চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘এটাই সেই গণকবর’

বাংলাদেশে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি অস্থায়ী কবর আবিষ্কৃত হয়েছে। শুধুমাত্র বাবার ইচ্ছে পূরণ করতেই তাকে সঙ্গে নিয়ে নাইজেরিয়া থেকে বাংলাদেশে এসেছিলেন নাইজেরিয়ান সেনাপ্রধান লেঃ জেনারেল টুকুর ইউসুফ বুরাতাই।

তার বাবা ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই ওই বিশ্বযুদ্ধের সময় নাইজেরিয়ান সেনাবাহিনীর লেন্স কর্পোরাল ছিলেন। ৭৩ বছর পর পুরনো সেই কর্মস্থলেই আর একবার ফিরতে চেয়েছিলেন বুরাতাই। এতদিন পর পুরনো সেই স্মৃতিময় স্থানে ফিরে আবেগ আপ্লুত হয়ে পড়েন ইউসুফ।

বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি টিম নাইজেরিয়ান সেনাপ্রধানসহ তার পিতাকে নিয়ে চকরিয়ার পুরাতন বিমান বন্দর এলাকায় যায়। এরপর ফাঁসিয়াখালী সেনাক্যাম্প এলাকায় গিয়ে অবিষ্কার হয় ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময়কার একটি অস্থায়ী গণকবর। সেখানে নাম না জানা অনেক সৈনিককে অস্থায়ীভাবে সমাহিত করা হয়েছিল। পরে সেখানে থেকে তাদের মৃত দেহ নিয়ে যাওয়া হতো অন্যত্র।

সেই কবরে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই বলেন, কখনো কল্পনাও করিনি ৭৩ বছর আগের কর্ম এলাকায় ফেরা হবে। সে সময়ে যোদ্ধা হিসেবে বীরদর্পে পাহাড় সমতল দাঁপিয়ে বেড়িয়েছি। বয়সের ভারে আজ সেখানে হুইল চেয়ার ছাড়া হাঁটাও সম্ভব হচ্ছে না। 

এরপর আরো ২টি স্মৃতি বিজড়িত স্থান দেখার পর ডুলাহাজারা খৃষ্টানমেমোরিয়াল হাসপাতলে গেলে ইউসুফকে কর্তৃপক্ষ দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ের এলএমজির একটি ব্যবহৃত একটি বুলেটের খোসা উপহার দেন। পরে নাইজেরিয়ান সেনা প্রধানের সাথে আসা ৯ সদস্যের প্রতিনিধি দল রামু সেনানিবাস পরিদর্শন করেন। সেখানে মতবিনিময়ের পর তারা একটি গাছের চারা রোপন করেন। 

ইউসুফ মুরদিমি বুরাতাই বলেন, ৭৩ বছর আগে ১৯৪২ থেকে ১৯৪৪ সাল পর্যন্ত ২য় বিশ্বযুদ্ধের ৮১ ওয়েষ্ট আফ্রিকান ডিভিশনের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশের কক্সবাজারের চকরিয়ার চিরিংগা ও ডুলাহাজারা এলাকায় অবস্থান করে বর্মা ফ্রন্টে যুদ্ধ করেছিলাম। সেই সময়কার স্মৃতিগুলো প্রায়ই মনে পড়তো। যুদ্ধ পরবর্তী সময়ে দেশে ফিরে কর্মব্যস্ততায় সব কিছু ভুলে যাই। কিন্তু অবসরে যাবার পর একাকি সময়গুলোতে সেনাজীবনের নানা কর্মব্যস্ততার চিত্র চোখে ভাসতো। ইচ্ছে করতো একবার দেখে আসি। এরপর আমার ছেলে যখন সেনাপ্রধান হয় তখন আমার ইচ্ছের কথা তার কাছে প্রকাশ করি।

হুইল চেয়ারে বসেই স্মৃতিবিজড়িত পুরানো কর্মএলাকা পরিদর্শন করেছেন তিনি। 

সেনাবাহিনীর রামু ১০ পদাতিক ডিভিশনের জিওসি মেজর জেনারেল আতাউল হাকিম সারওয়ার হাসান বলেন, এ সফরের মধ্য দিয়ে দুই দেশের সর্ম্পক আরো দৃঢ় হবে।

স্থানীয় ডুলাহারার বাসিন্দা মহিউদ্দিন চৌধুরী জানান, ২য় বিশ্বযুদ্ধের সময় তার বয়স ছিল ১২ বছর, বাবা ছিলেন তৎকালীন সেনাবাহিনীর শেড নির্মাণের ঠিকাদার। বাবার সাথে এসে এ গণকবরে অনেককে অস্থায়ীভাবে দাফন করতে দেখেছেন তিনি। পরে তাদের মৃতদেহ অন্যস্থানে নিয়ে যাওয়া হয়।