‘অনেক রক্তে এই রাষ্ট্র পেয়েছি, এতো ত্যাগের রাষ্ট্রকে এভাবে ব্যর্থ হতে
দিতে পারি না’, অব্যাহত মানুষ হত্যার মাধ্যমে সমগ্র দেশ-জাতিকে
ভীতসন্ত্রস্ত-আতঙ্কিত করে জঙ্গিবাদী বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে আয়োজিত
সংহতি সমাবেশে এমন কথা বলেছেন দেশ বরেণ্য অধ্যাপক এবং নিহত বিজ্ঞান লেখক অভিজিৎ রায়ের বাবা অজয় রায়।
মৃত্যুর এই মিছিল থামাতে শাহবাগে আয়োজিত মানুষ হত্যা ও জঙ্গিবাদ বিরোধী সংহতি সমাবেশে সভাপতিত্ব করার কথা থাকলেও শারীরিক অসুস্থতার কারণে অধ্যাপক অজয় নিজে উপস্থিত হতে পারেননি। তবে টেলিকনফারেন্সের মাধ্যমে দেশজুড়ে চলমান গুপ্ত হত্যার বিরুদ্ধে নিজের বক্তব্য তুলে ধরেন সাম্প্রদায়িকতার বিরুদ্ধে সোচ্চার এই অধ্যাপক।
তার কথার সূত্র ধরেই সংহতি সমাবেশে বক্তারা বলেন, মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত বাংলাদেশ এখন জঙ্গিদের বিলিয়ে দেয়া হচ্ছে। সব জেনে-বুঝেও আশ্চর্যরকম শান্ত সরকার-প্রশাসন। এখন দেশ মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক চেতনা থেকে যোজন-যোজন দূরে। রগ কাটা থেকে এখন গলাকাটায় উন্নীত হয়েছে তথাকথিত ডিজিটাল বাংলাদেশ।
সংহতি সমাবেশে বাংলাদেশ সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের সভাপতি গোলাম কুদ্দুছ বলেন, ‘দেশজুড়ে এসব হত্যাকাণ্ডে রাজনৈতিক প্রবণতা স্পষ্ট। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার শুরুর পর থেকেই নিয়মিতভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হচ্ছে দেশের অসাম্প্রদায়িক চেতনার মানুষেরা। ব্লগারদের নাস্তিক আখ্যা দিয়ে হত্যা করে তেমন সুবিধা করতে না পেরে এখন তারা নিরীহ মানুষ, নারী ও সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে টার্গেট বানিয়েছে। সংখ্যালঘুদের ভয় দেখিয়ে দেশ ছাড়তে বাধ্য করতেই এখন তাদেরকে লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। যা মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশে কোনো ভাবেই হতে দেয়া যায় না।’
অন্যান্য হত্যাকাণ্ডে সরকার নির্বিকার থাকায় দুর্বৃত্তরা পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রীকে হত্যা করতেও পিছপা হয়নি বলে অভিযোগ তোলেন বক্তরা।
সংহতি সমাবেশের অন্যতম আহ্বায়ক প্রকাশক রবীন আহসান বলেন, ‘অন্য হত্যাকাণ্ডগুলোতে হত্যাকারীদের না খুঁজে উল্টো হত্যার শিকারদের নিয়ে তদন্তের মতো হাস্যকর বিষয় নিয়ে প্রশাসনের উচ্চ পর্যায় থেকে কথা বলা হয়েছে। এই অবস্থায় হত্যাকাণ্ডের শিকার হলেন জঙ্গিবিরোধী কঠোর অবস্থান নেয়া পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী। পরিস্থিতি এতোটাই ভয়াবহ যে পুলিশ কর্মকর্তার স্ত্রী’র হত্যাকারী কে বা কারা এখন পর্যন্ত সেটাই জাতি জানতে পারলো না, খুনিরাও রয়ে গেলো ধরাছোঁয়ার বাইরে। খুনিদের গ্রেফতারে কার্যকর কোনো উদ্যোগ না নিয়ে সরকার কেবল জঙ্গিবাদ বিরোধী কথাই শুনিয়ে যাচ্ছে।’
রবীন আরও বলেন, ‘খুনের দায়ে যাদের ধরা হচ্ছে তাদের আবার ক্রসফায়ারে হত্যার ঘটনা ঘটছে। সত্যটা আড়ালেই থেকে যাচ্ছে।’
সাঁড়াশি অভিযানে যে ১২ হাজার মানুষকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের মধ্যে ১২ জনও জঙ্গি আছে কিনা তা নিয়েও সন্দেহ প্রকাশ করেন তিনি।
সংহতি সমাবেশে মহান মুক্তিযুদ্ধে পুলিশের অবদান তুলে ধরে জনগণের সেবায়-নিরাপত্তায় পুলিশ বাহিনীকে কর্তব্যে অটল থেকে রাজনৈতিক প্রভাবমুক্ত হয়ে কাজ করার আহ্বান জানানো হয়।
যেখানে সরকার নির্বিকার এবং প্রশাসনে ’৭১ এর পরাজিত শক্তির ‘ভূত’, সেখানে জনগণই নিজেদের নিরাপত্তার দায় নিজের হাতে তুলে নেয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে বলেও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে সংহতি জানাতে আসা ব্যক্তিরা।
দেশের আকাশে মার্কিন ড্রোন না দেখতে চাইলে এখনই মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের সব শক্তিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানিয়ে শেষ হয় সংহতি সমাবেশ।
লেখক, শিল্পী, শিক্ষক, শিক্ষার্থী, পেশাজীবি ও সংস্কৃতিকর্মীদের এই সংহতি সমাবেশে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন সাংবাদিক দীপঙ্কর গৌতম, ভাস্কর রাশা, সাবেক ছাত্র নেতা আব্দুল্লাহ আল কাফি রতন, ছাত্র ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জিএম জিলানী শুভ প্রমুখ।