রাজধানীর মোহাম্মদপুরে অবস্থিত লাউতলা এলাকার বছিলা খাল এক সময় বালুভর্তি নৌকা, লোক পারাপার করা ছোট নৌকা যেত। আর এই খালে ময়লা স্তুপের ওপর এখন দাঁড়িয়ে থাকা যায় নিমিষেই। এক কচুরিপানা ছাড়া বোঝার উপায় নেই এ বসিলা খালটি এক সময় বুড়িগঙ্গা নদীর সঙ্গে গিয়ে মিশত।
খালের ওপর তৈরি করা রিকশা স্ট্যান্ড, দোকানপাট ও ঘড়বাড়ি। কোথায়ও আবার প্রভাবশালীদের ছত্র-ছায়ায় খালের অনেকটা অংশ ভরাট করে ট্রাক স্ট্যান্ড করার তোড়জোড় চলছে। প্রায় ৩০ বছর ধরে লাউতলা এলাকার এই খালটির কোনো উচ্ছেদ অভিযানও পরিচালনা হয়নি বলে বিশাল খালটি আজ মরা খালে পরিণত হয়েছে। আর এই মরা খালের কারণে অল্প বৃষ্টিতে জলবদ্ধতার সৃষ্টি হয় মোহাম্মদপুরসহ বসিলার বিভিন্ন এলাকায়। শুধু জলাবদ্ধতা নয় খালের দুর্গন্ধ পানিতে অসুখ-বিসুখে ভুগতে হয় এলাকার মানুষদের।
দীর্ঘদিন খালের ওপরে বাড়ি করে থাকা ইব্রাহিম চ্যানেল অাই অনলাইনকে বলেন, “কোরবানি ঈদের পর থেকে খালের ভরাট করছে ট্রাক সমিতির মালিকরা। তারা নাকি ট্রাক স্ট্যান্ড বানাইবো। আমরা তো দিন আনি দিন খায় আমগো যাইতে কইলে আমরা যামু গা।” বড় বড় নেতারা আছে তাগো উপরে কিছু কইতে গেলেতো জীবন হারাইতে হইব।”
চা দোকানদার আবু কামাল বলেন, জন্মের পর থেকেই এইখানেই আছি। এই খালের সব রূপ দেখা আছে। যেই রূপে এখন আপনারা দেখছেন, সেই রূপ ছিল না। ধীরে ধীরে এই খালের আজ এই অবস্থা। এর প্রধান কারণ খালের পানি প্রবাহর জন্য যে সুয়ারেজ লাইন ছিল সেটি বসিলা কবরস্থান হওয়ার পর বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এরপর থেকে খালের পানি প্রবাহ কমে গিয়ে আস্তে আস্তে খালটির পানি শুকিয়ে গেছে।
খালটি কেন এত বছর যাবত উদ্ধার করা হয়নি? এমন প্রশ্ন করলে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ৩৩ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর তারেকুজ্জামান রাজীব চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঢাকার যত খাল রয়েছে উত্তরের মেয়র আনিসুল হক থাকার সময় সেগুলোর সীমানা নির্ধারণের কাজ শুরু হয়েছিল। সেইভাবে আন্তঃবিভাগে খাল উদ্ধার করার কাজ শুরু হয়েছে। আশা করি এই খালটিও উদ্ধার করা হবে। কাউকে কোনো প্রশ্রয় দেয়া হবে না। খাল উদ্ধার করা প্রক্রিয়ায় সঙ্গে শুধু সিটি করপোশেন নয় ঢাকা ওয়াসা এবং জেলা জেলা প্রশাসকদের তত্ত্বাবধায়নে করা হয়। তবে আমি মনে করি খাল উদ্ধারের কাজে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ইঞ্জিনিয়ারিং ইউনিট সম্পৃক্ত থাকলে রাজধানীর হাতিরঝিলের মতো খালগুলো সংস্কার করে পুনরুদ্ধার করা যাবে।
মেয়র আনিসুল হকের অনুপস্থিতিতে ঢাকার উত্তরের যেসব কাজগুলো শুরু হয়েছিলো সেগুলো এখন আপনারা কিভাবে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছেন এমন প্রশ্নে তরুণ কাউন্সিলর রাজীব বলেন, মেয়র আনিসুল হক অনুপস্থিতি হওয়ার পর ঢাকার উত্তরের চলমান কাজগুলো থেমে গিয়েছিল। আমরাও কাজের উৎসাহ হারিয়ে ফেলেছিলাম। নগরবাসীকে তিনি যে প্রত্যাশাগুলো দিয়েছিলেন সেই কাজগুলো শেষ করার জন্য আমাদের প্যানেল মেয়র করে দেওয়া হয়েছে। এই শক্তিশালী টিম নিয়ে ঢাকা উত্তরের কাউন্সিলরা চলমান কাজগুলো শেষ করবেন। এবং ভবিষ্যতে কাজগুলো যেন ঠিকমত করা হয় সেজন্য আমাদের সমন্বয় কমিটিও রয়েছে। এরই মধ্যে ঢাকা উত্তরে ৩৩ নং ওয়ার্ড মোহাম্মদপুর বাশঁবাড়ি এলাকার রাস্তার কাজের জন্য টাকা বরাদ্দ করা হয়েছে। এই রাস্তাটি ঠিক হলে বৃষ্টির সময় মোহাম্মদপুরবাসীকে ভোগান্তি সহ্য করতে হবে না। আমরা সব কাউন্সিলর চাই মেয়র আনিসুল হক লন্ডনে যাওয়ার অাগে তার কাজগুলো যে গতিতে রেখে গিয়েছিলেন সেই কাজের গতি যেন উনি ফিরে এসে দেখতে পান।
ঠিক একই সুরে কথা বললেন প্যানেল সদস্য মেয়র ডেইজী সাওয়ার। তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, আনিসুল হক না থাকার কারণে যে সমস্যাগুলো ছিল সে সমস্যা হয়তো অনেকটা কাটিয়ে উঠতে পারবে প্যানেল মেয়ররা। মেয়র থাকাকালে উচ্ছেদ অভিযানের জন্য একটি বিশেষ কমিটি গঠন করেছিলেন। সেই কমিটি মূলত কাজগুলো করে থাকেন। মেয়র নেই আর তার সুযোগে খাল দখল হবে এটি মেনে নেওয়া হবে না। মিডিয়ার সহযোগিতায় আমরা যেখানেই খবর পাচ্ছি সেখানেই খাল উদ্ধার অভিযান পরিচালনা করছি। ভবিষ্যতে এই কাজ অব্যাহত থাকবে।