চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘এই শো হবে একান্তই গিটারের, আইয়ুব বাচ্চুর গিটারের’

আইয়ুব বাচ্চু। দেশের শীর্ষস্থানীয় ব্যান্ড এলআরবির প্রধান। লিড ভোকাল হলেও তাকে বলা হয় গিটার লিজেন্ড। গিটারকে সঙ্গী করেই তিনি সংগীত যাত্রা শুরু করেন। পরবর্তীতে গানের শিল্পী হিসেবে নিজের পরিচিতি তুলে ধরেন। কিন্তু গিটারের প্রতি তার শৈশবের ভালোবাসা এক মুহূর্তের জন্যও ফিকে হয়নি। এজন্য গিটারের ওপর একটি বিশেষ শো করতে যাচ্ছেন। এর নাম দিয়েছেন ‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’। আগামী শুক্রবার বিকালে কৃষিবিদ ইনস্টিটিউট মিলনায়তনে অনুষ্ঠানটি অনুষ্ঠিত হবে। এ উপলক্ষে আজ বুধবার দুপুরে চ্যানেল আই কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এখানে উপস্থিত ছিলেন আইয়ুব বাচ্চু ও চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর। সংবাদ সম্মেলন শেষে চ্যানেল আই অনলাইনকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে আইয়ুব বাচ্চু জানিয়েছেন এই গিটার শো ও তার সংগীত জীবনের নানা কথা।

‘সাউন্ড অব সাইলেন্স’ শো নিয়ে বলুন।

২০০৭ সাল থেকেই আমি গিটারের এমন শো করছি। কিন্তু এগুলো একান্তই ঘরোয়া। গত কিছুদিন ধরে আমার মনে হচ্ছিল, এটা আরও বড় জায়গায় করা দরকার। এজন্য এই উদ্যোগ নিয়েছি। এই শো হবে একান্তই গিটারের, আইয়ুব বাচ্চুর গিটারের। শোতে গিটার কী কথা বলবে, সেটাই কান দিয়ে শুনবে আর গিটার নাচন দেখবে দর্শক-শ্রোতারা। পর্যায়ক্রমে দেশের ছয়টি বিভাগীয় শহরে গিটার শো করব। আমার আগের কিছু ট্র্যাকের সঙ্গে নতুন কিছু যুক্ত করে এই শোতে উপস্থাপন করব। গিটারকে তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে দিতেই আমার এ প্রয়াস। টিকিট পাওয়া যাবে শোর ভেন্যুতে আর টিকিট চাই ডটকম- এ। এই শোয়ের পর অডিও শোনা যাবে বাংলা ঢোল আর ভিডিও দেখা যাবে বাংলা ফ্লিক্সে।

সংবাদ সম্মেলনে বক্তব্য রাখছেন আইয়ুব বাচ্চু, পাশে চ্যানেল অাইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর ও বাংলাফ্লিক্সের এনামুল হক

গিটারের এই শো করার প্রেরণা কোথায় পেলেন?

আমি তো গিটারের ভক্ত সেই শৈশব থেকেই। আমার পরিবারও সেই গিটারপ্রীতিকে উৎসাহ দিয়েছে সবসময়। গিটার প্রেম থেকেই ফরিদুর রেজা সাগর ভাইকে বলি এমন একটি আয়োজন করা যায় কিনা। তিনি সঙ্গে সঙ্গে রাজি হয়ে যান। বাংলাফ্লিক্সের এনামুল হক এগিয়ে আসেন সহযোগিতায়। এগিয়ে আসে কনসিটো পিআর। উইজার্ড শোবিজ, ডিজে প্রো যৌথভাবে এ শো আয়োজনে সহযোগিতা করছে। সঙ্গে আছে আমার প্রতিষ্ঠান এবি কিচেন। সবার অনুপ্রেরণা আর সহযোগিতায় এই শো করার সাহস করেছি।

গিটার নিয়ে সংগীতযাত্রার প্রথম দিকের কথা বলুন।

গিটার বাজানোর প্রথম নেশাটা ধরে স্যানটানা আর রিচি ব্র্যাসকোর বাজানো দেখে। এর বাইরে আমার গিটার বাজনোর প্রেরণা গুরু আজম খানের লিড গিটারিস্ট নয়ন মুন্সির বাজানো দেখে। প্রথমে আমি তাদেরকে অনুকরণ করে নিজেই গিটার শেখা শুরু করি। তারপর বিভিন্ন ওস্তাদের কাছে গিয়ে গিটারটা রপ্ত করি।

গিটার বাজিয়ে প্রথম উপার্জনের কথা মনে আছে?

ঠিক প্রথম অভিজ্ঞতার কথা তো বলতে পারব না। তবে প্রথম দিককার কথা বলতে পারব। আমি নিজেকে ‘ভাড়া খাটা গিটারের ভাড়া খাটা প্রেমিক বলি’। কেননা প্রথম দিকে সেটা সত্তরের দশকে আমি ভাড়ায় গিটার বাজাতে যেতাম। গিটারটাও ভাড়া নিয়ে যেতাম। ওই সময় ডিসকো কোম্পানির একটি গিটার আমার এক বন্ধুর কাছ থেকে ৩০ টাকা দিনপ্রতি ভাড়ায় গিয়ে শো করতাম। ভাড়া হিসেবে ৩০ টাকা দেওয়ার পর আরও ৫০ থেকে ৬০ টাকা রয়ে যেত। এটা দিয়েই আমার দিন চালাতাম। এখন কিন্তু আমার নিজের ৩৯টা দেশি-বিদেশি গিটার আছে। কিন্তু সেই ভাড়া খাটা গিটারের দিনগুলোর কথা আজও জীবন্ত হয়ে আছে আমার মনে।

অাইয়ুব বাচ্চু

প্রথম গিটার পেয়েছিলেন কার কাছ থেকে?

বাবার কাছ থেকে। সেটা ১৯৭৪ সালের দিকে। তখন আমি ক্লাস সেভেনে পড়ি। সেটা ছিল একটি অ্যাকুস্টিক গিটার। পরে এটি চুরি হয়ে যায়। আমি ধারণা করি, আমার ঘনিষ্ঠ কেউ কাজটা করেছে।

বাদ্যযন্ত্র হিসেবে গিটার তরুণদের সঙ্গে কীভাবে সম্পর্ক করে?

গিটার হলো তারুণ্যের প্রতীক। আমার সময়েও দেখেছি, এখনো দেখছি রাস্তায় সারি বেঁধে বসে তরুণরা গিটার বাঁজিয়ে গান করে। একটা গিটার হাতে থাকলে ছেলেমেয়েরা নিজেদের অনেক বড় মনে করে। এই যে একটা বোধ, এটাই আমাকে অনুপ্রেরণা যোগায় এখনো।

অনেক দিন আপনার নতুন কোনো অ্যালবাম আসছে না, কেন?

এখন তো আসলে অ্যালবাম বের হচ্ছে না। কিংবা কোম্পানিগুলো অ্যালবাম প্রকাশের আগ্রহ প্রকাশ করছে না। আমি অ্যালবাম প্রকাশ ছাড়া নতুন কোনো গান বাজারে ছাড়ব না। আমি ইউটিউবে প্রকাশের জন্য একক কোনো গান গাইব না। আমি তথাকথিত প্রতিযোগিতার বাজারে থাকতে চাই না। এজন্য আপাতত আমার কোনো গানের খবরও পাওয়া যাবে না।

গিটার বাজানো নিয়ে তরুণদের উদ্দেশ্যে কিছু বলুন।

তরুণ গিটার বাদকদের উদ্দেশ্যে বলব, বুক ফুলিয়ে তোমরা গিটার বাজাও। নিজের সর্বোচ্চটা ঢেলে গিটার বাজাও। গিটার তোমাকে প্রতিদান দিবে। গিটারের ছয়টা তারই তোমার কথা শুনবে।

সাক্ষাৎকারের ভিডিও অংশবিশেষ দেখতে পারেন এই লিঙ্কে

অালোকচিত্রী : সাকিব উল ইসলাম ও জাকির সবুজ

ভিডিও :সাকিব উল ইসলাম

নির্মাণ: জাকির সবুজ