরা বলছেন, ব্যক্তি অভিযোগের ভিত্তিতে তদন্তে নামার ঘটনা সিবিআইয়ের ইতিহাসে খুব বেশি নেই। এ বিষয় নিয়ে সিবিআইয়ের পক্ষ থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে দাবি করা হয়েছে যে তাদের পরিচালিত তদন্তে এনডিটিভির বিরুদ্ধে করা অভিযোগের উপযুক্ত তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গিয়েছে। যেগুলো অতি শীঘ্রই আদালতে দাখিল করা হবে।