চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

‘এই প্রথম’ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্ন ফাঁস

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে প্রশ্নে শুক্রবার ঘ ইউনিটের পরীক্ষা হয়েছে সে প্রশ্নের ই্ংরেজি অংশের প্রশ্ন আগের রাতেই অনেকের হাতে পৌঁছে যায়। এ ঘটনার জেরে আটক ছাত্রলীগ নেতার বহিষ্কারের ঘটনাও ঘটেছে। প্রশ্ন ফাঁসের প্রমাণসহ গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশ ও বহিষ্কারের ঘটনা ঘটলেও বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এখনও বলছে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ ‘গুজব’।

পরীক্ষা শুরু হওয়ার পর বিভিন্নভাবে প্রশ্নপত্র বাইরে চলে যাওয়ার অভিযোগ এর আগেও ছিল। কিন্তু পরীক্ষার আগের রাতেই প্রশ্ন বাইরে চলে যাওয়ার ঘটনা এর আগে কখনও ঘটেনি বলে জানিয়েছেন ১৯৮৫ সাল থেকে বর্তমান সময় পর্যন্ত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করা কয়েকজন সাংবাদিক।

তারা বলছেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে বিভিন্ন বিষয় নিয়ে বিভিন্ন সময়ে প্রশ্ন উঠলেও একমাত্র ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কখনও প্রশ্ন ওঠেনি। এই একটি মাত্র বিষয়ই ছিল গৌরবের। বিশ্ব র‌্যাংকিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ওপরে উঠে আসার অন্যতম কারণও ছিল এর ভর্তি প্রক্রিয়া।

চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে কথা বলেছেন একাত্তর টিভির বার্তা পরিচালক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, নিউজ২৪ এর বার্তা সম্পাদক বোরহানুল হক সম্রাট, দৈনিক প্রথমে আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রিয়াদুল করিম, বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডট কম’র জ্যেষ্ঠ প্র্রতিবেদক সুলাইমান নিলয় এবং দৈনিক ইত্তেফাক’র নিজস্ব প্রতিবেদক মাহবুব রনি। তারা সবাই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন।

সৈয়দ ই্শতিয়াক রেজা

১৯৮৫-৯০ সাল পর‌্যন্ত দৈনিক বাংলার বাণী এবং ইংরেজি দৈনিক বাংলাদেশ অবজারভার’র বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টার হিসেবে কাজ করা সৈয়দ ই্শতিয়াক রেজা চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমার বিশ্ববিদ্যালয় রিপোর্টিংয়ের প্রায় চার বছরে প্রশ্ন ফাঁসের কোন অভিজ্ঞতার সম্মুখিন হইনি।

শুক্রবারের প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনায় বিস্ময় প্রকাশ করে ১৯৯৮-২০০২ সাল পর্যন্ত দৈনিক প্রথম আলোর বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা বোরহানুল হক সম্রাট চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা অনিয়ম ছিল।নানা বিষয় নিয়ে প্রশ্নও ছিল।কিন্তু ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোন প্রশ্ন কখনই ছিল না। প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা তো ছিলই না।

বোরহানুল হক সম্রাট

তিনি বলেন, আমার যতদুর মনে পড়ে ২০০০ সালের দিকে র‌্যাঙ্কিংয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এশিয়া মহাদেশের মধ্যে ২৬ তম স্থানে চলে এসেছিল। যেসব মানদণ্ডে এই অগ্রগতি তার মধ্যে অন্যতম ছিল ভর্তি পরীক্ষার এই স্বচ্ছতা।

২০০৫ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত প্রথমে দৈনিক করতোয়া এবং পরে দৈনিক জনকণ্ঠ’র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেছেন রিয়াদুল করিম। চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: আমি যতদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সাংবাদিকতা করেছি, আগের রাতেই প্রশ্ন ফাঁস হয়ে যাওয়ার মত কোন ঘটনা ঘটেছে বলে আমার মনে পড়ে না।

রিয়াদুল করিম

বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা বিষয়ে অনিয়ম থাকলেও ভর্তি পরীক্ষা নিয়ে কোন অনিয়ম বা প্রশ্ন ফাঁসের ঘটনা শোনেনটি বলে জানান ২০০৭ থেকে ২০০৯ সাল পর্যন্ত দৈনিক জনতা এবং বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা  সুলাইমান নিলয়।

সুলাইমান নিলয়

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: আমাদের সময়ে আমরা বিশ্ববিদ্যালয়ের যে বিষয়টি নিয়ে সবচেয়ে বেশি গর্ব করতাম সেটা হলো ভর্তি পরীক্ষা। অন্যান্য অনিয়ম নিয়ে সংবাদ প্রকাশ করলেও ভর্তি প্রক্রিয়ায় কোন ফাঁক ফোকর কখনই পাইনি।

২০১০ সাল থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ‍শুরু হয় অনলাইন ভর্তি প্রক্রিয়া। এর এরও আগে থেকে ২০১৩ সালের শেষ দিক পর্যন্ত দৈনিক ইত্তেফাকের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা মাহবুব রনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন: আমাদের সময় কেন্দ্র থেকে প্রশ্নপত্র বেরিয়ে যাওয়ার ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আগের রাতেই প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার গুজব ছড়ালেও বা নিজেরাও সন্দেহ করলে এরমক প্রমাণ পাইনি কখনও।

মাহবুব রনি

২০১৩ থেকে বর্তমান পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করা একাধিক রিপোর্টার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেছেন ২০১০ সালের পর থেকে প্রতি বছর প্রতিটি ইউনিউটের ভর্তি পরীক্ষা থেকেই একাধিক শিক্ষার্থীকে অসদূপায় অবলম্বনের দায়ে আটক করা হয়েছে। তবে এদের আটক করা হয় মূলত পরীক্ষা শুরুর পর অত্যাধুনিক প্রযুক্তির ডিভাইজ ব্যবহার করে প্রশ্ন পত্র বাইরে পাঠানো এবং বাইরে থেকে উত্তর সংগ্রহ করার দায়ে। পরীক্ষার আগেই প্রশ্ন ফাঁস হওয়ার ঘটনার প্রমাণ এই প্রথম্ আমরা হাতে পেলাম।

তবে আগের রাতে প্রশ্ন ফাঁসের ব্যাপারটিকে এখনও গুজব এবং অসাধু মহলের চক্রান্ত হিসেবে দেখছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মোঃ আখতারুজ্জামান। এ জন্য তদন্ত কমিটি গঠন বা পরীক্ষা বাতিলের কোন প্রশ্নই আসে না বলে সাফ জানিয়ে দেন তিনি।

চ্যানেল আই অনলাইনকে তিনি বলেন: শুক্রবার বেলা দুইটার আগে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে আমি প্রথম শুনি যে প্রশ্ন ফাঁসের অভিযোগ শোনা যাচ্ছে।এর আগে আমার কাছে কেউ বলেনি, অভিযোগও করেনি। তাই আমরা মনে করছি এটা একটা অশুভ মহলের ষড়যন্ত্র।

আগের রাতেই প্রশ্ন পাওয়ার প্রমাণ সম্পর্কে দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তিনি বলেন: আমিও জানি প্রশ্ন বাইরে গিয়েছে।তবে সেটা গিয়েছে সকাল ১০টার পর অর্থাৎ পরীক্ষা শুরুর পর। এর আগে প্রশ্ন বাইরে যাওয়ার কোন প্রশ্নই আসে না।

‘‘আমি তথ্য-প্রযুক্তিবিদদের সঙ্গে কথা বলেছি, তারা আমাকে বলেছে, প্রযুক্তির সাহায্যে সময়সহ এরকম আরও অনেক কিছু ম্যানুপুলেশন করা সম্ভব।তারপরেও কারা এসব কাজ করছে বা গুজব ছড়াচ্ছে তাদের তাদের খুঁজে বের করা হবে।’’

বিকেলে প্রশ্ন ফাঁসের এ অভিযোগকে অবিশ্বাস্য বলেছেন বলেছেন ঘ ইউনিট ভর্তি পরীক্ষার মূল সমন্বয়ক অধ্যাপক সাদেকা হালিমও।

পরীক্ষা চলাকালীন অসদুপায় অবলম্বনের জন্য বিভিন্ন কেন্দ্র থেকে ১২ জন এবং আগের রাতে দু’জনসহ মোট ১৪ জনকে আটক করা হয়েছে। এ বছর ঘ ইউনিটে ১ হাজার ৬১০টি আসনের বিপরীতে ৯৮ হাজার ৫৪ জন শিক্ষার্থী আবেদন করেছেন।