এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সুরক্ষার জন্য আবাসস্থল ‘শিশু পল্লী’ নির্মাণের উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। প্রকল্প বাস্তবায়নে প্রাথমিকভাবে উখিয়ার নিবন্ধিত কুতুপালং রোহিঙ্গা ক্যাম্পের মধুছড়া এলাকায় ২শ’ একর জমি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বাসস জানায়, এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সনাক্ত করার কার্যক্রম শেষ হলে আগামী মাসে শিশু পল্লীর কার্যক্রম শুরু হতে পারে।
সমাজসেবা অধিদপ্তরের অতিরিক্ত পরিচালক (কার্যক্রম) ও ‘মিয়ানমার ন্যাশনাল অরফান চাইল্ড’ প্রকল্পের সমন্বয়কারী সৈয়দা ফেরদৌস আক্তার বলেন: আমরা ভাবছি এ মাসের মধ্যে এতিম রোহিঙ্গাদের সনাক্ত করার কাজ শেষ হবে। আগামী মাসে শিশু পল্লী নির্মাণের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তবে রোহিঙ্গারা এখনও আসছে, এই স্রোত আরও বাড়লে প্রকল্পের কাজ কিছুটা দীর্ঘায়িত হতে পারে’
‘সমাজসেবা অধিদপ্তরের ৮০ জন কর্মী ক্যাম্পগুলোতে গিয়ে খুঁজে খুঁজে এতিম শিশু সনাক্তকরণের দায়িত্ব পালন করছেন। তারা বিভিন্ন ক্যাম্পে গিয়ে শিশুর অভিভাবক ও মাঝিদের মাধ্যমে সঠিক তথ্য-উপাত্ত নিয়ে সনাক্তকরণের কাজ করছেন।
যারা বাবা-মা দুজনকেই হারিয়েছে, যারা শুধু বাবা হারিয়েছে, যারা প্রতিবন্ধী, আর যারা মা-বাবার খোঁজ পাচ্ছে না এমন চারটি শ্রেণিতে এদের ভাগ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে টেকনাফের ৫টি ক্যাম্পে সনাক্তকরণের কাজ শেষ হয়েছে। এখন চলছে বড় দুইটি ক্যাম্প কুতুপালং এবং বালুখালীতে।’
সমাজসেবা অধিদপ্তরের কক্সবাজার জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক প্রীতম কুমার চৌধুরী বলেন: এতিম রোহিঙ্গা শিশুদের সংখ্যা ২৫ হাজার পর্যন্ত হতে পারে। তাদের সুরক্ষার জন্য শিশু পল্লী গড়ে তোলা হবে।
মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর সঙ্গে সেনাবাহিনীর বহুদিন ধরে চলমান সংঘর্ষ-সহিংসতা সঙ্কট সমাধানে ২০১৬ সালের আগস্টে গঠিত হয় অ্যাডভাইজরি কমিশন অন রাখাইন স্টেট। জাতিসংঘের সাবেক মহাসচিব কফি আনানের নেতৃত্বে ওই কমিশন এক বছরের তদন্তের চূড়ান্ত প্রতিবেদন মিয়ানমারের ক্ষমতাসীন দলের প্রধান অং সান সু চির কাছে জমা দেয় চলতি বছরের ২৪ আগস্ট।
৬৩ পৃষ্ঠার এই প্রতিবেদন জমা দেয়ার কয়েক ঘণ্টা পরই ২৪ আগস্ট দিবাগত রাতে ত্রিশটি পুলিশ ও সেনাচৌকিতে রহস্যজনক হামলার ঘটনা ঘটে। হামলায় নিহত হয় নিরাপত্তা বাহিনীর ১২ সদস্য। তারপরই হামলার জন্য রোহিঙ্গা ‘জঙ্গি’দের দায়ী করে জবাব হিসেবে সেনাবাহিনী পুরো অঞ্চলে হত্যাযজ্ঞ শুরু করে।
সেনাবাহিনীর হামলা ও সহিংসতার মাত্রার ভয়াবহতার কারণে জাতিসংঘ একে ‘পাঠ্যবইয়ে যোগ করার মতো জাতিগত নিধনের উদাহরণ’ বলে অভিহিত করেছে।আন্তর্জাতিক বিশ্লেষকরা মনে করেন, আনান কমিশনের রিপোর্ট বাস্তবায়ন না করার উদ্দেশ্যেই মিয়ানমারের সেনাবাহিনী এই হত্যাকাণ্ড শুরু করে।