বড় দুখি সে। জন্মের পর থেকেই হুমকির মুখে। জন্মের চার বছরে পিতৃবিয়োগ। আর তারপর থেকে চলছে এতিমকে শোষণ। এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, লাখো শহীদের আত্নত্যাগে, কোটি মানুষের দুঃখ সাথে নিয়ে জন্ম। তার কপালে সুখ তো অমাবস্যার চাঁদ। তবুও স্বপ্ন দেখে তার মন, ভালো থাকার, রাখার। বঞ্চনা, ধোঁকা, অত্যাচার যেন ললাটের লিখন। সবাই যেন তার জন্য কাদম্বরী। তার তৃষিত হৃদয় খুঁজে ফেরে একজন হেমাঙ্গিনীর, মেজদিদির। এতো মানুষ এই দেশে কিন্তু একজন মেজদিদি মেলেনা।
বছর যায়, মাস যায়। কেষ্টর মতো দুখি বাংলা পায় না একজন মেজদিদি। যে কিনা হাজারও কাদম্বরীর হাত থেকে নিজের নিরাপদ বুকে ঠাই দেবে। আগলে রাখবে শকুনি দৃষ্টি থেকে। অত্যাচার থেকে। শোষন-পীড়ন, অন্যায়-নিপীড়ন, মিথ্যা-লোভ-ধোকাবাজি থেকে। দিন যায় মাস যায়। ১৪ বছরে কেষ্ট দেখা পেয়েছিল মেজদিদির। আর বাংলা দেখা পেল দীর্ঘ ২৫ বছর পরে। তবুও তো পেল। শেখ হাসিনা বাংলার মেজদিদি যেন। আগলে রাখতে চান বাংলাকে আদর দিয়ে যত্ন দিয়ে কিন্তু চারপাশের কাদম্বরীদের জন্য বারবার বাধাগ্রস্থ হয় মেজদিদি।
মেজদিদির যত্নে বাংলার অর্থনৈতিক উন্নয়নের গ্রাফ দিনে দিনে বাড়তেই থাকে। তার মায়া মমতায় বাংলার চেহারা পাল্টাতে থাকে। ফলে অনেকের চক্ষুশীল হয়ে পরে বাংলা। মেজদিদির সব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হতে চলেছে যেন। সোনার খনি লুটের মতো বাংলা লুট হচ্ছে। স্থবির হয়ে পড়ছে জনজীবন। পথে মানুষের, রিক্সা, গাড়ি ও হকারের চিৎকার। দিনে দিনে বাড়ছে ক্ষুদ্ধতা। নেই প্রতিকারের চিন্তা, কিন্তু ব্যস্ত সবাই নিজের আখের গোছাতে। কাদম্বরীরা টাকা সম্পদ ও ক্ষমতা ছাড়া যুগে যুগে কি আর বুঝেছে।
বাংলার নাভিশ্বাস উঠে- দুঃশাসন-দূষণ-দুর্নীতিতে। অন্যায় আর অসভ্যতায়। বাংলা পারে না বুক ভরে নির্মল বাতাস নিতে। নদী, পুকুর বা লেক থেকে বয়ে আসা একরাশ ভেজা বাতাসে পায় না সুনির্মল গন্ধ। কারখানা, শহর আর জলযানের ফেলা বর্জ্য আর তার পচনের গন্ধে গা গুলিয়ে ওঠে। বাংলা ভাবে আমাকে ভালোবাসার মতো সত্যিকারের দেশ প্রেমিক কি নেই! শহর ইট, কাঠ, পাথরের। সবুজের দেখা মেলে কিঞ্চিৎ। গাছ কেটে, বন উজার করে, পুকুর, লেক এমনকি নদী ভরাট করে চলছে জায়গা দখল। গড়ে উঠছে বাসাবাড়ি, মার্কেট ও বিনোদনক্ষেত্র। আহা ভাবার কেউ নেই, কেউ দেখার নেই। মেজদিদি নানান কাজে ডুবে থাকে মাঝরাত অব্দি। যখনি তিনি কেষ্ট মানে বাংলার খোঁজ খবর করেন তার চারপাশের কাদম্বরী হাত-পা নাচিয়ে জানান, সব কুশল মঙ্গল। সত্যি খবর পায় না মেজদিদি। যা তার কানে দেয়া হবে উনি শুধু সেইটুকুই শোনেন। যা তাকে শোনানো হয় তাই শোনেন। এর বাইরে নিজে থেকে পান না বাংলার খবর। ধুঁকতে থাকা বাংলা ভাবে মেজদিদি একদিন সত্যি সত্যি তার অবস্থার সঠিক চিত্র পাবেন। সেদিন সব কাদম্বরীকে পিটিয়ে চৌদ্দ শিকে ভরবেন।
মেজদিদি জানে না তার চারপাশের কাদম্বরীরা বন কেটে পরিষ্কার করছে। বাংলার বন উজার করে হচ্ছে। বিদ্যুৎ উৎপাদনের নামে। শতবর্ষী গাছগুলি কেটে ফেলবে, কোন বিকল্প চিন্তা করছে না কেউ, কারণ গাছ কেটে পয়সা আসবে পকেটে। আবার চার লেন বানানোর নামে চলবে লুঠতরাজ। বাংলার বুকের জমিনের রাস্তাগুলির গাছ রেখেই উন্নত করা যায় চার লেনে। কিন্তু এখানের কাদম্বরীরা শুধু গাছের না তলারটাও খাবে বলে হামলে বসে আছে। ব্যাংক শেষ, শেয়ারবাজার রুগ্ন। তেল- গ্যাস, ইলেক্ট্রিসিটি সব নৈব নৈব চ। তবুও বাংলার মানুষের উপর দাম বাড়ানোর বোঝা চাপিয়ে চলছে লুট উৎসব। বাংলায় সব থেকে পপুলার মেলা হলো ঘুষের মেলা, দুর্নীতির মেলা। কেউ দেখার নেই। মেজদিদি হেমাঙ্গিনী যাদের রেখেছে বাংলাকে দেখাশোনার জন্য তারায় উল্টো বাংলাকে মেরে কেটে, শুষে ছোবড়া করে ফেলছে। সুজলা, সুফলা, শস্য-শ্যামলা নদী মাতৃক বাংলা আজ ইট পাথরের বস্তি, নেই সুচারু নগর-পরিকল্পনা, শুধু চলছে কাদম্বরীদের ‘জোড় যার মুল্লুক তার’ নীতি। চলছে সবখানে নিয়ম ভাঙার উৎসব। মেজদিদি হাত পেতে ঋণ নিচ্ছেন বাংলাকে শিক্ষা-দীক্ষায়, খাদ্যে-বস্ত্রে, উৎপাদনে স্বয়ংসম্পূর্ণ করতে। সেই টাকা কাদম্বরীর দল গাপ করছে। ফলে বানাতে না বানাতে ভেঙে পড়ছে পুল, ব্রিজ, দু দিনেই রাস্তা হয়ে উঠে এবড়ো খেবড়ো। বছরব্যাপী চলে রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ির মেলা। ঘরে নেই গ্যাস দিনের পর দিন, মাস শেষে গুনে চলো ভাড়ার টাকা। দুর্নীতিতে, অনিয়মে নৈরাজ্যতার প্রতীক হয়ে গেছে বাংলা। বাংলার বুকে অনেক কষ্ট কারণ তার মেজদিদি চেয়েও পারছে না তাকে নিরাপদে রাখতে।
বাংলা স্বপ্ন দেখে, হেমাঙ্গিনী যেমন সমাজ সংসারের সাথে যুদ্ধ করে নিরাপদ আশ্রয় দিয়েছিল কেষ্টকে তেমনি শেখ হাসিনা একাই যেন তার চারপাশের কাদম্বরীদের দমন করে কেষ্টকে মানে বাংলাকে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশকে তার বুক দিয়ে আগলে রাখতে পারেন। দুষ্টের দমন করে পিতাহীন বাংলাদেশের মেজদিদি হয়েই থাকবেন তিনি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে)