চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

ঋণের সুদ ফের দুই অংকে, উদ্বিগ্ন ব্যবসায়ীরা

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের চাপের পাশাপাশি ব্যবসায়ীদের দীর্ঘ দিনের দাবিতে গত বছর ঋণের সুদ নেমে এসেছিল এক অংকের ঘরে। তবে চলতি বছরের শুরুতে তা আবার চলে গেছে দুই অংকের ঘরেই। ঋণের সুদ নিয়ে বছরখানেক স্বস্তিতে থাকলেও আবার তাদের মোকাবিলা করতে হচ্ছে সেই পুরনো সমস্যা। এতে উদ্বেগ বাড়ছে উদ্যোক্তা ও ব্যবসায়ীদের মধ্যে।

এতে উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই উল্লেখ করে অর্থনীতিবিদরা বলছেন, আমানতের সুদ হার কিছুটা বেড়ে যাওয়ায় ঋণের সুদ সামান্য বেড়েছে। মূলত এডিআর রেশিও কমানোর কারণে তা হচ্ছে। আমানতের সুদ কমলে তা আবার সমন্বয় হয়ে যাবে।

তবে সুদ হার যেন স্প্রেডসীমা (ঋণ ও আমানতের সুদ হারের ব্যবধান) লঙ্ঘন না করে সে বিষয়ে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ ব্যাংককে শক্ত হাতে দমন করতে হবে বলে পরামর্শ দিয়েছেন তারা।

সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এডিআর রেশিও (আমানতের বিপরীতে ঋণ বিতরণের পরিমাণ) কমিয়ে দেয়। এতে কিছুটা তারল্য সংকটে পড়ে ব্যাংকগুলো। ফলে তারল্য সরবরাহ বাড়াতে আমানতের সুদ হার বাড়িয়ে দেয় তারা। আমানতের সুদ বাড়ানোর কারণে ঋণের সুদও বাড়িয়েছে ব্যাংকগুলো। এতে বিপদে পড়ে গেছেন ঋণ নিয়ে ব্যবসা করা উদ্যোক্তারা।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ঋণের সুদ বাড়ার কারণে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান কমে যাবে। বাড়বে ব্যবসার খরচ। ফলে পণ্যের দাম বাড়বে। যা উদীয়মান অর্থনীতিতে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করবে।

ঋণের সুদ বাড়ার কারণে বিনিয়োগে বড় ধরনের নেতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে মনে করেন ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের প্রথম সহ-সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম।

তিনি চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, কেন্দীয় ব্যাংকের এবারের মুদ্রানীতি কিভাবে বিনিয়োগ বান্ধব হলো; না তা আমাদের কাছে স্পষ্ট নয়। সুদ হার বাড়লে অবশ্যই ব্যবসার ব্যয় বাড়বে। বিনিয়োগ কমবে। ফলে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে না। আর এর পুরো প্রভাব পড়বে ভিশন ২০২১ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে।

শেখ ফজলে ফাহিম বলেন, আমরা এখনও এসএমই খাতে এক অংক সুদে ঋণ নিশ্চিত করতে পারিনি। এটা ভাবনার বিষয়। এর মধ্যে আবারও বেড়ে যাচ্ছে ঋণের সুদ। এটা ব্যবসার জন্য বড় প্রতিবন্ধকতা।

তৈরি পোশাক প্রস্তুত ও রপ্তানিকারকদের সংগঠন বিজিএমইএ’র সভাপতি সিদ্দিকুর রহমান চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বর্তমানে উন্মুক্ত বিশ্বায়নের যুগে ব্যবসায় বড় ধরনের প্রতিযোগিতা রয়েছে। এ প্রতিযোগিতার মধ্যে ঋণের সুদ হার দুই অংকের ঘরে যাওয়া আমাদের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ।

তিনি বলেন, সুদ বাড়লে বিনিয়োগ কমবে। আর তখন কর্মসংস্থান কমার পাশাপাশি কমবে রপ্তানি আয়ও। যা সার্বিকভাবে অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।

ঋণের সুদ হার বাড়ানো ঠিক নয় বলে মনে করেন অর্থনীতিবিদরাও। তাদের মতে, স্প্রেডসীমা আরো কমিয়ে আনলে ঋণের সুদ বাড়তো না।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ফরাস উদ্দিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ঋণের সুদ বাড়ানো মোটেও ঠিক হবে না। পৃথিবীর মধ্যে স্ট্যান্ডার্ড স্প্রেড রেট হলো সাড়ে ৩ শতাংশ। কিন্তু বাংলাদেশের মানুষ সহনশীল বলে তা ৫ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। তারপরও বিদেশি ব্যাংকগুলোর ক্ষেত্রে এই হার ৭ থেকে ৮ শতাংশ পর্যন্ত হয়ে থাকে। যা অনুচিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে হবে।

ফরাস উদ্দিন বলেন, যারা স্প্রেডসীমা লঙ্ঘন করে তাদের খুব শক্ত হাতে নিয়ন্ত্রণ করতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংককে। কারণ সুদ হার বাড়লে বিনিয়োগ বাধাগ্রস্ত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহীম খালেদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এডিআর রেশিও কমে যাওয়ায় আমানতের সুদ হার বেড়েছে। আর আমানতের সুদ বাড়ায় ঋণের সুদ হার কিছুটা বেড়েছে। এছাড়া ঋণের চাহিদা বেশি থাকায়ও সুদ বেড়েছে। তাছাড়া সুদ হার নির্ভর করে বাজারের উপর। এটা বাংলাদেশ ব্যাংক নির্ধারণ করে না।

আমানতের সুদ কমলে ঋণের সুদও কমে যাবে বলে জানান এই অর্থনীতিবিদ।