এলাম, দেখলাম, জয় করলাম- কথাটার আদর্শ উদাহরণ যেন মোস্তাফিজুর রহমানের ক্যারিয়ার শুরুর সময়টা। ঘরোয়া পর্যায়েই যার খুব বেশি পরিচিতি ছিল না, সেই ফিজ বল হাতে নিয়ে টানা জাদু দেখিয়ে গেছেন। তার পায়ে লুটিয়ে পড়া সাফল্য বাংলাদেশ ক্রিকেটের স্মরণীয় কিছু জয়ে রেখেছে ভূমিকা। কাটার মাস্টারের প্রতি প্রত্যাশার পারদটাও তাই ঊর্ধ্বমুখী। কিন্তু চোট থেকে ফিরে মোস্তাফিজও এখনো স্বরূপে ফিরতে পারেননি। নেমেই আর উইকেটের ঝড় তুলতে পারছেন না। তার চ্যালেঞ্জিং সময়টাকে মাশরাফি বিন মুর্তজা স্বাভাবিকভাবেই দেখছেন। ওয়ানডে অধিনায়ক বলছেন, এখনকার মোস্তাফিজই নরমাল, আগেরটা ছিল অ্যাবনরমালিটি।
মোস্তাফিজ মানেই বল হাতে ভুরিভুরি উইকেটের ঢল। সবার মনে এমন একটা রেখাচিত্রই গেঁথে আছে। আদতে জীবনের মত ক্রিকেট মাঠের উত্থান-পতনটাও বেশ বাস্তবসম্মত। চোট থেকে ফিরে মোস্তাফিজও সেই কঠিন সময়টা দেখছেন। সময়টাতে সতীর্থকে আগলেই রাখছেন অভিভাবক ম্যাশ, ‘আমার কাছে সবসময়ই মনে হয়েছে মোস্তাফিজ এখন যেটা করছে সেটাই নরমাল। এর আগে যেটা করেছে ওটা অ্যাবনরমালিটি ছিল। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে আপনি এসেই চার-পাঁচ উইকেট পাবেন, এটা অবিশ্বাস্য ব্যাপার। এখন ওকে কষ্ট করে উইকেট নিতে হবে। এটাই স্বাভাবিক।’
মোস্তাফিজের এই কষ্টটা অভিজ্ঞতা থেকেই বোঝেন মাশরাফি। ক্রিকেটের আধুনিক যুগে প্রতিটি খেলোয়াড়কে নিয়েই চুলচেরা বিশ্লেষণ করা হয়। ফিজের শক্তির জায়গাগুলো নিয়ে প্রতিপক্ষ দলগুলো কাটাছেড়া করবে সেটাই স্বাভাবিক। কথাটা আরেকবার মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি, ‘ওকে ব্যাটসম্যানরা রিড করছে, দলগুলো ওকে নিয়ে বিশ্লেষণ করছে, তারা ওর শক্তির জায়গাগুলো খুঁজে বের করছে। ওকে এখন সেসব টপকেই উইকেট নিতে হবে।’
মাঠের খেলায় স্বাভাবিক এই চ্যালেঞ্জটা আছে। চোটও বারকয়েক হানা দিয়েছে ছোট্ট এই ক্যারিয়ারে। সঙ্গে আছে বাড়তি প্রত্যাশার চাপ। মাশরাফি অবশ্য প্রত্যাশাতে নিয়ন্ত্রণ টানার কথাই বললেন, ‘মোস্তাফিজের জন্য চোট কিছুটা সমস্যা তৈরি করেছে, চোট থেকে ফিরেছে তিন-চার মাস গেছে মাত্র। ওর বয়সটাও তো ১৯-২০! সবদিক থেকে তাকান, সবকিছু মিলিয়ে ওর অবস্থাটা একটু কঠিন। এ অবস্থায় আমরা যদি ওকে বেশি প্রেশার করি, ওর জন্য ব্যাপারগুলো আরো কঠিন হবে।’
যদি ফিট থাকেন, সামনের এক দশক টাইগার ক্রিকেটকে অনেককিছুই দেয়ার আছে মোস্তাফিজের। সেটা তো আর নতুন করে প্রমাণ করতে হবে না। সোনার ডিমপাড়া হাঁসটাকে তাই দেখেশুনে রাখতে হবে। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক বললেন, ‘আমার মনে হয়, ও অলরেডি প্রমাণ করেছে যে- বাংলাদেশের ভবিষ্যতের জন্য ও অসাধারণ কিছু। ওকে যদি আমরা নির্ভার রাখতে পারি, ওর মত খেলতে দেই, আগে যেটা করে এসেছে সেদিকে না তাকিয়ে খেলতে দেই, বাস্তবতা দিয়ে যদি ভাবি; তাতে আগামী ১০ বছরের জন্য মোস্তাফিজ হবে আমাদের অনেক বড় সম্পদ।’